জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মাঠ দখলের প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে মাঠের রাজনীতি। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ৫ অক্টোবর কেন্দ্র ঘোষিত রোডমার্চের অংশ হিসেবে মীরসরাই সদরে পথসভা করবে বিএনপি। মীরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় মীরসরাই সদরে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিবেন দলের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখবেন স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম ও চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারসহ জাতীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ।
বিএনপি একাধিক নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কোন নেতাকর্মীকে এলাকায় থাকতে দিচ্ছেনা এবং রোডমার্চ অংশগ্রহন যাতে করতে না পারে সহ ক্ষমতাসীন দল করে রাখছে।
অপরদিকে মীরসরাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৬ অক্টোবর বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামীলীগ। শান্তি সমাবেশকে সফল করতে বুধবার উপজেলার ব্যাপী সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভায় একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে ক্ষমতাসীন দল ও তার অংশ সংগঠন।
মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, শুক্রবার বেলা ২টায় বারইয়ারহাট হাইওয়ে চত্বরে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দিবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমি- নুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাসহ জেলা উপজেলা নেতৃবৃন্দ।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি একটি গণ বিচ্ছিন্ন দল। তাদের লোক কম হবে বিধায় আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বাড়িতে রোডমার্চের প্রস্তুতি সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপি আ.লীগের সংঘর্ষে কিশোর রায়হান হোসেন রুমন(১৬) নামে এক কিশোর নিহতের ঘটনায় বিএনপি নেতা আমিন চেয়ারম্যান প্রধান আসামী করে রুমনের মা খালেদা আক্তার ৭০ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে।
বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশের স্থানে স্টেজ নির্মাণের সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। একদিকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন গুলোর সতর্ক অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল অন্যদিকে বিএনপি’র সমাবেশ স্থলে স্টেজ নির্মাণে বাধা বিএনপি’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা আতংকিত।
কিন্তু বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকার জানান, মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের পরামর্শ মোতাবেক মিরসরাই পৌরবাজারের দক্ষিণ পাশে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে মোতাবেক সমাবেশের মঞ্চ তৈরি জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল মিরসরাই উপজেলা বিএনপি।
বুধবার (৪ অক্টোবর ) সাড়ে বারোটায় সমাবেশ স্থলে পরিদর্শন করেছি আমরা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, উত্তর জেলার বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ও মিরসরাই উপজেলা বিএনপি এক যোগে। তখনো কোন বাঁধা আসেনি।সমাবেশ স্থলে মঞ্চ নির্মাণের এক পর্যায়ে কোন কারণ ছাড়াই মিরসরাই পুলিশ প্রশাসন সমাবেশ স্থলে মঞ্চ নির্মাণের বাধা সৃষ্টি করে। মঞ্চ স্থাপনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়। তাদের এমন দ্বিমুখী আচরণ আমরা আশা করিনি। আমরা এখনো আশা করছি তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এটি বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি যে কোন মূল্যে আমরা এটিকে বাস্তবায়ন করবো।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সমাবেশ স্থলের মঞ্চ তৈরীর সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে মিরসরাই থানা প্রশাসন থেকে। আমরা এখনো আশাবাদী আমাদের সমাবেশ আশা করছি যে কোন একটা বিকল্প ব্যবস্থা হবে।
অন্যদিকে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, বিএনপি’র কর্মসূচিকে ঘিরে নয় বরং বিএনপির সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় ছাত্রলীগ কর্মী রুমন হত্যার প্রতিবাদে মিরেশ্বরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভায় এক যোগে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে। এছাড়া আগামী ৬ অক্টোবর সরকারদলীয় শান্তি সমাবেশের প্রচার-প্রচারণা ও নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ। বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
মিরসরাই থানা অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন জানান, বিএনপি কেন্দ্র ঘোষিত পথসভায় দলটির মহাসচিব মীরজা ফখরুল সাহেব এখানে বক্তব্য দিবেন। তারা সমাবেশের মঞ্চ স্থাপনের জন্য যে স্থানটি নির্ধারণ করেছে সেটি অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং নিচু স্থান। তারা হয়তো চিন্তা করেছে যে মঞ্চ স্থাপনের স্থানটি উপযুক্ত হয়নি তাই হয়তো তাদের মঞ্চ স্থাপনের সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছে। এখন তারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য অথবা পাবলিক সিম্পিথি অর্জনের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।