এক সময় যিনি দাম্ভিকতার সহিত বলেছিলেন আমার জন্মের আগ থেকে সাব-রেজিস্ট্রাররা ঘুষ খায়, অবশেষে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ঘুষখোর সেই সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীবকে স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক অবমুক্ত) করা হয়েছে।
গতকাল আইন মন্ত্রণালয়েয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে এ স্ট্যান্ড রিলিজের কথা জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে আগামী ১৩ মার্চ রবিবারের মধ্যে তাকে বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে বলা হয়।
স্ট্যান্ড রিলিজের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান। একই প্রজ্ঞাপনে নীলফামারী জেলার জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফুর রহমান মোল্লাকে সীতাকুণ্ডে বদলী করা হয়েছে।
এর আগে গত ৪ জুলাই’২০২৪ তারিখে সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীবের ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমার হস্তক্ষেপে ঘুষ-দুর্নীতি না করার অঙ্গীকার দিয়ে ও ঘুষের লেনদেনকারী তার সহকারী এয়াকুবকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে সে যাত্রায় রক্ষা পান রায়হান হাবীব। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর ঘুষ লেনদেনে আরও বেপরোয়া হয়ে যান তিনি। বাধ্য হয়ে দলিল লেখকরা রায়হান হাবীবের অপসারণ দাবীতে জেলা রেজিস্ট্রারকে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করেন। এতেও কাজ না হলে গত ২৩ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের কলম বিরতিতে যান দলিল লেখকরা। সীতাকুণ্ড দলিল লেখক সমিতির ব্যানারে ওই কলম বিরতিতে সকল দলিল লেখক অংশগ্রহণ করেন। টানা ১২ দিন কলমবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়ে সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সকল কার্যক্রম। এরপরও বহাল তবিয়তে থেকে যান সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীব।
অবশেষে দলিল লেখকদের আন্দোলনের পাঁচ মাস পর গতকাল স্ট্যান্ড রিলিজ হলেন সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীব। এদিকে রায়হান হাবীবের স্ট্যান্ড রিলিজের খবরে স্বস্তি দেখা দিয়েছে সীতাকুণ্ডের দলিল লেখকদের মাঝে। একই সাথে উচ্ছ্বসিত পুরো সীতাকুণ্ডবাসী।
জানা যায়, দুর্নীতিবাজ এই সাব-রেজিস্ট্রার মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়া করতো না কাজ। ছোট-খাটো সুঁত ধরে কাজ আটকিয়ে আদায় করে নিতো মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা না দিলে দলিল লেখকদের সাথে করতো অসদাচারণ ও লাইসেন্স বাতিলের হুমকি। অফিসে বসে টেবিলের উপর বসে অশ্লীল ভঙ্গিতে টানতেন সিগারেট।
এদিকে তার বিদায়ের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা নানা মন্তব্য করতে থাকে। আমানত নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন’ সে (রায়হান হাবীব) একটা ড্রাগ এডিক্টেড পারসন ছিলো। ঘুষখোর ধান্ধাবাজ সাব-রেজিস্ট্রার ছিলো। পরবর্তীতে যে বা যারা আসবে, তাদের অগ্রিম সতর্ক করতে হবে। তার ঘুষের বলি আমিও হয়েছি।
মেহেদী হাসান নামে আরেকজন লিখেছেন, সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীবের সময়কার সম্পাদিত দলিল ও দলিলের নথিগুলো রি-চেক করা উচিত। বিশেষ করে চিহ্নিত ৪/৫ জন দলিল লেখকের দলিল।
মূলতঃ ৫ আগস্টের পর তার ঘুষ-দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়। অক্টোবরে দলিল লেখকদের কলম বিরতির পর যা চরম মাত্রায় পৌঁছায়। এসব বিষয়ে সীতাকুণ্ডের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের নজর দেয়া উচিত। সীতাকুণ্ডের আমজনতা এই সেক্টরটিতে সবচেয়ে বেশী হয়রানির স্বীকার হন।
গত মার্চ মাসে রায়হান হাবীবকে প্বার্শবর্তী উপজেলা মিরসরাইতে খন্ডকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দলিল লেখকরা কলম বিরতি পালন করলে তাকে অপসারণ করা হয়। এর আগের কর্মস্থল ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পায় দুদক। দুর্নীতির অভিযোগে সেখান থেকে তাকে বদলি করা হয়। এর আগে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তার বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্য ও অফিস স্টাফ থেকে শুরু করে দলিল লেখকদের সাথে অসৌজন্য আচরণের কারণে তাকে সেখান থেকেও বদলি করা হয়। এবার সীতাকুণ্ড থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত করা হয় এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রায়হান হাবীবকে।
স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান জানান, সীতাকুণ্ডের সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবীবের স্ট্যান্ড রিলিজের খবর শুনেছি। তবে এখনও প্রজ্ঞাপন হাতে পাইনি। তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারদের বদলী মানেই স্ট্যান্ড রিলিজ।