রাঙ্গুনিয়ার অন্যতম ক্রাইমজুন হিসেবে খ্যাত সরফভাটা মীরেরখীল এলাকায় একের পর এক খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড ঘটে চলেছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতেও ভয় পাচ্ছেন। সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল সরফভাটা বড়খোলাপাড়া এলাকার আওয়াইমং মারমা (৩৩) নামে এক মারমা যুবক এবং ২৬ মার্চ নুরুল ইসলাম তালুকদার (৭০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রকাশ্য বাজারে কুপিয়ে খুন করা হয়। এই দুই খুনের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি থানায়। ফলে সন্ত্রাসীরা খুন করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।
তবে গত ১৫ মার্চ তিন ব্যক্তিকে কুপিয়ে যখম করার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার প্রায় এক মাস পর গত ১৩ এপ্রিল দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় এই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়। ভুক্তভোগী লেবু ব্যবসায়ী নেয়ামত উল্লাহ’র (৪০) ছোট ভাই মো. সরফত উল্লাহ বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় সরফভাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড কাইন্দারকুল এলাকার আমির হোসেনের ছেলে সাইফুল (৩০), তার ভাই গিয়াস (২৫), আবদুস শহিদের ছেলে জাহেদ প্রকাশ লেজ কাটা জাহেদ (৩০), আবুল কাশেমের ছেলে মো. নাজের বক্স (৩২), কালা মুন্সির ছেলে মান্নান (৩০), আবুল কাসেমের ছেলে নজরুল (৪৫), মৃত বদনের ছেলে লিটন (৩২), নজরুলের ছেলে খোকন (১৯), আমির হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ (২০)। এরমধ্যে ১নং অভিযুক্ত আসামি সাইফুল ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২৭ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার হয়েছিলো। যা সেসময় বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিলো। এরপর জেল থেকে বেরিয়ে সে এই ধরণের অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
মামলার এজহার সুত্রে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা সরফভাটার লেবু ব্যবসায়ী নেয়ামত উল্লাহ (৪০), কৃষক মোঃ ফজল (৬০) ও মো. আবছারকে(৪৫) রাতের আধারে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে যখম করে। ইতিপূর্বে তাদের কাছ থেকে চাদা চেয়ে না পেয়ে তাদের উপর পরিকল্পীত এই হামলা করে তারা। এই ঘটনায় এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী লেবু ব্যবসায়ী নেয়ামত উল্লাহ বলেন, তার বাড়ি উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড। সরফভাটা বড়খোলাপাড়া এলাকায় লেবু ব্যবসায় ও কৃষি কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন তিনি। মামলায় অভিযুক্তরা তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে না পেয়ে এই হামলা করেছে। তার ডান হাত কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এতে গেল এক মাস ধরে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাকে যারা হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে শারিরীকভাবে পঙ্গু করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তিনি।
এদিকে ভাইকে কুপিয়ে জখম করার পরও মোবাইলে চাদা দাবী করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান মামলার বাদী সরফত উল্লাহ। এরপর থেকে সে প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু তিনি নয়, সরফাভাটা মীরেরখীল এলাকার শত শত পরিবার তাদের ভয়ে এলাকাছাড়া বলে জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে তার মুঠোফোনের একটা ফোন রেকর্ড দিয়ে বাদী সরফত দাবী করেন, ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি তার মামলার আসামি মান্নান। মুঠোফোনে বলতে শুনা যায়, তাকে দুইদিনের মধ্যে দুই লাখ টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলবে। সরফভাটার সাম্প্রতিক খুন আর হামলার উদাহারন দিয়ে ফোন রেকর্ডটিতে দ্রুত টাকা দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়।
জানা যায়, সম্প্রতি প্রকাশ্যে এক লেবু ব্যবসায়ীর হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করেছিলো সন্ত্রাসীরা। এভাবে গত রমজান থেকে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে দুটি হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরিসহ একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে মীরেরখীলের মানুষ। এসব ঘটনায় কোন মামলা করতেও সাহস করেনি ভুক্তভোগী পরিবার। উল্টো মীরেরখীল এলাকায় থাকা একটি পুলিশ বিট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ফলে এলাকা ছেড়ে একাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদার জানান, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীসহ যৌথভাবে বিভিন্ন পথসভা করেছেন। খুনের ঘটনায় মামলায় স্বজনরা মামলা দিতে ভয় পাচ্ছেন। তবে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।