চট্টগ্রাম 7:40 pm, Wednesday, 22 October 2025

রাঙ্গুনিয়ায় আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রকৃত উপকারভোগীরা উধাও, ঘরে ওঠেছে অন্যরা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৩নং চাঁদনগর এলাকায় সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ছয়টি ঘর দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে। প্রকল্পের প্রকৃত উপকারভোগীদের কেউই বর্তমানে সেখানে বসবাস করছেন না বলে জানা গেছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেখা যায়, ছয়টি ঘরের মধ্যে দুটি ঘরে বর্তমানে বাইরের দুই পরিবার বসবাস করছে। একজনের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়, অন্যজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়।

চকরিয়ার বাসিন্দা মো. শাহ আলম জানান,
“আমি দীর্ঘদিন যাবত এই এলাকায় থাকতাম। গত এক বছর ধরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এখানে থাকছি। মূলত আমি পঙ্গু, ঘরটি খালি থাকায় স্থানীয়রা আমাকে থাকতে দিয়েছেন।”

অন্যদিকে, নোয়াখালীর বাসিন্দা ফাহেতা আক্তার বলেন, “আমরা এই ঘরের প্রকৃত মালিক নই। প্রকৃত মালিক আবদুস শুক্কুর, গত চার বছর আগে রাণীরহাট ভূমি অফিসের তহসিলদার একরাম নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ঘরটি আমাদের দিয়েছেন।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে উঠে আসে আরেকটি তথ্য- খালি থাকা প্রায় সব ঘরেই স্থানীয় কয়েকজন তালা লাগিয়ে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রকৃত মালিকরা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় ঘরগুলো যাতে অন্য কেউ দখল না নেয়, সেই উদ্দেশ্যে তারা তালা দিয়েছে।

এ সময় স্থানীয়রা আরও জানান, মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী তার ঘর থাকলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে থাকেনা। তবে সম্প্রতি তিনি এসে নিজের ঘরে দেওয়া তালা ভেঙে প্রবেশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে মনোয়ারা বেগম বলেন, “আমার উপযুক্ত মেয়ে থাকায় এবং পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আমি ছয় মাস আগে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেখান থেকে আমার বাবার বাড়ি (রাজানগর, শিয়াল বুক্কা) চলে আসি। আমি এর আগে চার বছর সেখানে ছিলাম। পরে মেয়ের বিয়ে দিয়ে গিয়ে দেখি আমার ঘরে তালা দেওয়া। আমি থালা ভেঙ্গে ঘরে ডুকি।”

এ বিষয়ে রাণীরহাট ভূমি অফিসের তহসিলদার মো. একরাম হোসেন বলেন, “ওখানে ছয়টি ঘরের মধ্যে দুটি পরিবারের মূল মালিক মারা গেছেন। যতটুকু জানি, একটি পরিবার বৈধভাবে সেখানে আছেন। বাকিদের সম্ভবত বৈধ কাগজ নেই।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করা। কিন্তু প্রকৃত উপকারভোগীরা ঘরে না থাকায় সেখানে আমরা বাইরের দুই অসহায় পরিবারকে থাকতে দিয়েছি। তারা দাবি করেন, খালি ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা উচিত।

এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন,।“বিষয়টি আজকে অবগত হলাম। দীর্ঘদিন ধরে যদি ঘরের প্রকৃত মালিক সেখানে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মিরসরাইয়ে বিএনপির কর্মসূচিতে সাংবাদিক হেনস্তা

রাঙ্গুনিয়ায় আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রকৃত উপকারভোগীরা উধাও, ঘরে ওঠেছে অন্যরা

Update Time : 03:34:50 pm, Wednesday, 22 October 2025

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ৩নং চাঁদনগর এলাকায় সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ছয়টি ঘর দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে। প্রকল্পের প্রকৃত উপকারভোগীদের কেউই বর্তমানে সেখানে বসবাস করছেন না বলে জানা গেছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেখা যায়, ছয়টি ঘরের মধ্যে দুটি ঘরে বর্তমানে বাইরের দুই পরিবার বসবাস করছে। একজনের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়, অন্যজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়।

চকরিয়ার বাসিন্দা মো. শাহ আলম জানান,
“আমি দীর্ঘদিন যাবত এই এলাকায় থাকতাম। গত এক বছর ধরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এখানে থাকছি। মূলত আমি পঙ্গু, ঘরটি খালি থাকায় স্থানীয়রা আমাকে থাকতে দিয়েছেন।”

অন্যদিকে, নোয়াখালীর বাসিন্দা ফাহেতা আক্তার বলেন, “আমরা এই ঘরের প্রকৃত মালিক নই। প্রকৃত মালিক আবদুস শুক্কুর, গত চার বছর আগে রাণীরহাট ভূমি অফিসের তহসিলদার একরাম নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ঘরটি আমাদের দিয়েছেন।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে উঠে আসে আরেকটি তথ্য- খালি থাকা প্রায় সব ঘরেই স্থানীয় কয়েকজন তালা লাগিয়ে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রকৃত মালিকরা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় ঘরগুলো যাতে অন্য কেউ দখল না নেয়, সেই উদ্দেশ্যে তারা তালা দিয়েছে।

এ সময় স্থানীয়রা আরও জানান, মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী তার ঘর থাকলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে থাকেনা। তবে সম্প্রতি তিনি এসে নিজের ঘরে দেওয়া তালা ভেঙে প্রবেশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে মনোয়ারা বেগম বলেন, “আমার উপযুক্ত মেয়ে থাকায় এবং পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আমি ছয় মাস আগে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেখান থেকে আমার বাবার বাড়ি (রাজানগর, শিয়াল বুক্কা) চলে আসি। আমি এর আগে চার বছর সেখানে ছিলাম। পরে মেয়ের বিয়ে দিয়ে গিয়ে দেখি আমার ঘরে তালা দেওয়া। আমি থালা ভেঙ্গে ঘরে ডুকি।”

এ বিষয়ে রাণীরহাট ভূমি অফিসের তহসিলদার মো. একরাম হোসেন বলেন, “ওখানে ছয়টি ঘরের মধ্যে দুটি পরিবারের মূল মালিক মারা গেছেন। যতটুকু জানি, একটি পরিবার বৈধভাবে সেখানে আছেন। বাকিদের সম্ভবত বৈধ কাগজ নেই।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করা। কিন্তু প্রকৃত উপকারভোগীরা ঘরে না থাকায় সেখানে আমরা বাইরের দুই অসহায় পরিবারকে থাকতে দিয়েছি। তারা দাবি করেন, খালি ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা উচিত।

এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন,।“বিষয়টি আজকে অবগত হলাম। দীর্ঘদিন ধরে যদি ঘরের প্রকৃত মালিক সেখানে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”