চট্টগ্রাম 6:37 am, Sunday, 29 June 2025

মিরসরাইয়ে ২০০ জন মানুষের ভরসা একটি নলকূপ 

চট্টগ্রামের  মিরসরাই উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নে আজিজ নগর গ্রামে ৪০ পরিবারের ২০০ জন মানুষের একমাত্র ভরসা একটি নলকূপ। যে নলকূপ দিয়ে পানি নিতে ২০টি মাটির সিঁড়ি ধাপ  পেরিয়ে ৪০- ৫০ ফুট নিয়ে গিয়ে পানি আনতে হয় এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড গেড়ামারা এলাকায় আজিজ নগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় একটি ৪০-৫০ ফুট নিছে নলকূপ উপরে ৭-৮ জন মহিলাকে কলসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। একজন করে ৪০- ৫০ ফুট নিয়ে গিয়ে নলকূপ থেকে পানি নিতে ২০টি মাটির সিঁড়ি ধাপ  পেরিয়ে গিয়ে পানি আনতে দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায় বিগত ৭ বছর আগে ৩ মাসের চেষ্টায় এলাকায় পানির সংকট দেখা দিলে স্থানীয় বেলাল উদ্দিন নামে বাসিন্দা এলাকায় মানুষের কথা চিন্তা করে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি স্যালো টিউবওয়েল স্থাপন করেন।

পানি নিতে আসা রাহেলা বেগম নামে এক মহিলা জানান, সকাল ৬টা থেকে কলসি করে এখানে থেকে পানি নেওয়া শুরু। ঘরে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, স্বামী, ছেলে মেয়ে এবং কি গবাদিপশু সহ সবার গোসল খাওয়া দাওয়া ও দৈনন্দিন কাজ সারার জন্য এই পানি ব্যবহার করা হয়। দৈনিক প্রায় ৫০-৬০ কলসি পানি নিতে হয় এখান থেকে।

ঝরিনা আক্তার নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, সিঁড়ি বেয়ে ৪০-৫০ ফুট নিছে গিয়ে টিউবওয়েল চাপ দিলে পানি আসে না। ১৫-২০ চাপ দেওয়ার পর একটা কলসি ভর্তি হয়। এইভাবে দৈনিক কয়েক কলসি নিয়ে আসতে হয়। এইভাবে পানি নিয়ে আসতে আসতে হাঁপিয়ে উঠি।

সেখানে কথা হয় কূপের চাপকল থেকে পানি নিতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি কোনো বিচ্ছিন্ন জনপদ নয়। তবু এখানে কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায় না। এখানে চলাচলের ভালো রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই , পানির সংকট নিত্যদিনের। টিলা প্রকৃতির এলাকা হওয়ায় এখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নিচে। তাই পুরো পাড়ার মানুষের ব্যবহারের জন্য নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমে তিন মাস ধরে গভীর একটি কূপ খনন করে তার নিচে একটি চাপকল বসিয়েছি। বর্ষাকালে কোনোমতে চললেও গরমকাল আসতেই এই চাপকল থেকে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। তখন দূরদূরান্ত থেকে পানি এনে রান্নাবান্না, খাওয়া, গোসলসহ সব ধরনের কাজ সারতে হয়। সত্যি কথা হচ্ছে, গরমকাল এলে পানির সংকটের কারণে পাড়ার মানুষ এক দিন পরপর গোসল করে। এখানে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিলে আমাদের এই সংকটের অবসান হতো।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সাঈদ মাহমুদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার নিচে নেমে যায়। শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলে পানির শেয়ার ৩০ -৩৫ ফিট ডাউন হয়ে যায়। যার ফলে পাহাড়ী অঞ্চলে স্যালো টিউবওয়েল পানি উঠে না তাই ঐখানে সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি তুলতে হবে।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘করেরহাট ইউনিয়নের আজিজনগর এলাকায় একটি পাড়ায় মানুষের পানিসংকটের বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। জায়গাটি পরিদর্শন করে দ্রুত সেখানে পানিসংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাটহাজারীতে শিশু ধর্ষণচেষ্টা মামলার পলাতক আসামি গহিরায় গ্রেপ্তার

