চট্টগ্রাম 8:07 pm, Sunday, 24 August 2025

“আমি ইউএনও অ্যাসিল্যান্ডকে বাঁশ দিয়েছি, আপাতত দশ দেন এই নাম্বারে”- কথিক প্রেস ক্লাব সভাপতি অপুর কল রেকর্ড ভাইরাল

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কথিত প্রেস ক্লাব সভাপতি অনিরুদ্ধ অপু নামে এক ব্যক্তির মোবাইলে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই অডিও ক্লিপে তিনি নিজেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক দাবি করে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চান। অডিও’তে তিনি কোন মিডিয়ার প্রতিবেদক কিংবা সাংবাদিক সেটা পরিচয় দেননি। ৬ মিনিট ২৮ সেকেন্ড এর ওই অডিও’র কথোপকথনে তিনি আইনজীবি, ডিসি (জেলা প্রশাসক), ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার), অ্যাসিল্যান্ড (সহকারি কমিশনার)কে কটাক্ষ করে কথা বলেন। অডিও নিয়ে উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা—সমালোচনা চলছে।

তবে অডিও’তে কথোপকথনের অন্য ব্যক্তির নাম ও পরিচয় এখনো স্পষ্ট জানা যায়নি। সাংবাদিক নেতারা সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা ও চাঁদাবাজির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

চট্টগ্রামের ভাষায় বলা অডিওতে শোনা যায়,“ নমষ্কার , নমষ্কার , আলাউদ্দিন্যের হাছে ফোন গরিয়েরে ফোনে ন পাইর”(নমষ্কার, নমষ্কার, আলাউদ্দিনকে ফোন করেও পাচ্ছিনা)। ব্যস্ত আছে হর,হালিয়ে তোঁয়ার অম্বন্ধি, আলা, দেছছোস, উকিল—মুকিল আঁর হাছে নত শিয়ের অইয়ি আঁর পয়ত পরিবের মতো অইয়ি (ফোন ব্যস্ত আছে দেখাচ্ছে, তোমার শ্যালক, আত্নীয়, উকিল আমার কাছে নত স্বীকার হয়ে, আমার পায়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে)। আঁই হইরহম সাংবাদিক ন চিনো, আঁই অনুসন্ধানী প্রতিবেদক অপু (আমি কি রকম সাংবাদিক চিনেনি, আমি অনুসন্ধানী সাংবাদিক অপু)। লোকমানে হদদে যিয়ান লেইখ্যি ফেসবুকুত ইয়েন ডিলেট গইত্যাম (লোকমানে বলেছে যেটি লিখেছি, ডিলেট করে দেয়ার জন্য)। বিএনপি’র লোকমানে হর উকিলেও হর ,ইতে হত্তো বরো উকিল আঁই চাই (বিএনপি’র লোকমানে বলেছিল, উকিলেও বলেছিল, সে কতো বড় উকিল আমি দেখি)। হালিয়ের ইয়েন বাদ দিয়ো, আপাতত দশ্শো দ (গতকালেরটা বাদ দেন, আপাতত দশ দেন)। আঁরে উকিল বহুত হমতা দেহাইয়ে। আঁরে কি ডর লাগাওদ্যো (আমাকে উকিলে অনেক ক্ষমতা দেখিয়েছে, আমাকে কি ভয় দেখাও)। আঁই টিএনও’, অ্যাসিল্যান্ড এর বিরুদ্ধে বাঁশ দি (আমি ইউএনও, অ্যাসিল্যান্ডকে বাঁশ দিয়েছি)। ডিসি, টিএনও মাহমুদুল হাসান , অ্যাসিল্যান্ড ডর লাগাইয়ি, হাম ন ময় (ডিসি, ইউএনও মাহমুদুল হাসান, অ্যাসিল্যান্ড ভয় দেখিয়েও কাজ হয়নি)। নাম্বার ইবেত ১০ হাজার দি দ (নাম্বার এটাতে ১০ হাজার দিয়ে দাও)। এহন ফোন দ (এখন ফোন দাও)। আপাতত ১০ হাজার টাকা দ (আপাতত ১০ হাজার টাকা দাও)। পুজা পরিষদ নেতা অরুপ চৌধুরী আঁর বাইনে(পুজা পরিষদ নেতা অরুপ চৌধুরী আমার ভাগ্নে )। এই লাইনে চলিবে(এই লাইনে চলবে)।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনিরুদ্ধ অপুর উপজেলার চন্দ্রঘোনা—কদমতলি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড, কদমতলি তুলসিপাড়া গ্রামের মৃত বংশী মোহন দে’র পুত্র। তিনি কখনো সাংবাদিক অভিজিৎ কুমার দে, কখনো অপু দে, আবার কখনো অনিরুদ্ধ নামে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার নামে রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মামলা ও লিখিত অভিযোগ রয়েছে। নানা অপরাধে তিনি একাধিকবার জেলও খেটেছেন। সম্প্রতি রাঙ্গুনিয়ার একজন দলিল লেখকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে ফেসুবকে নিউজ করা প্রকাশ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে পোষ্ট, পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলর এর কাছে চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পেয়ে ফেসবুকে অপপ্রচার, কথিত প্রেস ক্লাবের অভিষেক অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিলের নামে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, তিনি কিছুদিন মুদি দোকান করেছিলেন পরে বাবুর্চি পেশায় যোগ দেন। পাশাপশি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে তিনি রাতারাতি প্রেস ক্লাব সভাপতি বনে যান। তার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেটের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও ইটভাটায় হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা।
কথা বলতে অনিরুদ্ধ অপুর মোবাইলে এই প্রতিবেদক একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন ধরেন নি।

