চট্টগ্রাম 11:42 am, Friday, 8 August 2025

সরকার প্রধানর কাছে অনুরোধ আর পোয়ারে চিকিৎসার ব্যবস্থা গরি দওন-গুলিবিদ্ধ সাইমের মা

সেদিন চলা (গত ৫ আগস্ট) বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সাইমের (২০) গুলি লাগা পায়ের ক্ষতস্থানে এখনো ব্যান্ডেজ করা। ডান হাটুর উপরের ক্ষতটা অনেক বড়। ব্যাথায় বিছানায় কাতরাচ্ছে সে।

পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নগরীর চমেক হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকরা অপারেশন করলেও এখনো সুস্থ হয়নি সে। সম্প্রতি চিকিৎসকরা জানান ক্ষত সারতে তার পায়ে আবারো অপারেশন করতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৩ লাখ টাকা কিন্তু সে টাকা যোগাড় করার সাধ্য নেই তার পরিবারের। ফলে বিনা চিকিৎসায় এখন বাড়িতে বিছানায় পড়ে আছে সাইম।

অথচ চলতি বছরের গত ১৭ আগস্ট শনিবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটির সদস্যগণ তাদের কর্মপন্থা নির্ধারন করতে আগামী রবিবার বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা উল্লেখ ছিলো। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সকল ছাত্র জনতা আহত হয়েছেন সরকারী হাসপাতালে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে এবং বেসরকারী প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমুহকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্র জনতার চিকিংসা বিল গ্রহন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিলো এবং প্রয়োজনে এ সকল বেসরকারী হাসপতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার সকল বিল সরকার বহন করবে মর্মেও জানানো হয়েছিলো।

জানতে চাইলে কাঁন্নাজড়িত কন্ঠে উপজেলার মেখল ইউনিয়ন পরিষদস্থ রহিমপুর গ্রামের রুহুল্লাপুর এলাকার বুধা গাজী বাড়ির দরিদ্র মো.সিরাজ ও গৃহিণী রাশেদা আকতার দম্পতির সন্তান আহত সাইম জানাচ্ছিল বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনে যোগদান থেকে তার বর্তমান শারিরিক অবস্থার কথাগুলো।
সেদিন হাটহাজারী পৌরসভার বাস স্টেশন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় সে।

শারিরিক পরিস্থিতি নিয়ে ছলছল চোঁখে সে জানায়, পরিবারের সহায়-সম্বল বলতে বসতঘরের জায়গাটুকু ছাড়া আদের তেমন কিছুই নেই। বাবার আয়ও খুব অল্প। আমি হাটহাজারী কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেছি। তবে টাকার অভাবে অনার্সে ভর্তি হতে পারিনি। সংসারে আয়ের জোগান দিতে বাজারে একটি দোকানে আপাতত চাকরি করছিলাম। ‘আমি ওইদিন হৃদয়ের টানেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বন্ধুদের সাথে বের হয়ে যাই। বসে থাকার উপায় ছিল না ওই দিন। গুলিটা আমার পকেটে থাকা মোবাইল ফোন ছিদ্র হয়ে পায়ের হাটুর উপরে ঢুকে হাড় ভেঙ্গে মাংস নিয়ে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।গুলি লাগার পর আমি সড়কে পড়ে যাই। ব্যাথায় জ্বলতেছিল। সাথে থাকা বন্ধুরা আমাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ২৫ দিন পর চিকিৎসকরা আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এবং বলেন পরবর্তীতে গিয়ে আবার দেখাতে। কিছুদিন পূর্বে পুনরায় হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক বলেন পায়ে আবার অপারেশন করা লাগবে। তারা ঠিকমতো কথাও বলেন না। আমার স্বপ্ন ছিলো অনার্সে ভর্তি হবো, ধীরে ধীরে লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি করে বাবা মা আর বোনের মুখে হাসি ফুটাবো কিন্তু আমার সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। তবে এখনও আমি স্বপ্ন দেখি, আমি আবার সুস্থ হয়ে দুই পায়ে উঠে দাঁড়াবো, হাটবো। কিন্তু টাকার অভাবে আমার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি আমার স্বপ্ন পুরনে সরকারের সহযোগিতা চাই। আমি সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে চাই। পঙ্গু হয়ে গেলে কেমনে চলবো।’

