সীতাকুণ্ডে ইসকন ও ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত তিন সাংবাদিককে রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠেছে আওয়ামী দোসরদের একটি চক্র। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে রাসুল (সা.) এর অবমাননাকারী আসাদ নুরের হাতে কোরআনের আয়াত লেখা জ্বলন্ত সিগারেটের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে। অভিযুক্ত বিজয় দেবনাথ পোস্টটির ক্যাপশনে লিখেছিলেন “সর্বদা সত্য ও সঠিকটা বলতে পারা নির্ভিক সৈনিক আসাদ নুর।” পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হলে মুসলিম ছাত্র-জনতার মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে ছাত্র সমন্বয়কদের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ জনতা বিজয় দেবনাথকে আটক করে সীতাকুণ্ড থানায় সোপর্দ করে। তার মোবাইল ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি একাধিক ইসলামবিদ্বেষী মেসেঞ্জার গ্রুপে সক্রিয় ছিলেন। তবে গ্রেপ্তারের পর দ্রুত তাকে বেশিরভাগ গ্রুপ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। শুধু “সীতাকুণ্ড সনাতন ঐক্য সংগঠন” নামের একটি গ্রুপে তার উপস্থিতি থেকে যায়।
গ্রেপ্তারের একদিন পর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র সমন্বয়করা মেসেঞ্জার গ্রুপে ইসকনের জঙ্গি তৎপরতার তথ্য তুলে ধরেন। শনিবার (১০ আগস্ট) এলকে সিদ্দিকী স্কয়ারের সামনে আয়োজিত ওই সম্মেলনে সীতাকুণ্ডের ছাত্র সমন্বয়ক নাফিস হাসান অভিযুক্ত সাংবাদিক সৌমিত্র চক্রবর্তী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ও লিটন কুমারের বিরুদ্ধে ইসকন সম্পৃক্ততা ও দেশবিরোধী তৎপরতার অভিযোগ করেন। তার বক্তব্য দৈনিক আমার দেশ সহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
বক্তব্য প্রকাশের পরপরই অভিযুক্ত সাংবাদিকদের বাঁচাতে মাঠে নামে আওয়ামী দোসরদের একটি চক্র। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটিকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে প্রচারণা চালাতে থাকে। এমনকি সোমবার (১২ আগস্ট) সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের নাম ভাঙিয়ে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
প্রতিবাদ সভায় অভিযুক্ত সাংবাদিকরা উপস্থিত না থাকলেও তাদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী আমি-ডামির এমপি মামুনের পিএস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দৈনিক দিনকাল-এর বিরুদ্ধে মামলার বাদি ‘বিদ্যুৎচোর’ খ্যাত সেকান্দর হোসাইন। এছাড়া বক্তব্য দেন ২০১৩ সালে তারেক রহমানের জন্মপরিচয় নিয়ে কটূক্তিকারী ফোরকান আবু।
ইসকন ও দেশবিরোধী তৎপরতার অভিযোগে অভিযুক্তদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করছেন অনেকেই। আমার দেশ পত্রিকার পেইজে এ নিউজটি শেয়ার করেছে এক হাজার তিনশ জন, মন্তব্য করেছেন তিনশ ষোল জন এবং রিয়েক্ট করেছেন প্রায় ১০ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী। সীতাকুণ্ডের খায়রুল নামে এক ব্যক্তি তিন সাংবাদিকের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদের ছবি পোস্ট করলে সেখানে জামায়াত নেতা এপিপি এডভোকেট হোসাইন মোহাম্মদ আশরাফ মন্তব্য করেছেন ‘‘ইসকন প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়।”
ওমর ফারুক রাশেদ নামে একজন আমার দেশ পত্রিকার পেইজে দেওয়া সংবাদের মন্তব্যে লিখেছেন, ‘‘সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন ও তার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।’’ সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব সুলাইমান মেহেদী হাসান পোস্ট দিয়েছেন “ইসকন সম্পৃক্ততা ও দেশবিরোধী তৎপরতার অভিযোগ ওঠা তিন সাংবাদিকের পক্ষে কারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন, প্রচার করছেন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন এ বিষয়ে সচেতন মহলের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কামনা করছি।”