চট্টগ্রাম 3:50 pm, Thursday, 31 July 2025

রাঙ্গুনিয়ায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক ভুক্তভোগী পরিবার।

বুধবার (৩০ জুলাই) উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনুস পাড়ার বাসিন্দা আবদুল সামাদের পরিবার সাংবাদিকদের সামনে এ অভিযোগ তোলে ধরেন।

আবদুল সামাদ বলেন, “জমি নিয়ে স্থানীয় আবদুল মান্নান ও আবদুল হান্নান আমাকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছেন। সম্প্রতি তারা থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে দাবি করেন, আমি তাদের কাছে চাঁদা চেয়েছি এবং তাদের বাবা মৃত গফুরকে মারধর করেছি বা হত্যার বিষয়ে জানি। পুলিশ যখন বিষয়টি জানতে চায়, তখন আমি স্পষ্ট করে বলেছি, এসবের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তখন পুলিশ জানান অভিযোগ পেয়ে তাকে ডেকেছেন।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, “তারা সাংবাদিকদের কাছে আমাদের বিরুদ্ধেই পাল্টা অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি আমাদের জানানো হয়েছে, যদি চাঁদা না দিই, তবে আমাদের গফুর হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।”

ভুক্তভোগী সামাদের দাবি, “আমাদের পাশের হিন্দু শীল পরিবারের নীলমা শীল নামের এক সদস্যকে গভীর রাতে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তারা ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেলে সেই জায়গা আলমশাহ পাড়ার এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয় ওই শীল পরিবার। ওই জায়গার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তারা আমাদের টার্গেট করেছে।”

আবদুল সামাদ অভিযোগ করেন, গত ১৬–১৭ বছর ধরে তারা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকাবাসীর ওপর দাপট দেখিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, “আমাদের বাড়ির পাশে তাদের বাড়ি হলেও কোনো সামাজিক বা পারিবারিক সম্পর্ক নেই। জমির সীমানা নির্ধারণে তাদের বাবা নিজেই উপস্থিত ছিলেন এবং পরিমাপ করে দিয়েছেন। জমির আমিনের কাগজেও তার স্বাক্ষর রয়েছে। তবুও তারা আমাদের হয়রানি করে চলেছে।”

তিনি আরও জানান, “আমার ভাইয়েরা সবাই প্রবাসে। আমি একা দেশে আছি। তারা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে নানা নির্যাতন চালাচ্ছে। আগে বিএনপি করি এই রাজনৈতিক পরিচয় ধরে আমাকে ও আমার ছেলেকে মারধরও করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে।”

আবদুল সামাদের বড় ভাই আবদুল সুবহানের স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী বিদেশে থাকলেও মান্নানরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো কোনো নিরাপত্তা পাইনি। উল্টো তারা হুমকি দিচ্ছে—চাঁদা না দিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে।”

পরিবারটি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার দাবি করেছেন।

অন্যদিকে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুল হান্নান আবদুল সামাদের অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, “অভিযোগকারী আবদুল সামাদ আমাদের বড় ভাইয়ের মতো। তার সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। এমনকি তার নাম করে আমরা কখনও কোনো অভিযোগ করিনি।”

তিনি এবং তার পরিবার আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন।

তিনি আরও জানান, “খণ্ডলিয়া পাড়া থেকে ইউনুস পাড়ায় এসেছি বলে ২০০৮ সালে একটি জমি সংক্রান্ত ঘটনায় মারামারির সময় আমাদের বাবা মারা যান।
ঘটনাটিতে আমার মা ও বোন আহত হয়ে প্রায় ২০ দিন
হাসপাতালে ছিলেন। ওই ঘটনায় আমরা আবদুল সামাদের নাম উল্লেখ করিনি।।”

চাঁদা দাবির অভিযোগ প্রসঙ্গে হান্নান বলেন, “আমরা কেনইবা তাদের কাছে চাঁদা চাইবো? তারা আমাদের প্রতিবেশী। বরং সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে পুনরায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় আমরা সাংবাদিকদের ডেকে বিষয়টি জানিয়েছি। সংবাদে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।”

তিনি আরও দাবি করেন, “সাংবাদিকরা আবদুল সামাদ ও তার ভাই আবদুল সোবহানের নাম্বার চাইলে সেটি পাননি, আর তাদের নাম্বার না পাওয়া ও বক্তব্য না পাওয়ার বিষয়টি নিউজে যুক্ত করলে সামাদের পরিবার এটাকে মানহানিকর দাবি করে অভিযোগ তুলেছে, যা আমাদের জন্য দুঃখজনক।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বড়ইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা সম্পন্ন

