গ্রামীণ জীবনে শীতের আনন্দ পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল হলেও অগ্রহায়ণ মাস থেকেই শুরু হয় শীতের আগমন। শীতকাল আমাদের দেশের একটি সুন্দর ঋতু। জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশে শীত এখন সংক্ষিপ্ত ঋতু।
হাড়কাঁপানো শীত বলতে যা বোঝায় তার দেখা পাওয়া যায় পৌষ-মাঘ মাসে। একসময় প্রচলিত ছিল ‘মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে’। সেই হাড়কাঁপানো শীতের সঙ্গে এখনকার প্রজন্মের পরিচয় নেই।
শীতকাল এলে গ্রামবাংলায় অনুষ্ঠিত হয় নানান ধরনের উৎসব। এরমধ্যে রয়েছে ষাঁড়ের লড়াই, ঘোড়ার দৌড়, মোরগ লড়াই ইত্যাদি। এগুলো গ্রামের শীত মৌসুমের ঐতিহ্যবাহী খেলার আসর। শীতে সবাই গ্রামে ফেরার আমন্ত্রণ পায়।
কারণ গ্রামে না গেলে শীত কী জিনিস আর শীতের অপরূপ পরিবেশ চোখে না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না। গ্রামের সবুজ প্রকৃতির বুকে হলুদ সরিষা খেতের উজ্জ্বলতা মানুষকে মুগ্ধ ও বিমোহিত করে।
তার ওপর কুয়াশাভাঙ্গা শিশির কণা—আহা কী অপরূপ, কী অপরূপ। শীতের বেলায় গ্রামে সূর্য ওঠার দৃশ্য বেশ মনোরম। বাড়ির সামনে মানুষ ঠায় জমায়েত হয়ে বসে থাকে সূর্য ওঠার অপেক্ষায়।
শীতকাল এলো বুঝি বছর ঘুরে গ্রামে যেমন শীতকালের আগমন ঘটে সেটা বুঝা যায় সকাল বেলার বাহারি রকমের পিঠা দিয়ে,সাথে খেজুর গাছের তাজা কাঁচা রস চুলায় জ্বাল দিয়ে গ্রামের ঐতিহ্য ভাপা পিঠা,চিতই পিঠা, সিন্নি থেকে শুরু করে যখন খায় তখনই বুঝা যায় শীত বুঝি ফিরে এলো দুয়ারে।
তারই সাথে বিভিন্ন বাজারে যখন দেখি নানা, নানী, দাদা-দাদির বয়স থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চাদের শীতের জামা কাপড় সহ হাতমোজা কেনাকাটা করেন বিভিন্ন পরিবার।
আবার বিভিন্ন বাজার ঘাটে দেখা যায় ভাপা পিঠা থেকে শুরু করে চিতই পিঠা সাথে বিভিন্ন আইটেম ভর্তা যেমন ঝাল শুটকি ভর্তা তেঁতুল ভর্তা জলপাই ভর্তা সহ নানা রকমের শীতের মসুমের এই পিঠাগুলোর স্বাদ যেন মুখেই দীর্ঘদিন লেগে থাকে।
কার না ভালো লাগে এসব পিঠা,সাথে বোনদের শশুরবাড়ি শীতের পিঠা থেকে শুরু করে রস নিয়ে যাওয়া হয়,আবার ভাইয়ের শশুরবাড়ি থেকেও এসব পিঠা ও রস নিয়ে আসে পরিবারের জন্য।
কিশোর-কিশোরীরা ডিসেম্বর এর পরীক্ষা শেষ করে ঢাকা -চট্টগ্রাম যারা থাকে তারা রসের ঘ্রান ও পিঠার স্বাদ নিতে গ্রামের বাড়ি কেউ বা দাদা–নানীর বাড়িতে বেড়াতে যায়,বছরে ১-২মাস যদি এসব খেতে নাই পারে তাহলে সব যেন বৃথা লাগে এমনটাই মনে করেন সকলে। তাই শীতকাল মানে গ্রামের প্রকৃতি ও পিঠার আমেজের মেলা এটাই মনে করেন সকলে। (পরিমার্জিত)