চট্টগ্রাম 2:33 am, Wednesday, 2 July 2025

ছাগলনাইয়া’য় তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সহোদরের দোকান চুরি, এগিয়ে এলেন নয়ন চেয়ারম্যান

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের উত্তর মন্দিয়া গ্রামের তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সহোদর সাইফুল ইসলাম (৪১), শহীদুল ইসলাম(৩৮) ও মোমিনুল ইসলাম (৩৫)। ২০ বছর আগেই মারা যান তাদের বাবা মো. মোস্তফা। মা ছকিনা বেগম দুঃখ কষ্টে কোলে পিঠে করে বড় করেন তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানকে। বড় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি না করে শুরু করেন বাড়ির সামনে ছোট্ট একটি মুদি দোকানের ব্যবসা। যা তাদের জীবন যুদ্ধের একমাত্র অবলম্বন । তাঁরা এখন পথে বসার অবস্থা সহযোগিতায় এগিয়ে আসলেন মিরসরাই ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মিরসরাই নাগরিক কমিটির মহাসচিব এনায়েত হোসেন নয়ন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সেই অবলম্বন শেষ করে দিলো চোর চক্র। দোকানের টিন কেটে সব মালামাল নিয়ে গেছে চোরের দল। একমাত্র আয়ের অবলম্বন দোকানের সব পণ্য চুরি হওয়ায় তারা পাগল প্রায়। দোকানে প্রায় ৬০/৬৫ হাজার টাকার মালামাল থাকলেও চুরি হয়ে যায় প্রায় ৫০/৫৫ হাজার টাকার মালামাল।

তিন সহোদর জানান, জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও মানুষের কাছে হাত না পেতে চেষ্টা করেছি নিজের পায়ে দাঁড়াতে। সবার সহযোগিতায় আমরা একটি মুদি দোকান দিয়েছিলাম। এখন আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও মানুষের কাছে হাত না পেতে চেষ্টা করছি নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে। দোকান চুরির কারণে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

তিন সহোদরের মা ছকিনা বেগম জানান, সাইফুলের স্ত্রী রেজিয়া বেগম ও শহীদুল ইসলামের স্ত্রী ফারজানা বেগমকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার তাদের তিন ভাইকে চালাতে হয়। অনেক বছর আগে তার স্বামী মো. মোস্তফা মারা যান। তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুপুত্রকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু নিজ সন্তানদের কোনো অসম্মানজনক পেশায় দেওয়ার কথা চিন্তাও করেননি তিনি।

তিনি আরো জানান, ভাইদের দেওয়া অল্প অর্থ সাহায্যে ও নিজের তৈরি করা ডালা, কুলা, চাঁইসহ গৃহস্থালী জিনিস বিক্রি করে এক-আধপেটা করে নিজের সন্তানদের বড় করতে থাকেন তিনি। কিন্তু একপর্যায়ে সংসারের ছয় জন সদস্যের ভরণপোষণ তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। বড় ছেলে সাইফুলের বয়স যখন ১৩ বছর, মায়ের দেওয়া সামান্য পুঁজিতে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চকলেট, চুইংগাম, আচার বিস্কিট ইত্যাদি বিক্রি করা শুরু করেন। পরে অপর দুই প্রতিবন্ধী ভাইও তার এই ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেন। তিন ভাইয়ের সামান্য সঞ্চয় ও মায়ের ডালাকুলা বিক্রি করা কিছু আয় দিয়ে ও মানুষের সহযোগিতায় বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকান দিয়েছিলেন।

গত বছর ফেনী -২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী তাদের একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।
শহীদুল ইসলাম জানান, সরকারি বেসরকারি কোনো সংস্থা বা কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে যদি আমাদের বিনা সুদে কিছু টাকা ঋণ হিসেবে দেয় তাহলে আবার মালামাল কিনে স্বাবলম্বী হতে পারব।

শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সেলিম বলেন, চুরির ঘটনা শুনেছি। চোরদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে দোকানটি পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

মিরসরাই ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, এই অমানবিক কাজের জন্য চোরের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। তাদের তিন ভাইয়ের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা থাকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের সব সময় সহাযোগীতা করে থাকি। তাঁরা ঈদ কোরবান আসলেই শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসে। আমি তাদের জন্য আমার সহযোগীতার হাত সবসময় বাড়াবো।

