চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রবাসফেরত স্বামীকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি নারগিস মোস্তারি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এসময় নারগিস মোস্তারির (৪০) সঙ্গে বাড়ির কাজের লোক আইয়ুব নবী(২২)জড়িত থাকার কথা জানান।
নারগিস মোস্তারি উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের মধ্য সাহেরখালী গ্রামের আলা মিয়া চৌধুরী বাড়ির আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে এবং নিহত এমদাদুল হকের স্ত্রী। আর আইয়ুব নবী একই বাড়ির নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সে পেশায় দিন মজুর।
দীর্ঘ প্রবাস জীবনে টাকা খরচে কৃচ্ছসাধন করতেন সে থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী এমদাদুল হকের উপর অতিষ্ঠ হয়ে বাবার বাড়ির কাজের লোক আইয়ুব নবীকে নিয়ে প্ল্যান করে স্ত্রী নারগিস মোস্তারি। আইয়ুব নবী প্রথমে রাজি না হলেও পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাজি হয়। ঘটনার তিন আগে অর্থাৎ ১৮ মার্চ বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যান। যাওয়ার সময় সাহের খালী ভোরের বাজার ফার্মেসি থেকে কয়েকটি ঘুমের ওষুধ কিনেন। পরিকল্পনা মতো ২১ মার্চ (মঙ্গলবার) সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। সেই সেমাই খেয়ে এমদাদুল হক (স্বামী) অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর বাবার বাড়ির কাজের লোক আইয়ুব নবীকে ফোন করলে সে সন্ধ্যার দিকে নারগিসের স্বামীর বাড়িতে আসেন। রাতে এমদাদুলের জ্ঞান ফিরে এলে চিকিৎসা করাতে ডাক্তার আসার কথা জানায়। এরপর স্ত্রী নারগিস তার স্বামী এমদাদুলের একহাত চেপে ধরে এবং আইয়ুব নবী আরেক হাতে জিআই তার পেঁচিয়ে মাল্টিফ্লাগ থেকে সংযোগ দেয় এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর মাল্টিফ্লাগ পাশের পুকুরে ফেলে দেয় তারা।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমদাদের স্ত্রী নারগিস জানান, ২০০৪ সালে এমদাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী প্রবাসে থাকতেন। প্রবাসে থাকাকালীন ঠিকমতো টাকা দিতে না। এর মধ্যে তাদের দুটি সন্তানের জন্ম হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বামী একেবারে দেশে চলে আসেন। দেশে আসার পরও ঠিকভাবে টাকা দিতো না। এনিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার প্রায় সময় ঝগড়া হতো। তাই স্বামীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে বাবার বাড়ির কাজের লোকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
গত বুধবার (২২ মার্চ) মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকায় নিজ ঘর থেকে এমদাদুল হকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় জিজ্ঞাসাদের জন্য এমদাদুল হকের স্ত্রী নারগিস মোস্তারিকে আটক করা হয়। একইদিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাড়ির কাজের লোক আইয়ুব নবীকেও আটক করে পুলিশ।
একইদিন রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত এমদাদের ছোট ভাই কামাল পাশা বাদি হয়ে নারসিগ মোস্তারি ও আইয়ুব নবীকে আসামি করে মিরসরাই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী কামাল পাশা বলেন, ‘তারা দুইজন মিলে আমার ভাইয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। আদালতে তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে। আমি আমার ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে অন্য কোন স্বামীকে নিজের স্ত্রীর হাতে খুন হতে না হয়।’
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, ‘এমদাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী নারগিস ও ভাড়াটে খুনি আইয়ুব নবীকে আসামি করে তার ছোট ভাই কামাল পাশা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজারহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে আদালতে পাঠানো হয়। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।’ এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিআই তার, মাল্টিপ্লাগ ও ৫শ’ টাকার একটি নোট উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান।