ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। গর্ভবর্তী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করে সেরকমই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মীরসরাই উপজেলা সদরে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসরা। বদলে দিয়েছেন উপজেলার চিকিৎসা সেবার চিত্র। মীরসরাই উপজেলা সদরে অবস্থিত ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভবতী নারীদের নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অপ্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে নিরুৎসাহিত করছেন চিকিৎসকরা। অন্তসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে মহিলাদের।
আধুনিক এ যুগে জীবনমান উন্নত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে অনেকগুণ। একসময় প্রসবকালে ব্যথার অনাকাক্সিক্ষত ভয়, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মুনাফার লোভ এবং মা ও তার পরিবারের অসচেতনতার কারণেই সিজারিয়ান অপারেশনে আগ্রহ বাড়ে নারীদের। কমতে থাকে নরমাল ডেলিভারি। তবে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মীরসরাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি মাস জুলাই পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারি হয়েছে প্রায় ২০২ জনের।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা ২৮টি, ফেব্রুয়ারীতে ২৬টি, মার্চ ৩০টি, এপ্রিলে ২৭টি, মে ৩৬টি, জুনে ৩৮টি, চলতি জুলাই মাসে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৭টি। সব মিলিয়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মীরসরাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সাত মাসে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ২০২ জন প্রসূতি মা নিরাপদে সন্তান প্রসব করেছেন।
উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের রবিউল হোসাইনের স্ত্রী ফারজানা জানান, তাঁর ১ম বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি হওয়ায় খুব খুশি হয়েছেন। তিনি বলেন, সিজার করলে টাকাও বেশী খরচ হতো আমার ও বাচ্চার ২জনের কষ্ট হতো।
সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী গ্রামের কৃষক আরমান হোসেন স্ত্রী জেসমিন আকতার কিছুদিন আগে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মীরসরাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এই প্রসূতি। অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে জেসমিন আকতার জানান, অন্তসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু ১০ শয্যা বিশিষ্ট মীরসরাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে দায়িত্ব নিলে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি হই। এখানে নরমাল ডেলিভারিতে আমার সন্তান জন্মলাভ করেছে। আমি এবং ছেলে এখন সুস্থ্য আছি।
১০ শয্যা বিশিষ্ট মীরসরাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: নাসরীন সুলতান জানান, এটি চালু হওয়ার পর থেকে আমি ,আমার উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সুব্রত গোলদার, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা জবা নাথ তারা, সহকারী নার্র্র্সিং এটেনডেন্ট রুমা রানী কর্মকারকে নিয়ে ওয়ার্ক করছি এলাকায় এলাকায় গিয়ে কাউন্সিলিং করছি। দালাল চক্রের কিংবা দাইমাদের (ধাত্রী) বাধা উপেক্ষা করে এর সফলতা পেয়েছি। গত সাত মাসে ২০২টি নরমাল ডেলিভারি করতে সক্ষম হয়েছি। দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না।