চট্টগ্রাম 7:52 am, Tuesday, 3 December 2024

বাফুফেতে কাজী সালাউদ্দিনের যত অসঙ্গতি

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে দায়িত্ব নিয়ে টানা চার মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দেশের কিংবদন্তি এই ফুটবলারের কাছ থেকে প্রত্যাশার আলোক বর্তিকা ফেরানোর আশা ছিল। তবে ফুটবলাঙ্গণের দীর্ঘ এই যাত্রায় বারবার অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলেছেন তিনি, ভেঙ্গেছেন প্রতিশ্রুতিও।

বাফুফে ছাড়াও সালাউদ্দিন পরিচয়, একাধারে তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার প্রাপ্ত এবং সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) নির্বাচিত সভাপতি। দেশে তার জনপ্রিয়তাও ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু ফুটবলের মৃত্যুফাঁদে তার প্রায় শতভাগ জনপ্রিয়তা তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে।

দেশের আপামর জনতার কাছে বারবার চমক দেখানোতেই চেষ্টা ছিল সালাউদ্দিনের। কিন্তু দেশের ফুটবলের স্থায়ী কোনো কাঠামো দাঁড় করাতে পারেননি তিনি। নিজের মেয়াদকালে নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন, করেছেন বিতর্কিত মন্তব্য। চলুন জেনে নিই তার কিছু স্ট্যান্টবাজি সম্পর্কে-

২০২২ বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ: সেই ২০১৩ সালেই বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে খেলানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। ভিশন টোয়েন্টি টোয়েন্টি টু দূরের পথ তার সময়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। অবনমন হয়েছে ধারাবাহিকভাবে।

কোটি টাকার সুপার কাপ সুপার কাপের ছবি: নিজের প্রথম বছরই কোটি টাকার সুপার কাপ দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই শেষ। ঝলক ধরে রাখতে পারেননি। চলতি বছর চেষ্টা করেও দ্বিতীয় আসর আয়োজন করতে পারেননি।

অনিয়মিত বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ: বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ পুনরায় নিয়মিত করার ঘোষণা দিয়ে, কথা রাখতে পারেননি। নতুন বঙ্গমাতা গোল্ডকাপও এক আসরেই সীমাবদ্ধ।

জাতীয় দলের ব্যর্থতা সিশেলসের সাথে হার: তার সময়ে জাতীয় দল সবচেয়ে ব্যর্থ। সাত সাফের ছয়টিতে গ্রুপ থেকে বাদ পড়েছে। তারপরও ২০১৯ এ বলেছিলেন তার দৃষ্টিতে ৫০ বছরের সেরা জাতীয় দল এটিই। ২০১৬ তে থিম্পুতে এশিয়ান কাপ প্রাক-বাছাইয়ে ভুটানের কাছে হার বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লজ্জা। সেটিও টপকে গেছে কদিন আগে অপেশাদার সিশেলসের কাছে হারে।

কোচ পরিবর্তন: সালাউদ্দিনের সাড়ে ১৪ বছরে জাতীয় দলের কোচ পরিবর্তন হয়েছে ২৩ বার। কখনো দেশি, কখনো বিদেশি। কখনো স্থায়ী, কখনো অন্তর্বর্তী কোচের ওপর আস্থা রেখে, আবার আস্থা হারিয়েছেনও।

সালাউদ্দিনের মিথ্যাচার: ২০১৬ তে তৃতীয় মেয়াদে ফেডারেশন নির্বাচনের সময় আর সভাপতি পদে লড়াই না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ দফায় পুনরায় প্রার্থী হয়ে সভাপতি হন কাজী সালাউদ্দিন।

ফিফার অনুদান বন্ধ অস্বীকার: তার শেষ মেয়াদে আর্থিক অনিয়ম আর অসঙ্গতির কথা বারবার সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। অসংখ্য রিপোর্ট করেছে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। কিন্তু বারবারই যাকে ভুল আখ্যা দিয়েছেন সভাপতি।

বাফুফে কার্যালয়ে প্রবেশ নিষেধ: আর তেমনই এক রিপোর্টের পর ২০২১ সালে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সংবাদ কর্মীকে ফুটবল ভবনে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। সেখানেও সালাউদ্দিনের ইন্ধনের গুঞ্জন আছে।

অনিয়মে সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ নেয়া: শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অনাকাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি মিলেছে। আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। তবে তারপরও বোধোদয় হয়নি সালাউদ্দিনের। প্রথমে সোহাগের পক্ষ নিয়েছিলেন।

বিসিবি সভাপতিকে নিয়ে বক্তব্য: নারী দলকে অলিম্পিক বাছাই খেলতে না পাঠানোয় যখন দেশজুড়ে সমালোচনা তখন ক্রিকেট বোর্ড সভাপতিকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিয়ে নিজেকে আরও নিচে নামান ফুটবল সভাপতি।

সাংবাদিকদের নিয়ে বক্তব্য: সবশেষ গত মঙ্গলবার নির্বাহী সভা শেষে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সাংবাদিকদের তাচ্ছিল্য করেছেন। নিন্দার ঝড় উঠেছে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। ক্ষমা চাইলেও মুক্তি কি মিলবে দীর্ঘদিনের জমা হওয়া অসঙ্গতির পাহাড় থেকে?

