চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ১৭০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার শুধু ভাষা আন্দোলনের স্মারকই নয়, এটি বাঙালির জাতিসত্ত্বা, ইতিহাস ঐতিহ্য ও দেশপ্রেমের প্রতীক। দেশের আগামী প্রজন্মের মধ্যে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে সঙ্গে দেশাত্মবোধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য চেতনা জাগ্রত করার প্রয়োজনে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাঞ্ছনীয় হলেও ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছরেও মীরসরাইয়ে ১৯১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। শহীদ মিনার আছে মাত্র ২১টি বিদ্যালয়ে। সরকারিভাবে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো পালন করার নির্দেশনা রয়েছে। আর এসব দিবসে শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার কথা থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় করা হয়না। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে অস্থায়ী বেদী নির্মাণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জের আরফান বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফয়েজ উল্ল্যাহ মাষ্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো শহীদ মিনার। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন না শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে আরফান বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, সরকারিভাবে অনুদান না থাকায় শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এ সম্পর্কে সচেতন মহল বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের শর্তের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। ভাবতে অবাক লাগে, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দেয়, সেই জাতির দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।’
শহীদ মিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিপিএ) মীরসরাই উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার বলেন, ‘বাঙালি চেতনা ও আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা শহীদদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা দিতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি।’
এ ব্যাপারে মীরসরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ,কে, এম ফজলুল হক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো বরাদ্ধ নেই। নতুনভাবে বরাদ্ধ পেলে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। তবে একটি নির্দেশনা এসেছে সব বিদ্যালয়ে একই আকার ও আয়তনের শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। যারা নিজস্ব উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করবে, তাদের জন্যই এই নির্দেশনা।