মিরসরাইয়ে ২০০ জন মানুষের ভরসা একটি নলকূপ 

Update Time : 05:46:11 pm, Wednesday, 12 February 2025

চট্টগ্রামের  মিরসরাই উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নে আজিজ নগর গ্রামে ৪০ পরিবারের ২০০ জন মানুষের একমাত্র ভরসা একটি নলকূপ। যে নলকূপ দিয়ে পানি নিতে ২০টি মাটির সিঁড়ি ধাপ  পেরিয়ে ৪০- ৫০ ফুট নিয়ে গিয়ে পানি আনতে হয় এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড গেড়ামারা এলাকায় আজিজ নগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় একটি ৪০-৫০ ফুট নিছে নলকূপ উপরে ৭-৮ জন মহিলাকে কলসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। একজন করে ৪০- ৫০ ফুট নিয়ে গিয়ে নলকূপ থেকে পানি নিতে ২০টি মাটির সিঁড়ি ধাপ  পেরিয়ে গিয়ে পানি আনতে দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায় বিগত ৭ বছর আগে ৩ মাসের চেষ্টায় এলাকায় পানির সংকট দেখা দিলে স্থানীয় বেলাল উদ্দিন নামে বাসিন্দা এলাকায় মানুষের কথা চিন্তা করে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি স্যালো টিউবওয়েল স্থাপন করেন।

পানি নিতে আসা রাহেলা বেগম নামে এক মহিলা জানান, সকাল ৬টা থেকে কলসি করে এখানে থেকে পানি নেওয়া শুরু। ঘরে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, স্বামী, ছেলে মেয়ে এবং কি গবাদিপশু সহ সবার গোসল খাওয়া দাওয়া ও দৈনন্দিন কাজ সারার জন্য এই পানি ব্যবহার করা হয়। দৈনিক প্রায় ৫০-৬০ কলসি পানি নিতে হয় এখান থেকে।

ঝরিনা আক্তার নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, সিঁড়ি বেয়ে ৪০-৫০ ফুট নিছে গিয়ে টিউবওয়েল চাপ দিলে পানি আসে না। ১৫-২০ চাপ দেওয়ার পর একটা কলসি ভর্তি হয়। এইভাবে দৈনিক কয়েক কলসি নিয়ে আসতে হয়। এইভাবে পানি নিয়ে আসতে আসতে হাঁপিয়ে উঠি।

সেখানে কথা হয় কূপের চাপকল থেকে পানি নিতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি কোনো বিচ্ছিন্ন জনপদ নয়। তবু এখানে কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায় না। এখানে চলাচলের ভালো রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই , পানির সংকট নিত্যদিনের। টিলা প্রকৃতির এলাকা হওয়ায় এখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নিচে। তাই পুরো পাড়ার মানুষের ব্যবহারের জন্য নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমে তিন মাস ধরে গভীর একটি কূপ খনন করে তার নিচে একটি চাপকল বসিয়েছি। বর্ষাকালে কোনোমতে চললেও গরমকাল আসতেই এই চাপকল থেকে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। তখন দূরদূরান্ত থেকে পানি এনে রান্নাবান্না, খাওয়া, গোসলসহ সব ধরনের কাজ সারতে হয়। সত্যি কথা হচ্ছে, গরমকাল এলে পানির সংকটের কারণে পাড়ার মানুষ এক দিন পরপর গোসল করে। এখানে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিলে আমাদের এই সংকটের অবসান হতো।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সাঈদ মাহমুদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার নিচে নেমে যায়। শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলে পানির শেয়ার ৩০ -৩৫ ফিট ডাউন হয়ে যায়। যার ফলে পাহাড়ী অঞ্চলে স্যালো টিউবওয়েল পানি উঠে না তাই ঐখানে সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি তুলতে হবে।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘করেরহাট ইউনিয়নের আজিজনগর এলাকায় একটি পাড়ায় মানুষের পানিসংকটের বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। জায়গাটি পরিদর্শন করে দ্রুত সেখানে পানিসংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হব।