এই বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মো.নুরুল আবছার চৌধুরী জানান,“ রাঙ্গুনিয়ায় ইদানিং আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা ও প্রেস ক্লাবের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছে একটি গ্রুপ। ফেসবুকে নিউজ করার হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। এসব ঘটনায় প্রকৃত সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন।”

রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি মো. ইলিয়াছ তালুকদার জানান, “ ফেসবুক নিউজ আর ভুইফোঁড় অনলাইনের দৌরাত্নে্য বেড়ে চলেছে। তারা বিভিন্ন মানুষকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। এই নিয়ে প্রকৃত সাংবাদিকরা বিব্রত। প্রেস ক্লাব কিংবা সাংবাদিক পরিচয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে প্রেস ক্লাব থেকে অপকর্ম ও অপসাংবাদিকতা রুখতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মীরসরাইয়ে “ওয়েভ সোসাইটি ফর রুরাল পিপল” এর উদ্যোগে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ

“আমি ইউএনও অ্যাসিল্যান্ডকে বাঁশ দিয়েছি, আপাতত দশ দেন এই নাম্বারে”- কথিক প্রেস ক্লাব সভাপতি অপুর কল রেকর্ড ভাইরাল

Update Time : 08:55:49 pm, Friday, 2 May 2025

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কথিত প্রেস ক্লাব সভাপতি অনিরুদ্ধ অপু নামে এক ব্যক্তির মোবাইলে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই অডিও ক্লিপে তিনি নিজেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক দাবি করে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চান। অডিও’তে তিনি কোন মিডিয়ার প্রতিবেদক কিংবা সাংবাদিক সেটা পরিচয় দেননি। ৬ মিনিট ২৮ সেকেন্ড এর ওই অডিও’র কথোপকথনে তিনি আইনজীবি, ডিসি (জেলা প্রশাসক), ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার), অ্যাসিল্যান্ড (সহকারি কমিশনার)কে কটাক্ষ করে কথা বলেন। অডিও নিয়ে উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা—সমালোচনা চলছে।

তবে অডিও’তে কথোপকথনের অন্য ব্যক্তির নাম ও পরিচয় এখনো স্পষ্ট জানা যায়নি। সাংবাদিক নেতারা সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা ও চাঁদাবাজির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

