চট্টগ্রাম 7:02 pm, Wednesday, 4 December 2024

মীরসরাইয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিতকরী’র অনন্য উদ্যোগ ‘ডাক্তার যাবে দাদুর বাড়ি’

মায়ানী গ্রামের আফিয়া খাতুন। ৭৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বহু কষ্ট করে গত সপ্তাহে খুজে নিলেন উপজেলার আবুতোরাবস্থ সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিতকরীর প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম রয়েলকে। তাকে জড়িয়ে ধরে জানালেন নিজের অসুবিধার কথা। বললেন ‘ছেলেরা কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। একজন আরেকজনের কাছে চলে যেতে বলেন। আজকে ৮ মাস প্রেসার বাত ব্যথায় নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি, হাঁটার শক্তিও নেই যে সরকারি ডাক্তারখানায় যাব, চিকিৎসা নেব, কেউ টাকা দেয় না যে ওষুধ কিনে খাবো!’

তার শারিরীক অবস্থা দেখে হিতকরীর প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল ইসলাম রয়েল সিদ্ধান্ত নেন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়ে যাবেন তাঁর বাড়িতে। পরামর্শ নিলেন ওই সংগঠনের সিনিয়র সদস্য ডা. নূর তমিজ ভূঁইয়া রিয়াদের। তাঁর শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও রাজি হলেন সেবা দিতে। তারা এই ক্যাম্পেইনের নাম দিলেন ‘ডাক্তার যাবে দাদুর বাড়ি’।

এবার তাঁরা চান আরেকটু বড় পরিসরে। প্রস্তুতি নিলেন ১০ জন দুঃস্থ রোগীর চিকিৎসাপত্র, চেকাপ ও ওষুধ প্রদান করার। এর মাঝে বাঁচাই করতে গিয়ে দুইটি ইউনিয়নে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ জন। মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নে এতগুলো রোগীকে ভালো করে ফলোআপ করা একজন ডাক্তারের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় হিতকরীর স্থায়ী কমিটির সমন্বয়ক আলতাফ হোসেন জানালেন ডা. জয়নাল আবেদিনের কথা। বিষয়টা জানালে তিনি সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।

তাঁরা দুইটি টিমে ভাগ হয়ে দুই ইউনিয়নে দিনব্যাপী রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন। ডা. জয়নাল আবেদিন মঘাদিয়া ইউনিয়নে ১০ জন চলাচলে অক্ষম বৃদ্ধ বৃদ্ধার স্বাস্থ্যসেবা, কাউন্সেলিং ও ওষুধ লিখে দেন। এবং মায়ানি ইউনিয়নে ডা. নূর তমিজ ভূঁইয়া রিয়াদ ১৪ জন ও সাহেরখালী ইউনিয়নের ১ জনসহ মোট ১৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার স্বাস্থ্যসেবা, কাউন্সেলিং ও ওষুধ লিখে দেন— কথাগুলো বললেন হিতকরী-র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী কমিটির পরিচালক শহিদুল ইসলাম রয়েল।

জানতে চাইলে হিতকরীর সভাপতি জহির উদ্দিন রনি বলেন, ‘আমরা চাই দানবীরদের প্রতিটি টাকা মানুষের কাজে লাগুক। যেসব পদক্ষেপ নিলে আর্ত পীড়িত মানুষ দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হয়, আয়োজনে তা সীমিত হলেও হিতকরী নীতিগতভাবে সেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। রোগিদের প্রাথমিকভাবে এক মাসের ঔষধ দেয়া হয়। ইনশাআল্লাহ স্লিপের বাকি ঔষধগুলোও পরিপূর্ণভাবে প্রদান করা হবে।’ আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মায়ানী মঘাদিয়া ইউনিয়নের আমাদের দুই গর্ব ডা. জয়নাল আবেদিন ও ডা. নুর তমিজ ভূঁইয়া রিয়াদকে।

হিতকরীর নির্বাহী পরিচালক নুরুচ্ছালাম ভূঁইয়া ফোরকান বলেন, স্বয়ং ডাক্তার নিজেই রোগীর বাড়ি গিয়ে সেবা দেবে- এটি অনেক রোগীর জন্য সারপ্রাইজ ছিল। একজন বৃদ্ধা মাকে আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের পানি ফেলতে দেখে আমরাও আবেগাপ্লুত হয়েছি। অনেক রোগী হাত তুলে দোয়া করেছেন ডাক্তারের জন্য, সংগঠকদের জন্য, যারা নাম গোপনে অর্থায়ন করেছেন তাঁদের জন্য। এই আয়োজনে সম্পৃক্ত সবাইকে আল্লাহ যেন এর সর্বোত্তম বিনিময় দেন সেই দোয়া করি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

