২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। উপজেলার ৩,২৪৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ২,১৪১ জন, যা পাসের হারে দাঁড়ায় ৬৫.৯৪ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ অর্জন করেছে মাত্র ৭৫ জন শিক্ষার্থী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ২৮টি স্কুল, ৪টি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এবং ১১টি মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তবে গত বছরের তুলনায় সবক্ষেত্রেই—পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার এবং জিপিএ-৫—হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে।
২০২৪ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৩,৬৬৭ জন, যার মধ্যে পাস করেছিল ২,৯৪২ জন (পাসের হার ৮০.২৩%) এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯২ জন। সেই তুলনায় চলতি বছর ফলাফল বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
স্কুলভিত্তিক ফলাফল: উত্থান-পতনের চিত্র
উপজেলার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক ফলাফল অর্জন করেছে, আবার কিছু স্কুলের ফলাফল ছিল বেশ হতাশাজনক।
উল্লেখযোগ্য সাফল্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলো:
সন্দ্বীপ আনন্দ পাঠশালা: পরীক্ষার্থী ৭৬ জন, সবাই পাস করেছে; জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ জন — উপজেলায় সর্বোচ্চ।
সাউথ সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়: পরীক্ষার্থী ১৭৩ জন, পাস ৯১ জন; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ জন।
সন্দ্বীপ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়: ১৮৫ জনের মধ্যে ১১৩ জন পাস করেছে; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ জন।
এ কে একাডেমি ও বাউরিয়া গোলাম খালেক একাডেমি: উভয় প্রতিষ্ঠানে ১১২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়; পাস করেছে ৮৮ জন করে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ জন করে।
হতাশাজনক ফলাফল পাওয়া স্কুলগুলো:
কালাপানিয়া চৌধুরী বিদ্যানিকেতন: পরীক্ষার্থী ১৬ জন, পাস মাত্র ৭ জন, জিপিএ-৫ কেউ পায়নি।
উড়িরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ১৪ জনের মধ্যে পাস করেছে ৬ জন, জিপিএ-৫ শূন্য।
ভোকেশনাল ও দাখিল পরীক্ষার ফলাফল
উপজেলার ৪টি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৮০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ৯৮ জন।
উল্লেখযোগ্য ফলাফল:
পূর্ব সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয় (ভোকেশনাল): ৭৮ জনের মধ্যে পাস করেছে ৪১ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন।
সাউথ সন্দ্বীপ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়: ৪৪ জনের মধ্যে ৩৭ জন পাস করলেও কেউ জিপিএ-৫ পায়নি।
১১টি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪৫৮ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ৩৫৫ জন পাস করেছে।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তি একমাত্র:
সন্দ্বীপ কারামতিয়া ফাজিল মাদ্রাসা: ৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৮ জন পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন।
শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, চলতি বছরের ফলাফল পতনের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী, করোনা পরবর্তী শিক্ষার ঘাটতি, পর্যাপ্ত ও যোগ্য শিক্ষকের অভাব, পর্যবেক্ষণের অভাব, এবং অভিভাবক ও বিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা এর মূল কারণ।
তবে ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখিয়েছে চমৎকার ফলাফল, যা প্রমাণ করে—নিয়মিত শ্রেণি-কার্যক্রম, শিক্ষকের মনোযোগ, এবং অভিভাবক সচেতনতা থাকলে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
সন্দ্বীপে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছে। যেখানে একটি বিদ্যালয় শতভাগ পাস ও সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ অর্জন করছে, অন্যদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান একেবারে নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে—সমন্বিত উদ্যোগ ও নজরদারির মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করার।