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কাপ্তাই জামায়াতে ইসলামীর আমীর পুনঃনির্বাচিত হলেন শিক্ষাবিদ হারুনুর রশীদ

বাফুফেতে কাজী সালাউদ্দিনের যত অসঙ্গতি

Update Time : 05:07:43 pm, Thursday, 4 May 2023

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে দায়িত্ব নিয়ে টানা চার মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দেশের কিংবদন্তি এই ফুটবলারের কাছ থেকে প্রত্যাশার আলোক বর্তিকা ফেরানোর আশা ছিল। তবে ফুটবলাঙ্গণের দীর্ঘ এই যাত্রায় বারবার অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলেছেন তিনি, ভেঙ্গেছেন প্রতিশ্রুতিও।

বাফুফে ছাড়াও সালাউদ্দিন পরিচয়, একাধারে তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার প্রাপ্ত এবং সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) নির্বাচিত সভাপতি। দেশে তার জনপ্রিয়তাও ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু ফুটবলের মৃত্যুফাঁদে তার প্রায় শতভাগ জনপ্রিয়তা তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে।

দেশের আপামর জনতার কাছে বারবার চমক দেখানোতেই চেষ্টা ছিল সালাউদ্দিনের। কিন্তু দেশের ফুটবলের স্থায়ী কোনো কাঠামো দাঁড় করাতে পারেননি তিনি। নিজের মেয়াদকালে নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন, করেছেন বিতর্কিত মন্তব্য। চলুন জেনে নিই তার কিছু স্ট্যান্টবাজি সম্পর্কে-

২০২২ বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ: সেই ২০১৩ সালেই বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে খেলানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। ভিশন টোয়েন্টি টোয়েন্টি টু দূরের পথ তার সময়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। অবনমন হয়েছে ধারাবাহিকভাবে।

কোটি টাকার সুপার কাপ সুপার কাপের ছবি: নিজের প্রথম বছরই কোটি টাকার সুপার কাপ দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই শেষ। ঝলক ধরে রাখতে পারেননি। চলতি বছর চেষ্টা করেও দ্বিতীয় আসর আয়োজন করতে পারেননি।

অনিয়মিত বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ: বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ পুনরায় নিয়মিত করার ঘোষণা দিয়ে, কথা রাখতে পারেননি। নতুন বঙ্গমাতা গোল্ডকাপও এক আসরেই সীমাবদ্ধ।

জাতীয় দলের ব্যর্থতা সিশেলসের সাথে হার: তার সময়ে জাতীয় দল সবচেয়ে ব্যর্থ। সাত সাফের ছয়টিতে গ্রুপ থেকে বাদ পড়েছে। তারপরও ২০১৯ এ বলেছিলেন তার দৃষ্টিতে ৫০ বছরের সেরা জাতীয় দল এটিই। ২০১৬ তে থিম্পুতে এশিয়ান কাপ প্রাক-বাছাইয়ে ভুটানের কাছে হার বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লজ্জা। সেটিও টপকে গেছে কদিন আগে অপেশাদার সিশেলসের কাছে হারে।

কোচ পরিবর্তন: সালাউদ্দিনের সাড়ে ১৪ বছরে জাতীয় দলের কোচ পরিবর্তন হয়েছে ২৩ বার। কখনো দেশি, কখনো বিদেশি। কখনো স্থায়ী, কখনো অন্তর্বর্তী কোচের ওপর আস্থা রেখে, আবার আস্থা হারিয়েছেনও।

সালাউদ্দিনের মিথ্যাচার: ২০১৬ তে তৃতীয় মেয়াদে ফেডারেশন নির্বাচনের সময় আর সভাপতি পদে লড়াই না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ দফায় পুনরায় প্রার্থী হয়ে সভাপতি হন কাজী সালাউদ্দিন।

ফিফার অনুদান বন্ধ অস্বীকার: তার শেষ মেয়াদে আর্থিক অনিয়ম আর অসঙ্গতির কথা বারবার সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। অসংখ্য রিপোর্ট করেছে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। কিন্তু বারবারই যাকে ভুল আখ্যা দিয়েছেন সভাপতি।

বাফুফে কার্যালয়ে প্রবেশ নিষেধ: আর তেমনই এক রিপোর্টের পর ২০২১ সালে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সংবাদ কর্মীকে ফুটবল ভবনে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। সেখানেও সালাউদ্দিনের ইন্ধনের গুঞ্জন আছে।

অনিয়মে সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ নেয়া: শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অনাকাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি মিলেছে। আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। তবে তারপরও বোধোদয় হয়নি সালাউদ্দিনের। প্রথমে সোহাগের পক্ষ নিয়েছিলেন।

বিসিবি সভাপতিকে নিয়ে বক্তব্য: নারী দলকে অলিম্পিক বাছাই খেলতে না পাঠানোয় যখন দেশজুড়ে সমালোচনা তখন ক্রিকেট বোর্ড সভাপতিকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিয়ে নিজেকে আরও নিচে নামান ফুটবল সভাপতি।

সাংবাদিকদের নিয়ে বক্তব্য: সবশেষ গত মঙ্গলবার নির্বাহী সভা শেষে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সাংবাদিকদের তাচ্ছিল্য করেছেন। নিন্দার ঝড় উঠেছে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। ক্ষমা চাইলেও মুক্তি কি মিলবে দীর্ঘদিনের জমা হওয়া অসঙ্গতির পাহাড় থেকে?