চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মাজার শরীফ, মসজিদ-মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলা, দান বাক্স ভাংচুর ও এতিমখানার মালামাল লুটকারী খন্দকার শওকত আলী, খন্দকার মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ মিনহাজ গংদের বিচার ও শাস্তির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মসজিদ, মাজার শরীফ ওয়াকফ এস্টেট ও এলাকাবাসী।
রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের কালুশাহ্ নগর এর উত্তর সলিমপুরস্থ হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মাজার প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবী করেন হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির মোতাওয়াল্লি আলহাজ্ব সিরাজ-উদ-দ্দৌলা সওদাগর।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মাজার শরীফ সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় জনগণ একটি সংবিধান তথা গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে পদাধিকার বলে সভাপতি অন্তর্ভুক্ত করে মনোনয়নের মাধ্যমে কার্যকরী কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে মাজার শরীফসহ কমপ্লেক্স পরিচালনা করছেন। যাহা প্রতি দুই বছর অন্তর নিয়মিতভাবে ওয়াকফ অফিস হতে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে আসছে। উক্ত কার্যকরী কমিটির সততা, দক্ষতা ও ন্যায় নিষ্ঠতার ফলে বর্তমানে হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মসজিদ, মাজার ওয়াকফ এস্টেট (ইসি নং ১৭৭৪৩) অধীনে ৮টি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, মাজার কমিটির উত্তোরোত্তর সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং মাজার শরীফের নজরানার প্রতি লোভের বশবর্তী হয়ে কথিত স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থে খন্দকার সিরাজ-উদ-দ্দৌলা এবং খন্দকার লুৎফুল কবিরকে দাঁড় করিয়ে হযরত ‘কালুশাহ্’ নাম বিকৃতি করে “কালু ফকির” উল্লেখ্য তার ওয়ারিশ সেজে একটি ভূয়া ওয়াকফ এস্টেট কমিটি গঠন করে। যাহার ইসি নং-১৫৮৩৩৯। মাজার শরীফে জমির মালিকানা এবং মাজার পরিচালনার ও তত্ত্বাবধানের দাবী করে তার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার উদ্ভব হয়। জনৈক খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গং ভূয়া মোতাওয়াল্লি সেজে বিভিন্ন মামলা সম্বন্ধে ভুল তথ্য প্রদান করে। মরহুম আব্দুল কুদ্দুস গত ২৫ অক্টোবর ১৯৯৪ ওয়াকফ স্মারক নং-১৭৯৮ চট্টগ্রাম মূলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতিসহ ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি যা হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মসজিদ, মাজার ওয়াকফ এস্টেট নামে যার ইসি নং-১৭৭৪৩ অনুমোদন লাভ করে। এরপর গত ১ নভেম্বর ২০০৭ সালের ওয়াকফ আদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতিসহ ১৯ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদিত কমিটি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পদাধিকার বলে সভাপতি রেখে বিগত ১৩/০১/২০২১ সালে ৩৯ জন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন হতে অনুমোদন প্রদান করে। বর্তমানে উক্ত কমিটির মাধ্যমে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে তথাকথিত খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গংদের মোতাওয়াল্লি দাবী করার কোন ধরনের আইনগত অধিকার নেই। চট্টগ্রাম তৃতীয় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ২৫২/৯০ ও ২৫/৯২ নং দুইটি মামলায় গত ১৮ নভেম্বর ১৯৯৩ সালের রায় মতে তাদের দাবী অগ্রাহ্য করে আমাদের পক্ষে তথা হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মসজিদ ও মাজার ওয়াকফ এষ্টেটকে রায় দেয়। খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গংদের দাবীকৃত ইসি নং-১৫৮৩৯ এর কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ, বে-আইনি, ক্ষমতা বহির্ভূত ও অকার্যকর বলে আদালত রায় প্রদান করেন। রায়ের বিরুদ্ধে খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গং আমমোক্তার দাবী করে ১২০৭ ও ১২৫৯ নং সিভিল রিভিশন মামলা করলে হাইকোর্ট গত ২৬ এপ্রিল ৯৯ রুল এবং স্থগিতাদেশ দেন। এই আদেশ দেখিয়ে ওয়াকফকে ভূল বুঝিয়ে গত ২২ জুলাই ১৯৯৯ সালে ওয়াকফ প্রশাসন অফিস থেকে ভূয়া আদেশ হাসিল করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে আমাদের সাবেক মোতাওয়াল্লি মরহুম আবদুল কুদ্দুস হাইকোর্টের ২৯৯৯/৯৯ রিট পিটিশন করে স্থগিতাদেশ পান। