প্রমত্তা মেঘনার তীব্র ভাঙনের মুখে সন্দ্বীপ উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচর। সন্দ্বীপের এ ইউনিয়নে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। সত্তর দশকে জেগে উঠে এ ইউনিয়নটি। ১৯৮৫ সালে উড়িরচরে ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়িরচরের মানুষের পাশে দাঁড়ান।
গত চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে উড়িরচর ভাঙলেও বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষে আশার বাণী শুনালেও কোন সুফল পায়নি উড়িরচরবাসী। বর্তমানে চলমান তীব্র ভাঙন অব্যাহত থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই উড়িরচর অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে।
সূত্রমতে ইতোমধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট কৃষি জমি সহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে নব্বয়ের দশক থেকে । চারদিকে ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। এভাবে আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে উড়িরচর। গত ৬ মাসে অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়িসহ বহু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ অন্যত্র বসতি গড়ার চেষ্টা করছেন। দ্রুত নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি নদী পাড়ের মানুষের।
সরেজমিন দেখা গেছে, ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেঘনার তীব্র স্রোতে ভাঙছে নদীর তীর। ইতোমধ্যে ভাঙনের কবলে বিলীন হয়েছে উড়িরচর সাব পোস্ট অফিস ও উড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের ভবন। ইউপি ভবন ভেঙে যাবার পর এখন আশ্রয়ান প্রকল্পে ইউপি’র কার্যক্রম চলছে। এখন তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে কলোনী বাজার, মোস্তানসের বিল্ল্যাহ আশ্রয়ন প্রকল্প, দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান দাখিল মাদরাসা, উড়িরচর জুনিয়র হাইস্কুল ও শাহ বাঙ্গালী আশ্রয়ন প্রকল্প। যদি এখনই কার্যকার কোন ব্যবস্হা না নেয়া যায় তাহলে এগুলোও নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
গত বছর ১৫ নভেম্বর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ মালিক উড়িরচর সরেজমিন দেখার পর সন্দ্বীপে অনুষ্ঠিত সুধি সমাবেশে বলেন উড়িরচরে খুব দ্রুত ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্লক বেড়িবাঁধ নির্মান করা হবে। মন্ত্রীর সে ঘোষণার ১ বছর হতে চলল কিন্তু বাস্তবে কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
উড়িরচরের বাসিন্দা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন পারভেজ বলেন আমি জম্মের পর থেকে উড়িরচরের ভাঙন দেখছি। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আমরা ৫ বার বসতি পরিবর্তন করছি।
উড়িরচরের বাসিন্দা চট্টগ্রাম কলেজের অনার্সের ছাত্র মোঃ কারিম হোসাইন বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ১৯৮৫ সালে আমার বাবার উড়িরচরেই দেখা হয়েছিল। প্লিজ, মা উড়িরচরের অসহায় মানুষকে বাঁচাতে ভাঙন রোধে আপনার হস্তক্ষেপ চাই।
৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ভাঙ্গন রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উড়িরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহিমের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সম্রাট খীসা বলেন প্রমত্ত মেগনার তীব্র স্রোত সন্দ্বীপ চ্যানেলের জোয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে উড়িরচর হয়ে নোয়াখালী যাচ্ছে। প্রবল ধাক্কার কারনে মুলত ভাঙন মারাত্নক আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি এবং ব্যবস্হা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করেছি। বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।