ছাগলনাইয়া মডেল থানার ওসি সুদ্বীপ রায় বলেন, ঘটনায় কেউ অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ছাগলনাইয়া’য় তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সহোদরের দোকান চুরি, এগিয়ে এলেন নয়ন চেয়ারম্যান

Update Time : 07:45:42 pm, Tuesday, 3 October 2023

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের উত্তর মন্দিয়া গ্রামের তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সহোদর সাইফুল ইসলাম (৪১), শহীদুল ইসলাম(৩৮) ও মোমিনুল ইসলাম (৩৫)। ২০ বছর আগেই মারা যান তাদের বাবা মো. মোস্তফা। মা ছকিনা বেগম দুঃখ কষ্টে কোলে পিঠে করে বড় করেন তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানকে। বড় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি না করে শুরু করেন বাড়ির সামনে ছোট্ট একটি মুদি দোকানের ব্যবসা। যা তাদের জীবন যুদ্ধের একমাত্র অবলম্বন । তাঁরা এখন পথে বসার অবস্থা সহযোগিতায় এগিয়ে আসলেন মিরসরাই ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মিরসরাই নাগরিক কমিটির মহাসচিব এনায়েত হোসেন নয়ন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সেই অবলম্বন শেষ করে দিলো চোর চক্র। দোকানের টিন কেটে সব মালামাল নিয়ে গেছে চোরের দল। একমাত্র আয়ের অবলম্বন দোকানের সব পণ্য চুরি হওয়ায় তারা পাগল প্রায়। দোকানে প্রায় ৬০/৬৫ হাজার টাকার মালামাল থাকলেও চুরি হয়ে যায় প্রায় ৫০/৫৫ হাজার টাকার মালামাল।

তিন সহোদর জানান, জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও মানুষের কাছে হাত না পেতে চেষ্টা করেছি নিজের পায়ে দাঁড়াতে। সবার সহযোগিতায় আমরা একটি মুদি দোকান দিয়েছিলাম। এখন আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও মানুষের কাছে হাত না পেতে চেষ্টা করছি নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে। দোকান চুরির কারণে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

তিন সহোদরের মা ছকিনা বেগম জানান, সাইফুলের স্ত্রী রেজিয়া বেগম ও শহীদুল ইসলামের স্ত্রী ফারজানা বেগমকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার তাদের তিন ভাইকে চালাতে হয়। অনেক বছর আগে তার স্বামী মো. মোস্তফা মারা যান। তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুপুত্রকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু নিজ সন্তানদের কোনো অসম্মানজনক পেশায় দেওয়ার কথা চিন্তাও করেননি তিনি।

তিনি আরো জানান, ভাইদের দেওয়া অল্প অর্থ সাহায্যে ও নিজের তৈরি করা ডালা, কুলা, চাঁইসহ গৃহস্থালী জিনিস বিক্রি করে এক-আধপেটা করে নিজের সন্তানদের বড় করতে থাকেন তিনি। কিন্তু একপর্যায়ে সংসারের ছয় জন সদস্যের ভরণপোষণ তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। বড় ছেলে সাইফুলের বয়স যখন ১৩ বছর, মায়ের দেওয়া সামান্য পুঁজিতে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চকলেট, চুইংগাম, আচার বিস্কিট ইত্যাদি বিক্রি করা শুরু করেন। পরে অপর দুই প্রতিবন্ধী ভাইও তার এই ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেন। তিন ভাইয়ের সামান্য সঞ্চয় ও মায়ের ডালাকুলা বিক্রি করা কিছু আয় দিয়ে ও মানুষের সহযোগিতায় বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকান দিয়েছিলেন।

গত বছর ফেনী -২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী তাদের একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।
শহীদুল ইসলাম জানান, সরকারি বেসরকারি কোনো সংস্থা বা কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে যদি আমাদের বিনা সুদে কিছু টাকা ঋণ হিসেবে দেয় তাহলে আবার মালামাল কিনে স্বাবলম্বী হতে পারব।

শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সেলিম বলেন, চুরির ঘটনা শুনেছি। চোরদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে দোকানটি পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

মিরসরাই ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, এই অমানবিক কাজের জন্য চোরের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। তাদের তিন ভাইয়ের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা থাকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের সব সময় সহাযোগীতা করে থাকি। তাঁরা ঈদ কোরবান আসলেই শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসে। আমি তাদের জন্য আমার সহযোগীতার হাত সবসময় বাড়াবো।

ছাগলনাইয়া মডেল থানার ওসি সুদ্বীপ রায় বলেন, ঘটনায় কেউ অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।