চট্টগ্রামের ভাষায় বলা অডিওতে শোনা যায়,“ নমষ্কার , নমষ্কার , আলাউদ্দিন্যের হাছে ফোন গরিয়েরে ফোনে ন পাইর”(নমষ্কার, নমষ্কার, আলাউদ্দিনকে ফোন করেও পাচ্ছিনা)। ব্যস্ত আছে হর,হালিয়ে তোঁয়ার অম্বন্ধি, আলা, দেছছোস, উকিল—মুকিল আঁর হাছে নত শিয়ের অইয়ি আঁর পয়ত পরিবের মতো অইয়ি (ফোন ব্যস্ত আছে দেখাচ্ছে, তোমার শ্যালক, আত্নীয়, উকিল আমার কাছে নত স্বীকার হয়ে, আমার পায়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে)। আঁই হইরহম সাংবাদিক ন চিনো, আঁই অনুসন্ধানী প্রতিবেদক অপু (আমি কি রকম সাংবাদিক চিনেনি, আমি অনুসন্ধানী সাংবাদিক অপু)। লোকমানে হদদে যিয়ান লেইখ্যি ফেসবুকুত ইয়েন ডিলেট গইত্যাম (লোকমানে বলেছে যেটি লিখেছি, ডিলেট করে দেয়ার জন্য)। বিএনপি’র লোকমানে হর উকিলেও হর ,ইতে হত্তো বরো উকিল আঁই চাই (বিএনপি’র লোকমানে বলেছিল, উকিলেও বলেছিল, সে কতো বড় উকিল আমি দেখি)। হালিয়ের ইয়েন বাদ দিয়ো, আপাতত দশ্শো দ (গতকালেরটা বাদ দেন, আপাতত দশ দেন)। আঁরে উকিল বহুত হমতা দেহাইয়ে। আঁরে কি ডর লাগাওদ্যো (আমাকে উকিলে অনেক ক্ষমতা দেখিয়েছে, আমাকে কি ভয় দেখাও)। আঁই টিএনও’, অ্যাসিল্যান্ড এর বিরুদ্ধে বাঁশ দি (আমি ইউএনও, অ্যাসিল্যান্ডকে বাঁশ দিয়েছি)। ডিসি, টিএনও মাহমুদুল হাসান , অ্যাসিল্যান্ড ডর লাগাইয়ি, হাম ন ময় (ডিসি, ইউএনও মাহমুদুল হাসান, অ্যাসিল্যান্ড ভয় দেখিয়েও কাজ হয়নি)। নাম্বার ইবেত ১০ হাজার দি দ (নাম্বার এটাতে ১০ হাজার দিয়ে দাও)। এহন ফোন দ (এখন ফোন দাও)। আপাতত ১০ হাজার টাকা দ (আপাতত ১০ হাজার টাকা দাও)। পুজা পরিষদ নেতা অরুপ চৌধুরী আঁর বাইনে(পুজা পরিষদ নেতা অরুপ চৌধুরী আমার ভাগ্নে )। এই লাইনে চলিবে(এই লাইনে চলবে)।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনিরুদ্ধ অপুর উপজেলার চন্দ্রঘোনা—কদমতলি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড, কদমতলি তুলসিপাড়া গ্রামের মৃত বংশী মোহন দে’র পুত্র। তিনি কখনো সাংবাদিক অভিজিৎ কুমার দে, কখনো অপু দে, আবার কখনো অনিরুদ্ধ নামে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার নামে রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মামলা ও লিখিত অভিযোগ রয়েছে। নানা অপরাধে তিনি একাধিকবার জেলও খেটেছেন। সম্প্রতি রাঙ্গুনিয়ার একজন দলিল লেখকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে ফেসুবকে নিউজ করা প্রকাশ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে পোষ্ট, পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলর এর কাছে চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পেয়ে ফেসবুকে অপপ্রচার, কথিত প্রেস ক্লাবের অভিষেক অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিলের নামে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, তিনি কিছুদিন মুদি দোকান করেছিলেন পরে বাবুর্চি পেশায় যোগ দেন। পাশাপশি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে তিনি রাতারাতি প্রেস ক্লাব সভাপতি বনে যান। তার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেটের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও ইটভাটায় হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা।
কথা বলতে অনিরুদ্ধ অপুর মোবাইলে এই প্রতিবেদক একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন ধরেন নি।

এই বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মো.নুরুল আবছার চৌধুরী জানান,“ রাঙ্গুনিয়ায় ইদানিং আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা ও প্রেস ক্লাবের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছে একটি গ্রুপ। ফেসবুকে নিউজ করার হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। এসব ঘটনায় প্রকৃত সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন।”

রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি মো. ইলিয়াছ তালুকদার জানান, “ ফেসবুক নিউজ আর ভুইফোঁড় অনলাইনের দৌরাত্নে্য বেড়ে চলেছে। তারা বিভিন্ন মানুষকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। এই নিয়ে প্রকৃত সাংবাদিকরা বিব্রত। প্রেস ক্লাব কিংবা সাংবাদিক পরিচয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে প্রেস ক্লাব থেকে অপকর্ম ও অপসাংবাদিকতা রুখতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”