সাইমের বাবা পৌরসভার একটি প্রাইভেট ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড মো.সিরাজ বলেন, ‘আমার দুইটা মেয়ে একটা ছেলে। চাকরির টাকায় কোনো রকমে অনেক কস্ট করে এ সংসার চালাই। অনেক কস্ট করে এই পর্যন্ত এসেছি । একমাত্র ছেলে সাইমের স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন কিন্তু হঠাৎ একটা ঝড় সব স্বপ্ন ভেঙে দিলো। এখন ওর চিকিৎসা চালাবো কিভাবে এই চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারিনা।’

শাড়ির আচলে চোঁখ মুছে মা রাশেদা আকতার রবিবার বিকালের দিকে বলেন, ‘ছেলের পায়ে গুলি লাগার কথা শুনার পর মনে হয়েছিলো যেন আসমান ভেঙে আমার মাথায় পড়েছে। অভাব অনটনের সংসারের দুরাবস্থা। বিছনায় ব্যাথায় কাতরাচ্ছে ছেলেটা। তার উপযুক্ত চিকিৎসা করানোর মতো কোনো টাকা-পয়সা সামর্থ্য আমাদের নাই। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনুস স্যারের প্রতি আবেদন তিনি যেনো আমার ছেলেটারে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করে দেন।

সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী মোহাম্মদ এরশাদ উদ্দিন বলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়ে সাইম গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ বিছানায় পড়ে আছে। টাকার জন্য তার চিকিৎসা হবেনা এটা খুবই দুঃখজনক। আমি দায়িত্বশীলদের তার চিকিৎসা সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।

সমাজ সেবক সৈয়দ মিয়া প্রকাশ সৈয়দ মেম্বার জানান, বর্তমান সরকার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনে যারা আহত হয়েছিলেন তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার গ্রহন করবেন। কিন্তু সাইম আহত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত দায়িত্বশীল কেউ তার খোঁজ খবরও নেয়নি। আমরা দ্রুত সাইমের উপযুক্ত চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নবাবগঞ্জে গালিমপুর ইউপির গ্রাম পুলিশ আসলামের বিরুদ্ধে চুরি ও অনিয়মের অভিযোগ

সরকার প্রধানর কাছে অনুরোধ আর পোয়ারে চিকিৎসার ব্যবস্থা গরি দওন-গুলিবিদ্ধ সাইমের মা

Update Time : 09:45:59 am, Monday, 23 September 2024

সেদিন চলা (গত ৫ আগস্ট) বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সাইমের (২০) গুলি লাগা পায়ের ক্ষতস্থানে এখনো ব্যান্ডেজ করা। ডান হাটুর উপরের ক্ষতটা অনেক বড়। ব্যাথায় বিছানায় কাতরাচ্ছে সে।

পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নগরীর চমেক হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকরা অপারেশন করলেও এখনো সুস্থ হয়নি সে। সম্প্রতি চিকিৎসকরা জানান ক্ষত সারতে তার পায়ে আবারো অপারেশন করতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৩ লাখ টাকা কিন্তু সে টাকা যোগাড় করার সাধ্য নেই তার পরিবারের। ফলে বিনা চিকিৎসায় এখন বাড়িতে বিছানায় পড়ে আছে সাইম।

অথচ চলতি বছরের গত ১৭ আগস্ট শনিবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটির সদস্যগণ তাদের কর্মপন্থা নির্ধারন করতে আগামী রবিবার বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা উল্লেখ ছিলো। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সকল ছাত্র জনতা আহত হয়েছেন সরকারী হাসপাতালে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে এবং বেসরকারী প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমুহকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্র জনতার চিকিংসা বিল গ্রহন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিলো এবং প্রয়োজনে এ সকল বেসরকারী হাসপতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার সকল বিল সরকার বহন করবে মর্মেও জানানো হয়েছিলো।

জানতে চাইলে কাঁন্নাজড়িত কন্ঠে উপজেলার মেখল ইউনিয়ন পরিষদস্থ রহিমপুর গ্রামের রুহুল্লাপুর এলাকার বুধা গাজী বাড়ির দরিদ্র মো.সিরাজ ও গৃহিণী রাশেদা আকতার দম্পতির সন্তান আহত সাইম জানাচ্ছিল বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনে যোগদান থেকে তার বর্তমান শারিরিক অবস্থার কথাগুলো।
সেদিন হাটহাজারী পৌরসভার বাস স্টেশন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় সে।

