সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাব একাংশের সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে প্রহসন উল্লেখ করে কমিটি বাতিল চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে সংগঠনির সদস্যরা। গত ৬ নভেম্বর বুধবার সংগঠনের সাত সদস্য স্বাক্ষরিত এ অভিযোগপত্রে সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলামকেও অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয় বিগত ১৭ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের প্রহসণের নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বিতর্কিত কমিটি গঠিত হয়েছে। বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী গুটিকয়েক সাংবাদিকের পরিকল্পনায় প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্র ও তফসিল পরিপন্থী মনগড়া একটি নীল নকশার তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কমিটির সকল কর্মকাণ্ড স্থগিত এবং বিতর্কিত এ কমিটি বাতিলের জন্য তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করলে বৈষম্যের স্বীকার সাংবাদিকেরা উপকৃত হবে।
নির্বাচনের দিন সীতাকুণ্ড বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা সকাল ১০টায় এসে অভিযোগ করে এখানে ফ্যাসিবাদী অনেক সাংবাদিক নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে। তাই এই নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। তারা আরও দাবী করেন আওয়ামী সাংবাদিক ছাড়া অন্যদের নিয়ে আপনারা কমিটি করলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবেনা। কিন্তু এখন নির্বাচন বন্ধ করেন। তাদের দাবীর মুখে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন (প্রেস ক্লাবের সদস্য) উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে ঘোষণা করেন এখন থেকে নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করলাম। বুথের বাহিরে গেইটে তালা লাগিয়ে তিনি নিচে চলে যান। বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা নির্বাচন নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিচতলায় যায়। এবং নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বার্তা যুক্তিতর্ক করতে থাকে। এই ফাঁকে প্রিজাইডিং অফিসাররা বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের বোকা বানিয়ে কয়েকজন আওয়ামী সাংবাদিকদের পরামর্শে চুরি করে ভোট চালু করে দেয়। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা চেক করতে আসলে আবার দরজা তালা লাগিয়ে দেয়। এভাবে লুকোচুরি খেলে নির্বাচনের শেষ সময় দুপুর ১ টা পর্যন্ত অতিবাহিত হওয়ার পর একটি কুচক্রি মহল প্রায় ২/৩শত লোক ক্লাবে এনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের অনেকটা কোনঠাসা করে রাখে। এবং কিছু রাজনৈতিক নেতা ইউএনও মিলে গোপন বুথে আলমিরি থেকে আনা ভোটের বক্স থেকে অবৈধ ব্যালেট গননা শুরু করে। পূর্বে থেকে করা সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোন প্রার্থীকে না জানিয়ে চক্রটি ভোট গননা করে। তখন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় তখন কোন প্রার্থী এমন কি ক্লাবে সভাপতি সেক্রেটারীও থাকতে পারে নি। তার মানে ৩৫জন ভোটার থেকে মাত্র ৫/৬জন ভোটার উপস্থিত ছিল। এখানে স্পষ্ট করতে হয়ে চুরি করে ভোট নেওয়ার সময় আওয়ামী সাংবাদিকরা একাধিকবার গোপন কক্ষে প্রবেশ করে ব্যালেট কারচুপি করে। যার কারনে তারা সভাপতি সেক্রেটারী ১৯ ভোট করে পায়। এবং ১১টি পদে ৬টি পদে সরাসরি আওয়ামী প্রার্থী জয় হয়ে এবং তাদের সমর্থনে সভাপতি সেক্রেটারীরও বিজয়ী দেখায়। এভাবে নীল নকশা করে আওয়ামী স্টাইলে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের নির্বাচনকে কলঙ্কিত করে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে সিসি ক্যামরার ভিডিও ফুটেজ এর জন্য লিখিত আবেদন করলেও তারা দীর্ঘ দেড় মাসেও তা দেয়নি।
এখানেও শেষ হয়নি। তারা নির্বাচনের পর বিভিন্নভাবে জামায়াত বিএনপি সমর্থীত সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে এমনকি ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে হুমকী ধমকী দিতে থাকে। তারা নির্বাচনের পরে শপথ নেওয়ার দিনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের বাধার মুখে পড়বে মনে করে সীতাকুণ্ডে শপথ না নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে একটি রেষ্টুরেন্টে শপথ নিতে হয়েছে। নির্বাচনের পর তাদের আচরণে সাংবাদিক সমাজ ক্ষুব্ধ। তাদের স্বৈরাচারী আচরণ এভাবে চলতে থাকলে গত ৫ আগস্ট ছাত্রদের পাওয়া নতুন স্বাধীনতার প্রকৃত সুখ থেকে সীতাকুণ্ড বাসী বঞ্চিত হবে।
প্রেস ক্লাবের সকল সদস্যের পক্ষে স্বাক্ষরকারী সাত সদস্য হলেন, জহিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম বিএসসি, জাহাঙ্গীর আলম, ইকবাল হোসেন, হাকিম মোল্লা, সাইফুল ইসলাম ও জাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সীতাকুণ্ড উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের উদ্যোগে সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাব গঠন করা হয়। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যে সংগঠনটির দূর্বল নেতৃত্বের কারনে ভাঙন দেখা দেয়। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে প্রেস ক্লাব। সে থেকে অদ্যবদি দ্বিধাবিভক্ত সংগঠনটি একই নামে ভিন্ন ভিন্ন কার্যালয়ে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।