চট্টগ্রাম 6:29 pm, Friday, 22 August 2025

ইপসার উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

ইপসা বাস্তবায়িত “মাল্টি হ্যাজার্ড অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ” প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর পিটস্টপ রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হলো “রিফ্রেশার ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ট্রেনিং ফর ভলান্টিয়ার গ্রুপ” শীর্ষক দু’দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। জার্মান ফেডারেল ফরেন অফিস (GFFO)-এর আর্থিক সহায়তায়, সেভ দ্য চিলড্রেন-এর সহযোগিতায় এবং রাইমস-এর কারিগরি সহায়তায় ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন- ইপসা এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উদ্বোধন করেন কাট্টলী সার্কেল, চট্টগ্রাম ‘র সহকারী কমিশনার (ভূমি) হোছাইন মোহাম্মদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ‘ র উপ সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮, ৯ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইপসার প্রকল্প ব্যবস্থাপক সানজিদা আক্তার এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মুহাম্মদ আতাউল হাকিম।

প্রশিক্ষণের বিভিন্ন সেশনে স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য ও উপস্থাপনা প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষকরা। আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল স্থানীয় পর্যায়ের ট্রিগার ও থ্রেশহোল্ডের ভিত্তিতে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের জন্য আবহাওয়াভিত্তিক পূর্বাভাস ব্যাখ্যা করেন। নিরাপদ উদ্ধার ও সুরক্ষা বিষয়ক উপস্থাপনায় উপ সহকারী পরিচালক  মো. আব্দুল্লাহ(বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম) পাহাড়ধসের সময় তাৎক্ষণিক করণীয় ও উদ্ধার কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ ধারণা দেন। ভূমিধস-সংক্রান্ত অ্যান্টিসিপেটরি ব্যবস্থাপনা ও পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ইপসার মনিটরিং অফিসার শাহরিয়ার আলম। পাশাপাশি ইন্টার্ন শাহরিয়ার আকাশ এবং সাবিকুন নাহার প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন কী, কীভাবে তা কার্যকর হয় এবং কিভাবে গ্রুপ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্যোগ-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে করণীয় কার্যক্রম সম্পর্কে  সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদেরকে ভূমিধসের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা হয়। আলোচনায় উঠে আসে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ঘটে এবং এই অতিবৃষ্টিই পাহাড়ধসের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। একই সঙ্গে দুর্যোগের বিভিন্ন মাত্রা ও সংকেত সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের যথাযথ জ্ঞান প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময় স্বেচ্ছাসেবকদের সরাসরি মাঠ পর্যায়ের অনুশীলনের মাধ্যমে শেখানো হয় কীভাবে বাস্তব পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে দ্রুত ও নিরাপদে উদ্ধার করা যায়। একইসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের আচরণবিধি, দায়িত্ব ও প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচকরা অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদের জ্ঞান ও সক্ষমতা আরও সুদৃঢ় করেন।কর্মশালাকে আরও প্রাণবন্ত করতে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গান, কবিতা আবৃত্তি, খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন, যা প্রশিক্ষণ পরিবেশকে আরও ইতিবাচক করে তোলে।

প্রশিক্ষণের উদ্বোধনকালে হোছাইন মোহাম্মদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, এ ধরনের প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র দুর্যোগকালীন প্রস্তুতির একটি কার্যকর মাধ্যম নয়, বরং এটি জনসচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, জরুরি সেবার প্রাপ্তি ও দুর্যোগকালীন সময়ে সমন্বিত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জানতে পারেন, সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব, যা একটি বড় অর্জন। তিনি প্রশিক্ষণ আয়োজন  কে ধন্যবাদ জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, এই প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকরা ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগে সরকারের পাশে থেকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবেন। একই সঙ্গে তিনি সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে অব্যাহত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মীরসরাইয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর পক্ষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ইপসার উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

Update Time : 09:50:37 am, Friday, 20 June 2025

ইপসা বাস্তবায়িত “মাল্টি হ্যাজার্ড অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ” প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর পিটস্টপ রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হলো “রিফ্রেশার ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ট্রেনিং ফর ভলান্টিয়ার গ্রুপ” শীর্ষক দু’দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। জার্মান ফেডারেল ফরেন অফিস (GFFO)-এর আর্থিক সহায়তায়, সেভ দ্য চিলড্রেন-এর সহযোগিতায় এবং রাইমস-এর কারিগরি সহায়তায় ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন- ইপসা এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উদ্বোধন করেন কাট্টলী সার্কেল, চট্টগ্রাম ‘র সহকারী কমিশনার (ভূমি) হোছাইন মোহাম্মদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ‘ র উপ সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮, ৯ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইপসার প্রকল্প ব্যবস্থাপক সানজিদা আক্তার এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মুহাম্মদ আতাউল হাকিম।

প্রশিক্ষণের বিভিন্ন সেশনে স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য ও উপস্থাপনা প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষকরা। আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল স্থানীয় পর্যায়ের ট্রিগার ও থ্রেশহোল্ডের ভিত্তিতে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের জন্য আবহাওয়াভিত্তিক পূর্বাভাস ব্যাখ্যা করেন। নিরাপদ উদ্ধার ও সুরক্ষা বিষয়ক উপস্থাপনায় উপ সহকারী পরিচালক  মো. আব্দুল্লাহ(বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম) পাহাড়ধসের সময় তাৎক্ষণিক করণীয় ও উদ্ধার কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ ধারণা দেন। ভূমিধস-সংক্রান্ত অ্যান্টিসিপেটরি ব্যবস্থাপনা ও পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ইপসার মনিটরিং অফিসার শাহরিয়ার আলম। পাশাপাশি ইন্টার্ন শাহরিয়ার আকাশ এবং সাবিকুন নাহার প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন কী, কীভাবে তা কার্যকর হয় এবং কিভাবে গ্রুপ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্যোগ-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে করণীয় কার্যক্রম সম্পর্কে  সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদেরকে ভূমিধসের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা হয়। আলোচনায় উঠে আসে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ঘটে এবং এই অতিবৃষ্টিই পাহাড়ধসের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। একই সঙ্গে দুর্যোগের বিভিন্ন মাত্রা ও সংকেত সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের যথাযথ জ্ঞান প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময় স্বেচ্ছাসেবকদের সরাসরি মাঠ পর্যায়ের অনুশীলনের মাধ্যমে শেখানো হয় কীভাবে বাস্তব পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে দ্রুত ও নিরাপদে উদ্ধার করা যায়। একইসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের আচরণবিধি, দায়িত্ব ও প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচকরা অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদের জ্ঞান ও সক্ষমতা আরও সুদৃঢ় করেন।কর্মশালাকে আরও প্রাণবন্ত করতে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গান, কবিতা আবৃত্তি, খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন, যা প্রশিক্ষণ পরিবেশকে আরও ইতিবাচক করে তোলে।

প্রশিক্ষণের উদ্বোধনকালে হোছাইন মোহাম্মদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, এ ধরনের প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র দুর্যোগকালীন প্রস্তুতির একটি কার্যকর মাধ্যম নয়, বরং এটি জনসচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, জরুরি সেবার প্রাপ্তি ও দুর্যোগকালীন সময়ে সমন্বিত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জানতে পারেন, সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব, যা একটি বড় অর্জন। তিনি প্রশিক্ষণ আয়োজন  কে ধন্যবাদ জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, এই প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকরা ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগে সরকারের পাশে থেকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবেন। একই সঙ্গে তিনি সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে অব্যাহত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।