শারিরিক পরিস্থিতি নিয়ে ছলছল চোঁখে সে জানায়, পরিবারের সহায়-সম্বল বলতে বসতঘরের জায়গাটুকু ছাড়া আদের তেমন কিছুই নেই। বাবার আয়ও খুব অল্প। আমি হাটহাজারী কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেছি। তবে টাকার অভাবে অনার্সে ভর্তি হতে পারিনি। সংসারে আয়ের জোগান দিতে বাজারে একটি দোকানে আপাতত চাকরি করছিলাম। ‘আমি ওইদিন হৃদয়ের টানেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বন্ধুদের সাথে বের হয়ে যাই। বসে থাকার উপায় ছিল না ওই দিন। গুলিটা আমার পকেটে থাকা মোবাইল ফোন ছিদ্র হয়ে পায়ের হাটুর উপরে ঢুকে হাড় ভেঙ্গে মাংস নিয়ে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।গুলি লাগার পর আমি সড়কে পড়ে যাই। ব্যাথায় জ্বলতেছিল। সাথে থাকা বন্ধুরা আমাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ২৫ দিন পর চিকিৎসকরা আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এবং বলেন পরবর্তীতে গিয়ে আবার দেখাতে। কিছুদিন পূর্বে পুনরায় হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক বলেন পায়ে আবার অপারেশন করা লাগবে। তারা ঠিকমতো কথাও বলেন না। আমার স্বপ্ন ছিলো অনার্সে ভর্তি হবো, ধীরে ধীরে লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি করে বাবা মা আর বোনের মুখে হাসি ফুটাবো কিন্তু আমার সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। তবে এখনও আমি স্বপ্ন দেখি, আমি আবার সুস্থ হয়ে দুই পায়ে উঠে দাঁড়াবো, হাটবো। কিন্তু টাকার অভাবে আমার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি আমার স্বপ্ন পুরনে সরকারের সহযোগিতা চাই। আমি সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে চাই। পঙ্গু হয়ে গেলে কেমনে চলবো।’

সাইমের বাবা পৌরসভার একটি প্রাইভেট ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড মো.সিরাজ বলেন, ‘আমার দুইটা মেয়ে একটা ছেলে। চাকরির টাকায় কোনো রকমে অনেক কস্ট করে এ সংসার চালাই। অনেক কস্ট করে এই পর্যন্ত এসেছি । একমাত্র ছেলে সাইমের স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন কিন্তু হঠাৎ একটা ঝড় সব স্বপ্ন ভেঙে দিলো। এখন ওর চিকিৎসা চালাবো কিভাবে এই চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারিনা।’

শাড়ির আচলে চোঁখ মুছে মা রাশেদা আকতার রবিবার বিকালের দিকে বলেন, ‘ছেলের পায়ে গুলি লাগার কথা শুনার পর মনে হয়েছিলো যেন আসমান ভেঙে আমার মাথায় পড়েছে। অভাব অনটনের সংসারের দুরাবস্থা। বিছনায় ব্যাথায় কাতরাচ্ছে ছেলেটা। তার উপযুক্ত চিকিৎসা করানোর মতো কোনো টাকা-পয়সা সামর্থ্য আমাদের নাই। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনুস স্যারের প্রতি আবেদন তিনি যেনো আমার ছেলেটারে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করে দেন।

সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী মোহাম্মদ এরশাদ উদ্দিন বলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়ে সাইম গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ বিছানায় পড়ে আছে। টাকার জন্য তার চিকিৎসা হবেনা এটা খুবই দুঃখজনক। আমি দায়িত্বশীলদের তার চিকিৎসা সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।

সমাজ সেবক সৈয়দ মিয়া প্রকাশ সৈয়দ মেম্বার জানান, বর্তমান সরকার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনে যারা আহত হয়েছিলেন তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার গ্রহন করবেন। কিন্তু সাইম আহত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত দায়িত্বশীল কেউ তার খোঁজ খবরও নেয়নি। আমরা দ্রুত সাইমের উপযুক্ত চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।