জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় যুবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ১৬ অক্টোবর -২০২৫ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো ‘ইয়ুথ অ্যান্টিসিপেশন হাব: স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পূর্বানুমানমূলক কার্যক্রমকে সহায়তার জন্য উদ্ভাবনী ও টেকসই ধারণা’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ এক কর্মশালা।
জার্মান ফেডারেল ফরেন অফিস জিএফএফও ‘র অর্থায়ন, সেভ দ্য চিলড্রেন এর সার্বিক সহায়তায় বাস্তবায়িত স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন- ইপসা বাস্তবায়িত এ্যান্টিসিপেটরি এ্যাকশন প্রকল্পের আওতায় গঠিত ইয়ূথ এ্যান্টিসিপেশন হাব এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আয়োজিত এই কর্মশালায় তরুণ অংশগ্রহণকারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়।
কর্মশালাটি সকাল ১০টায় শুরু হয় ইপসার প্রকল্প ব্যবস্থাপক সানজিদা আক্তার-এর উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে। তিনি পূর্বানুমানমূলক কাজের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “দুর্যোগ কবলিত হয়ে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে, দুর্যোগের আগে ব্যবস্থা নিলে ক্ষয়-ক্ষতি কম হয়। আমরা কাজ করছি পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার জন্য।”
এরপর ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর প্রতিনিধি আকফারুজ্জামান রুবেল প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণী এবং পূর্বানুমানমূলক কার্যক্রম এ্যান্টিসিপেটরি এ্যাকশন ও কর্মশালার প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে একটি সেশন পরিচালনা করেন।
উদ্ভাবন ও নেতৃত্বের বার্তা
ইপসার সহকারী পরিচালক এবং যুব ফোকাল আব্দুস সবুর মেন্টিমিটার ব্যবহার করে একটি ইন্টারেক্টিভ আইসব্রেকিং সেশন নেন। পরবর্তীতে তিনি ‘উদ্ভাবন, অ্যাডভোকেসি ও দ্রুত সাড়া প্রদানে যুব নেতৃত্বের গতিশীলতা’ শীর্ষক সেশন পরিচালনা করেন। এই সেশনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা সবাই সমান। আমরা সবাই মানুষ এই লেন্সেই কাজ করতে হবে। ডাইভার্সিটিকে সম্মান করতে হবে।” তাঁর বক্তব্যে তরুণদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া লক্ষ্য করা যায়। অংশগ্রহণকারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোচনায় অংশ নেন এবং প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেন।
কর্মশালার দ্বিতীয়ার্ধে, অংশগ্রহণকারীদের চারটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। তারা সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সেই সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধান বের করার ওপর দুটি দলীয় কাজ সম্পন্ন করেন। দলীয় কাজগুলো ছিল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণমূলক এবং তরুণরা প্রায়শই উপেক্ষিত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আসেন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
কর্মশালায় অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. সাদিকা সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব ও টেকসই উন্নয়ন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়।, মো: শাহ জালাল মিশুক, সহকারী অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চুয়েট। মো: শাহ জালাল মিশুক তরুণদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হন। তিনি বলেন, ” ইয়ূথরা যেভাবে মাথায় সলিউশনগুলো ধরছেন আমাদের মাথায় সেভাবে আসে না। আগে যেটা আমরা ম্যানুয়ালি করতাম, এখন তারা টেকনোলজি দিয়ে করছে। এআই, রিমোট সেন্সিং, জিআই, এরিয়াল ফটোগ্রাফি। সকল কাজের মূল ভূমিকা তরুণদের।”
ড. সাদিকা সুলতানা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবটা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। শুধু তরুণরা না বিশ্বের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
সার্বিক কর্মশালাটি সফলভাবে পরিচালনা করেন ইপসার প্রকল্প কর্মকর্তা মুহাম্মদ আতাউল হাকিম। কর্মশালার মাধ্যমে তরুণদের মাঝে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও উদ্ভাবনী সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে আয়োজকরা মনে করছেন এবং অংশগ্রহণকারীরাও এতে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।