চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘মিডিয়া ফর ক্লিন এয়ার এন্ড রিনিউয়েবল এনার্জি’ বিষয়ক একটি সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে পরিবেশ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে এই আয়োজনটি সম্পন্ন করে উই ক্যান কক্সবাজার, একটি যুব-নেতৃত্বাধীন পরিবেশ বান্ধব সংগঠন। এতে সার্বিক সহযোগীতা করেন ইয়ুথ ফর কেয়ার ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা দ্য আর্থ।
এতে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক সংগঠনের কার্যক্রম ও সীতাকুণ্ড নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সীতাকুণ্ডের মানুষ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া এখানকার বাসিন্দারা দিনদিন উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে। কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। আমরা জনসাধারণকে সচেতনতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করব। বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি আমরা গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশে সহযোগীতা করব নানা তথ্য দিয়ে। সেইসাথে কিভাবে সীতাকুণ্ডে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা যায় তা নিয়েও কাজ করব। পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় কাটা, বালু উত্তোলন বন্ধ, বন ধ্বংস এসব কর্মকাণ্ড কারা করছে তার তালিকা করে আমরা সরকারকে সহযোগীতা করব। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা জরুরী
সাংবাদিকরা মুক্ত আলোচনায় জানান, সীতাকুণ্ডে কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। আগের মতোই পরিবেশ দূষণ করে মহাসড়কের পাশে ডাম্পিং রাখা হয়েছে। এতে কৃষির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়াও জাহাজ ভাঙা শিল্প সীতাকুণ্ডের জন্য একসময় অভিশাপ ছিলো। এখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। ইয়ার্ডগুলো গ্রীণ হচ্ছে। আমরা আশাবাদী।
তারা আরও জানান, উপকূলে এখন আর সবজি চাষ হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চাষাবাদ কমছে। কারণ বেড়িবাঁধ এলাকায় জমির লবণাক্ততা অনেক বেড়ে গেছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে নিন্ম এলাকা ডুবে যাচ্ছে। বারবার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তারা কৃষি ছাড়ছে। অনেকে সরকারী প্রকল্পে বাপ-দাদার ভিটা দিয়ে নিজেরা উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে। এখানে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। নদী ভাঙন হচ্ছে, রাঘববোয়ালরা কিছু অপ-সাংবাদিকের সহযোগীতায় বন্য প্রাণী, উপকূলীয় বন, সরকারী জমি, পাহাড়, সমুদ্র সব শেষ করে দিচ্ছে। জিপিএইচ ইস্পাতের দূষণে সেখানকার নারীর গর্ভ ক্ষমতা হারাচ্ছে। প্রতিবার বন্যা হচ্ছে। অনাবৃষ্টি, গাছপালা নিধন, বনায়ন ধ্বংস, অতিগরম, অসময়ে শীত ও বৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হচ্ছে। কলা, ডাবসহ অনেক দেশী ফল এখন বিলুপ্ত। আগামীর প্রজন্মকে বাসযোগ্য পৃথিবী দিতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তৈরী হতে হবে।
ফ্যাসিবাদমুক্ত সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের আহবায়ক মোঃ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ইমতিয়াছ ইফতির সঞ্চালনায় এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বিএসসি, সদস্য সচিব সুলাইমান মেহেদী হাসান, সদস্য হাকিম মোল্লা, কামরুজ্জামান, ইলিয়াছ ভূঁইয়া, ফারহান সিদ্দিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।
মূল সেশনটি পরিচালনা করেন উই ক্যান কক্সবাজার-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক। সহযোগী হিসেবে ছিলেন, চট্টগ্রাম সমন্বয়ক ইফতিয়াজ উদ্দিন ইফতি, ট্রেজারার শেখ ওয়াহিদা রহমান ঐশী এবং সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের পরিবেশবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশে উৎসাহ দিতে ও তাদের অবদানকে সম্মান জানাতে প্রেস ক্লাবের ১০ জন প্রতিনিধিকে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।