রাঙ্গুনিয়ায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

Update Time : 07:08:23 pm, Wednesday, 30 July 2025

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক ভুক্তভোগী পরিবার।

বুধবার (৩০ জুলাই) উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনুস পাড়ার বাসিন্দা আবদুল সামাদের পরিবার সাংবাদিকদের সামনে এ অভিযোগ তোলে ধরেন।

আবদুল সামাদ বলেন, “জমি নিয়ে স্থানীয় আবদুল মান্নান ও আবদুল হান্নান আমাকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছেন। সম্প্রতি তারা থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে দাবি করেন, আমি তাদের কাছে চাঁদা চেয়েছি এবং তাদের বাবা মৃত গফুরকে মারধর করেছি বা হত্যার বিষয়ে জানি। পুলিশ যখন বিষয়টি জানতে চায়, তখন আমি স্পষ্ট করে বলেছি, এসবের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তখন পুলিশ জানান অভিযোগ পেয়ে তাকে ডেকেছেন।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, “তারা সাংবাদিকদের কাছে আমাদের বিরুদ্ধেই পাল্টা অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি আমাদের জানানো হয়েছে, যদি চাঁদা না দিই, তবে আমাদের গফুর হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।”

ভুক্তভোগী সামাদের দাবি, “আমাদের পাশের হিন্দু শীল পরিবারের নীলমা শীল নামের এক সদস্যকে গভীর রাতে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তারা ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেলে সেই জায়গা আলমশাহ পাড়ার এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয় ওই শীল পরিবার। ওই জায়গার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তারা আমাদের টার্গেট করেছে।”

আবদুল সামাদ অভিযোগ করেন, গত ১৬–১৭ বছর ধরে তারা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকাবাসীর ওপর দাপট দেখিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, “আমাদের বাড়ির পাশে তাদের বাড়ি হলেও কোনো সামাজিক বা পারিবারিক সম্পর্ক নেই। জমির সীমানা নির্ধারণে তাদের বাবা নিজেই উপস্থিত ছিলেন এবং পরিমাপ করে দিয়েছেন। জমির আমিনের কাগজেও তার স্বাক্ষর রয়েছে। তবুও তারা আমাদের হয়রানি করে চলেছে।”

তিনি আরও জানান, “আমার ভাইয়েরা সবাই প্রবাসে। আমি একা দেশে আছি। তারা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে নানা নির্যাতন চালাচ্ছে। আগে বিএনপি করি এই রাজনৈতিক পরিচয় ধরে আমাকে ও আমার ছেলেকে মারধরও করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে।”

আবদুল সামাদের বড় ভাই আবদুল সুবহানের স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী বিদেশে থাকলেও মান্নানরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো কোনো নিরাপত্তা পাইনি। উল্টো তারা হুমকি দিচ্ছে—চাঁদা না দিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে।”

পরিবারটি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার দাবি করেছেন।

অন্যদিকে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুল হান্নান আবদুল সামাদের অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, “অভিযোগকারী আবদুল সামাদ আমাদের বড় ভাইয়ের মতো। তার সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। এমনকি তার নাম করে আমরা কখনও কোনো অভিযোগ করিনি।”

তিনি এবং তার পরিবার আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন।

তিনি আরও জানান, “খণ্ডলিয়া পাড়া থেকে ইউনুস পাড়ায় এসেছি বলে ২০০৮ সালে একটি জমি সংক্রান্ত ঘটনায় মারামারির সময় আমাদের বাবা মারা যান।
ঘটনাটিতে আমার মা ও বোন আহত হয়ে প্রায় ২০ দিন
হাসপাতালে ছিলেন। ওই ঘটনায় আমরা আবদুল সামাদের নাম উল্লেখ করিনি।।”

চাঁদা দাবির অভিযোগ প্রসঙ্গে হান্নান বলেন, “আমরা কেনইবা তাদের কাছে চাঁদা চাইবো? তারা আমাদের প্রতিবেশী। বরং সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে পুনরায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় আমরা সাংবাদিকদের ডেকে বিষয়টি জানিয়েছি। সংবাদে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।”

তিনি আরও দাবি করেন, “সাংবাদিকরা আবদুল সামাদ ও তার ভাই আবদুল সোবহানের নাম্বার চাইলে সেটি পাননি, আর তাদের নাম্বার না পাওয়া ও বক্তব্য না পাওয়ার বিষয়টি নিউজে যুক্ত করলে সামাদের পরিবার এটাকে মানহানিকর দাবি করে অভিযোগ তুলেছে, যা আমাদের জন্য দুঃখজনক।”