চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজারহাটে সপ্তদশ শতাব্দীর চাকমা রাজার রাজবাড়ীটির অবস্থান। পুরনো এই রাজবাড়ীকে ঘিরে দেড়শো বছর ধরে নববর্ষের দ্বিতীয় দিন বড়সড় করে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। তবে গত দশ বছর যাবত লিখিতভাবে বৈশাখী মেলায় আয়োজন করা না হলেও এখানে আগের মতোই চাকমাদের বিজু উৎসব ও পূজা অর্চনার আয়োজন হয়ে থাকে। আর এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছর বসে অলিখিত বৈশাখী মেলা। কালের বিবর্তনে বৈশাখী মেলা নামটি লিখিতভাবে হারিয়ে গেলেও এখনো এটি স্থানীয়দের কাছে বৈশাখী মেলা নামেই বেশ পরিচিত। তাই দূর দূরান্ত থেকে উৎসব ও মেলা দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা। তবে কয়েকবছর ধরে উৎসব পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে গিয়ে মেলার আড়ালে এখানে কোটি টাকার জুয়ার আসর চলে বলে দাবি স্থানীয়দের। গেল বছর আর এই বছর ছাত্রসমাজ ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় জুয়া বিহীন মেলা দেখেছে এলাকাবাসী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরকে ঘিরে বিভিন্ন দোকানীরা নানা জিনিসে পসরা সাজিয়ে রেখেছে। একটু এগোলেই নাগরদোলা ও শিশুদের জন্য রাইডের ব্যবস্থা চোখে পড়ে। শিশুরা দল বেঁধে সেখানে খেলছে। এবার স্বাচ্ছন্দে মেলা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে এসেছে মানুষ। সবার চোখে-মুখে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ছাপ। মেলায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সচেতন নাগরিক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বিগত সময়ে জুয়ার আসরে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া তরুণ-যুবকেরা আসতো। জুয়া খেলার পাশাপাশি চলত রাতভর মাদকসেবন। তবে গত দুইবছর যাবত ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। মেলার ঐতিহ্য ফিরতে শুরু করেছে।
জানা যায়, এরআগে শনিবার রাতে শতবর্ষী বৈশাখী ও মহামুনি মেলায় জুয়া ও অশ্লীলতা বন্ধে এলাকাবাসী তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল ও বিক্ষোভ করে। পরে ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন আর এই আবেদনের প্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হালদার জানান, এখনো পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ কাজ করছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র মো. কামরুল হাসান জানান, মেলায় জুয়া ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে এলাকাবাসী। মেলার জুয়া বসানোর কোন সুযোগ নেই। যৌথ বাহিনী সার্বক্ষণিক মেলা পরিদর্শন করেছেন।