মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সীতাকুণ্ড।
আমরা গণিতের মাধ্যমে সত্য উপলব্দি করতে পারি। গণিত কেবল সত্যই প্রকাশ করে না। এর মধ্যে রয়েছে অনন্য সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ও গণিতের ভীতি দূর করতে আমরা অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে গণিত শিক্ষা দিয়ে থাকি। আমরা মনে করি, নিজের ভাই-বোনদের পড়ালে যেমন কেউ মূল্য নেয় না, ঠিক তেমনি আমিও সবাইকে গণিত পড়াই ভ্রাতৃত্বের টানে, টাকার জন্যে নয়। আমরা যখন গণিত শেখায় শিক্ষার্থীদের তখন তারা ভুল গুলো বারবার
আমরা যখন অংক করি এবং অংকটি যদি ভুল হয় তাহলে আমরা কেটে দিয়ে আবারও করতে চেষ্ঠা করি তারপরও যদি অংকটি সঠিক ভাবে করতে না পারি আবার শিক্ষক অথবা গণিত বুঝে এমন কারো কাছ থেকে অংকটি শুদ্ধ করে করি। এটা যদি বাস্তুব জীবনের সাথে মিল করি তা হলে কি পায় আমরা । আমরা বাস্তব জীবনে যদি ভুল করি তা কিন্তু আমরা অনেকেই নিজের ভুল স্বিকার করিনা । যদি আমরা স্বিকার করে আমাদের ভুলটি শুদ্ধ করে সামনের দিকে চলি তাহলে আমরা আমাদের জীবন কে সুন্দর করে সাজাতে পারি।এক কথায় আমরা যদি গণিতকে কাজে লাগায় তাহলে আমরা কখনো সত্যকে বাদ দিয়ে চলতে পারিনা ।
সকল বিদ্যার রাণী গণিত। মহান গণিতবিদ পল এরডোস বলতেন, ‘গণিত ছাড়া আর সবকিছুর মৃত্যু অনিবার্য।’ জন ব্যারো মন্তব্য করেছেন, ‘গণিত হলো চিন্তার সেই মহত্তম প্রকাশ যা ভৌতজগৎ সম্পর্কে গভীরতম চিত্র তুলে ধরে।’ গণিত এমন এক ভাষা যা জগৎ সম্পর্কে আমাদের ভাবায়, বিস্মিত করে, বোঝায় এবং চিন্তার চ্যালেঞ্জ নিতে অনুপ্রাণিত করে। বড় কথা, গণিত আমাদের যুক্তিসঙ্গত চিন্তার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গণিত কেন জগতের ভাষা বোঝে ? পদার্থবিদ ইউজিন উইগনার একটি অতি-বিখ্যাত প্রবন্ধ লিখেছিলেন যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য আনরিজনেবল এফেক্টিভনেস অব ম্যাথমেটিক্স’। এই শিরোনামটাও আমাদের ভাবায় গণিত কেন এতো কার্যকর/ কেন সত্যি, এর যুক্তি কী?
মনোরোগবিদরা বলছেন, গণিত ভীতি একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক সমস্যা। এ সমস্যায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি গণিতে যেভালো করতে পারেন, এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এছাড়া ভয়ের কারণগুলোকে ভেঙ্গে সমাধানের সূক্ষ্ম উপায় বের করার কথাও বলছেন মনোরোগবিদরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমে শিক্ষার্থীকে গণিতের প্রতি আগ্রহী করতে হবে। তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। গণিত মুখস্থ করার কোনো বিষয় নয়। তবে সূত্র মুখস্থ করা যেতে পারে। অবশ্যই গণিত বুঝতে হবে। বুঝে নিয়ে গণিত চর্চার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শুধুমাত্র পাঠ্যবই কেন্দ্রিক না করে ধাঁধা, কুইজ, সুডোকু, পুলসাইড পাজল, দাবা, বোর্ড গেম, রুবিকথস কিউব বা গণিতের নানান ধরনের অনলাইন খেলার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে শিক্ষার্থীদের। এসব খেলা মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তোলে। গণিত নিয়ে অনেক মজার মজার বই রয়েছে, অনলাইন প্রবন্ধ রয়েছে, সেগুলো পড়া যেতে পারে। বিভিন্ন ছবি, ইলাস্ট্রেশন, ভিডিও, এনিমেশনের মাধ্যমেও অংক শেখাটা অনেক সহজ হতে পারে বলেও মত তাদের।
গণিতে দক্ষ অনেক শিক্ষার্থীর মতে, বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিল রেখে যদি গণিত শেখানো হয়, এটি বেশি মনে থাকে। শুরুতে গণিতের জন্য সময় বেধে না দিয়ে নিজের মতো লম্বা সময় ধরে শিখতে উৎসাহিত করুন। প্রথমে সময় বেশি লাগলেও ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো হয়, অল্প কয়েকটা সহজ অংক দিয়ে শুরু করা। এতে আগ্রহ বাড়বে। অনেকে অংক করার আগেই উত্তরপত্র দেখে নেন। এটা অনেকটা নিজেকে ঠকানোর মতো কাজ। উত্তর না দেখে আগে যাচাই করুন। ভুল থেকেই শেখা হবে। নামতার হিসাব কীভাবে হলো, সূত্রগুলো কীভাবে এলো, এগুলো যাচাই করলে, মনে রাখা সহজ হবে। সবসময় ক্যালকুলেটর বা গুগল নির্ভর না হয়ে, ছোটখাটো হিসাব মাথায় সেরে নেয়ার চেষ্টা করুন। তবে অংকের ভীতি দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত অনুশীলন। প্রতিদিন অল্প হলেও অংক করার অভ্যাস করলে আস্তে আস্তে এতে পারদর্শী হওয়া সম্ভব।
গণিতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হলেন একজন ভালো শিক্ষক। এছাড়া যাদের গণিতে আগ্রহ রয়েছে, তারা অন্যদের ভীতি দূর করতে এগিয়ে আসতে পারেন। নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত আইনার স্কালভিক বলেছেন, গণিতের ভীতি কাটাতে সব শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মন খুলে কথা বলা বা প্রশ্ন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, গণিত ভীতিতে থাকা শিক্ষার্থীরা অন্যদের সামনে ছোট হওয়ার ভয়ে থাকেন এবং কোনো প্রশ্ন করে না। ভুল করাটা শেখার প্রক্রিয়ার একটি অংশ। তাই লজ্জা, আর ভয় জয় করে গনিত শিখতে হবে বলে মত তরুণ গণিতবিদ কনকের।
লেখক – সহকারী শিক্ষক, যুবাইদিয়া ইসলামিয়া মহিলা ফাজিল মাদ্রাসা। সীতাকুণ্ড,চট্টগ্রাম।