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত বেঞ্চ বে-আইনিভাবে গত ৬ নভেম্বর ২০০০ সালে আদেশে রিট পিটিশন খারিজের আদেশ রহিত করে রিট মামলা পুনঃশুনানির জন্য হাইকোর্টে পাঠায়। যেহেতু ৪৪১ নং সিভিল আপিল বর্তমানে হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় আছে সুতরাং ওই শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এই আদেশ এখনও বলবৎ আছে। মাজার পরিচালনার স্বত্ব নিয়ে যে দেওয়ানী মোকদ্দমায় নিম্ন এবং আপিল আদালতে অত্র কমিটির পক্ষে রায় ও ডিগ্রী দেয়। যার বিরুদ্ধে ১২০৭ ও ১২৫৯ নং সিভিল রিভিশন মোকদ্দমা হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওয়াকফ অফিস অভিযোগ কারীর স্বত্ব বিষয়ে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না জানালেও তারা তথ্য গোপন করে বানোয়াট অভিযোগে সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৭ই এপ্রিল তারিখে আনুমানিক দুপুর আড়াই টায় কথিত মোতাওয়াল্লি দাবীদার খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গং চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সহকারে মাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি দমকি দিয়ে জোরপূর্বক অফিস থেকে বের করে দিয়ে অফিস ও দান বাক্স ভাংচুর চালায়। এতে মাজার মসজিদ ও এতিমখানার চলমান খরচের জন্য সংরক্ষিত টাকা-পয়সা ও দান বাক্সে দানকৃত অর্থ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা লুটপাট করে। শুধু তাই নয়, কথিত সন্ত্রাসীরা গডফাদার খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গং গত ০৭/০৪/২৫ হতে ১২/০৪/২৫ পর্যন্ত দীর্ঘ এক সপ্তাহে মাজার, মসজিদ ও এতিমখানার দানকৃত অর্থ, গরু, ছাগল ও মুরগী পর্যন্ত আত্মসাৎ করে। দীর্ঘ এক সপ্তাহে দানকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের খাবার ও দৈনিক হাজিরা অনুসারে আত্মসাৎকৃত অর্থ ব্যয় করেছে। যা আমাদের কমপ্লেক্সের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে সংরক্ষিত আছে। দীর্ঘ এক সপ্তাহে মাজারে আগত ভক্ত কালুশাহ্ নগর এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হেনস্তা করেছে। শুধু তাই নয় খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী তার কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ে ছেলে মিনহাজকে দিয়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা মাজার কমপ্লেক্সের অফিস ও মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার সেমিনার কক্ষ দখল করে পবিত্র স্থানে ইয়াবা-গাঁজাসহ মাদক সেবনের আসর বসাতো। এতে তাদের আরো সহযোগীরা অংশগ্রহণ করতো। ফলে কালুশাহ্ নগর এলাকাবাসী, মুসল্লিবৃন্দ, আগত আশেক-ভক্তবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান। উক্ত খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গংদের সন্ত্রাসী আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে এর প্রতিকার চেয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সহযোগীতা কামনা করে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) কমপ্লেক্স দখলদার খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গংদের থেকে উদ্ধার করে কমপ্লেক্স এর মোতাওয়াল্লি আলহাজ্ব সিরাজ-উদ-দৌলা সওদাগরকে পূর্বের ন্যায় যথারীতি দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানান। উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত ০৮/০৪/২৫ তারিখে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়। যার জিডি নং-৩৬৮।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হযরত খাজা কালুশাহ্ রহঃ কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি আবু ছালেহ, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সেলিম আকবর, সলিমপুর বিএনপি সাবেক সভাপতি আবুল হাশেম, সলিমপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ আব্দুর রহিম, সীতাকুণ্ড তাতী দল নেতা শাহিদুর রহমান, হযরত খাজা কালুশাহ্ রহঃ সুন্নিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কালামসহ এলাকাবাসী।