মীরসরাইয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিতকরী’র অনন্য উদ্যোগ ‘ডাক্তার যাবে দাদুর বাড়ি’

Update Time : 09:13:41 pm, Monday, 24 June 2024

মায়ানী গ্রামের আফিয়া খাতুন। ৭৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বহু কষ্ট করে গত সপ্তাহে খুজে নিলেন উপজেলার আবুতোরাবস্থ সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিতকরীর প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম রয়েলকে। তাকে জড়িয়ে ধরে জানালেন নিজের অসুবিধার কথা। বললেন ‘ছেলেরা কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। একজন আরেকজনের কাছে চলে যেতে বলেন। আজকে ৮ মাস প্রেসার বাত ব্যথায় নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি, হাঁটার শক্তিও নেই যে সরকারি ডাক্তারখানায় যাব, চিকিৎসা নেব, কেউ টাকা দেয় না যে ওষুধ কিনে খাবো!’

তার শারিরীক অবস্থা দেখে হিতকরীর প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল ইসলাম রয়েল সিদ্ধান্ত নেন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়ে যাবেন তাঁর বাড়িতে। পরামর্শ নিলেন ওই সংগঠনের সিনিয়র সদস্য ডা. নূর তমিজ ভূঁইয়া রিয়াদের। তাঁর শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও রাজি হলেন সেবা দিতে। তারা এই ক্যাম্পেইনের নাম দিলেন ‘ডাক্তার যাবে দাদুর বাড়ি’।

এবার তাঁরা চান আরেকটু বড় পরিসরে। প্রস্তুতি নিলেন ১০ জন দুঃস্থ রোগীর চিকিৎসাপত্র, চেকাপ ও ওষুধ প্রদান করার। এর মাঝে বাঁচাই করতে গিয়ে দুইটি ইউনিয়নে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ জন। মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নে এতগুলো রোগীকে ভালো করে ফলোআপ করা একজন ডাক্তারের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় হিতকরীর স্থায়ী কমিটির সমন্বয়ক আলতাফ হোসেন জানালেন ডা. জয়নাল আবেদিনের কথা। বিষয়টা জানালে তিনি সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।

তাঁরা দুইটি টিমে ভাগ হয়ে দুই ইউনিয়নে দিনব্যাপী রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন। ডা. জয়নাল আবেদিন মঘাদিয়া ইউনিয়নে ১০ জন চলাচলে অক্ষম বৃদ্ধ বৃদ্ধার স্বাস্থ্যসেবা, কাউন্সেলিং ও ওষুধ লিখে দেন। এবং মায়ানি ইউনিয়নে ডা. নূর তমিজ ভূঁইয়া রিয়াদ ১৪ জন ও সাহেরখালী ইউনিয়নের ১ জনসহ মোট ১৫ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার স্বাস্থ্যসেবা, কাউন্সেলিং ও ওষুধ লিখে দেন— কথাগুলো বললেন হিতকরী-র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী কমিটির পরিচালক শহিদুল ইসলাম রয়েল।

জানতে চাইলে হিতকরীর সভাপতি জহির উদ্দিন রনি বলেন, ‘আমরা চাই দানবীরদের প্রতিটি টাকা মানুষের কাজে লাগুক। যেসব পদক্ষেপ নিলে আর্ত পীড়িত মানুষ দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হয়, আয়োজনে তা সীমিত হলেও হিতকরী নীতিগতভাবে সেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। রোগিদের প্রাথমিকভাবে এক মাসের ঔষধ দেয়া হয়। ইনশাআল্লাহ স্লিপের বাকি ঔষধগুলোও পরিপূর্ণভাবে প্রদান করা হবে।’ আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মায়ানী মঘাদিয়া ইউনিয়নের আমাদের দুই গর্ব ডা. জয়নাল আবেদিন ও ডা. নুর তমিজ ভূঁইয়া রিয়াদকে।

হিতকরীর নির্বাহী পরিচালক নুরুচ্ছালাম ভূঁইয়া ফোরকান বলেন, স্বয়ং ডাক্তার নিজেই রোগীর বাড়ি গিয়ে সেবা দেবে- এটি অনেক রোগীর জন্য সারপ্রাইজ ছিল। একজন বৃদ্ধা মাকে আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের পানি ফেলতে দেখে আমরাও আবেগাপ্লুত হয়েছি। অনেক রোগী হাত তুলে দোয়া করেছেন ডাক্তারের জন্য, সংগঠকদের জন্য, যারা নাম গোপনে অর্থায়ন করেছেন তাঁদের জন্য। এই আয়োজনে সম্পৃক্ত সবাইকে আল্লাহ যেন এর সর্বোত্তম বিনিময় দেন সেই দোয়া করি।