কোনরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রাঙ্গুনিয়ায় হঠাৎ করেই সিএনজি-অটোরিকশার ভাড়া বৃদ্ধি করে দিয়েছে চালকরা। এই নিয়ে সাধারণ যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করলে প্রশাসন চালক সমিতির নেতৃবৃন্দের ডেকে ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়ার হারও মানছে না চালকরা। উঠানামা ১০ টাকাসহ নির্ধারিত হারের চেয়ে অন্তত ৫-১০ টাকা করে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে যাত্রীদের অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাড়া মনিটরিং করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সুত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় ১৮টি সিএনজি অটোরিকশা সমিতি জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই নির্ধারিত ভাড়া থেকে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ কারো সাথে যোগাযোগ না করে নিজেদের সিদ্ধান্তে তাদের নৈরাজ্যে রাঙ্গুনিয়া জুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে সাধারণ যাত্রী ও চালকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডা যেন নিত্য ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ যাত্রীরা। উপজেলার মরিয়মনগর- গাবতল- পারুয়া- স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া সিএনজি অটোরিকশা চালক সমবায় সমিতিও একইভাবে ভাড়া বাড়ালে সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বরাবর ভাড়া বহাল রাখার দাবীতে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। পরিপ্রেক্ষিতে সিএনজি অটোরিকশা সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও ছাত্রদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন ইউএনও। বৈঠকে নূন্যতম ভাড়া নির্ধারণ করা হয় পাঁচ টাকা। এছাড়া দূরের গন্তব্যে পাঁচ টাকা ভাড়া বেশি নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন কর্তৃক ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেনা চালকেরা। তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে এমনকি জোরপূর্বক উঠানামা ১০টাকা হারে ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
সুলতান মাহমুদ নামে এক যাত্রী জানান, বাজার থেকে আমার বাড়ির দুরত্বে ৫০০ মিটার। প্রশাসন ৫টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার পরেও ভাড়া নিচ্ছে ১০টাকা।
রাঙ্গুনিয়া সর্বস্তর ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি মীর তাফসির জানান, তারা প্রশাসন কতৃক নির্ধারিত ভাড়া মেনে নিয়েছেন। প্রশাসন উঠানামা ভাড়া পাঁচ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু চালকেরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল। তারা যাত্রীদের সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ আচরণ করে চলেছে।
আমেনা বেগম নামে অন্য এক যাত্রী জানান, দূরের ভাড়া ঠিক থাকলেও উঠানামা ১০টাকা নিচ্ছে। টাকা দিতে না চাইলে খারাপ ব্যবহার করছে চালকেরা। কেউ প্রতিবাদ করে আবার তুচ্ছ বিষয় ভেবে অনেকেই বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন।
রোয়াজারহাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ইলিয়াস জানান, আজ আমি চৌমুহনী থেকে রোয়াজারহাট দুইবার যাতায়াত করেছি। দুইবারই আমার কাছ থেকে ১০ টাকা করে নিয়েছে। এটা ভাড়া নৈরাজ্য ছাড়া কিছুই নয়।
মরিয়মনগর চৌমুহনী সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি আবদুল মোনাফ জানান, আমরা প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া ভাড়া হিসেবে দূরের যাত্রায় ৫ টাকা বেশি নিচ্ছি। আর উঠানামা আগের মতো ৫ টাকা রয়েছে। তবে কেউ যদি বাড়তি ভাড়া দাবি করে সেক্ষেত্রে যাত্রীরা সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চালক সমিতির নেতৃবৃন্দদের সাথে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কেউ বাড়তি ভাড়া নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।