চট্টগ্রাম 11:00 pm, Thursday, 3 July 2025

সাংবাদিক জাহেদের জবরদখলে সীতাকুণ্ড কামিল মাদ্রাসার দোকান

সীতাকুণ্ড কামিল এমএ মাদ্রাসার মালীকানাধীন মাদ্রাসা মার্কেটের দোকান দীর্ঘ ৮ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন সাংবাদিক জাহেদুল আনোয়ার। যিনি রাতের ভোটের এমপি দিদারুল আলমের প্রভাব খাটিয়ে ২০১৭ সালে দোকানটি দখলে নেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পালিয়ে গেলে আত্মগোপনে চলে যান এমপি দিদার। কিন্তু বহাল তবিয়তে রয়ে যান তার সহযোগী জাহেদুল আনোয়ার। শুধু মার্কেটের দোকানই নয় তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভূমিদস্যুতার অভিযোগও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সীতাকুন্ড পৌর সদরের ব্যয়বহুল ও ব্যস্ততম এলাকায় ত্রিতল বিশিষ্ট মাদ্রাসা মার্কেট বিগত জোট সরকারের আমলে নির্মিত হয়। সে সময় মার্কেটের নিচ তলার ১৬টি দোকানের সবকয়টি ভাড়া হয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নিলে জাহেদুল আনোয়ার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি দোকান চেয়ে বসেন। তখন কোন দোকান খালি না থাকায় কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করলে জাহেদ মার্কেটের পিছনে সেপটিক ট্যাংকের (পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা) ওপর জোরপূর্বক দোকান করার ঘোষণা দেন। এসময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে এমপি দিদার মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাহমুদুল হককে সেপটিক ট্যাংকের ওপর জাহেদের দোকান নির্মাণে বাধা না দিতে নির্দেশ দেন। বাধ্য হয়ে চুপসে যান অধ্যক্ষ মাহমুদুল হক।

মাদ্রাসা সূত্র জানায়, মাহমুদুল হককে বাধ্য করার পর মাদ্রাসা মার্কেটের প্ল্যান বহির্ভূত জায়গায় সেই সেপটিক ট্যাংকের ওপরই দোকান নির্মাণ করে জাহেদ। এরপর ১  জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে দেড়শ টাকার রিভিনিউ স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক একটি ভাড়া চুক্তিনামা করে নেয়া হয়। যেখানে নামমাত্র ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৪শ টাকা। এই ৪শ টাকাও সাত থেকে আট মাস বকেয়া রেখে ইচ্ছেমত পরিশোধ করতেন জাহেদ।

দোকানটির ভাড়া চুক্তিনামায় কাপড়, ইলেকট্রিক, ফার্মেসী, ষ্টেশনারী ও কুলিংকর্ণার জাতীয় ব্যবসার উল্লেখ থাকলেও ৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এমপি দিদার গ্রুপের অফিস হিসাবেই ব্যবহার করা হত। উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ সকল নেতার গোপন আড্ডাস্থল ছিল এ দোকান। এমনকি আওয়ামী পুলিশ অফিসারদেরও আসর বসত জাহেদের দোকান কাম আস্তানায়। এখানে বসে বিভিন্ন সময় পুলিশের কাছে শিবির নেতাদেরকে চিহ্নিত করে দিত জাহেদ। এরকম একটি ঘটনায় মাদ্রাসা মার্কেটে দাঁড়িয়ে পশ্চিম পাশের হিফজখানা থেকে শিবিরের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৩জন শীর্ষ দায়িত্বশীলকে গ্রেফতার করান জাহেদুল আনোয়ার।

সূত্র জানায়, দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার পরিচয়ে এমপি দিদারের সাথে সখ্যতা থেকে সহযোগী হয়ে ওঠেন জাহেদ। এক সময় এর প্রভাবে এ দোকানে বসেই ভূমি দস্যুদার মত অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার একাধিক মামলা রয়েছে। সীতাকুণ্ডের এক প্রবাসী বিএনপি নেতার জায়গা জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রী স্বৈরাচারের আমলে পরপর ৪টি মামলা করেন। হোসনে আরা নামের ওই নারী জানিয়েছেন ২০২১ সাল থেকে তার জায়গাটি জোরপূর্বক দখলে নিতে জাহেদের নেতৃত্বে একটি চক্র আমাকে সীমাহীন হয়রানি করেছে। এমনকি আমার বাড়ির সামনে সিসি ক্যামরা বসিয়ে আমাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। এতে আমি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে এক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য ভারত চলে যায়। এর মধ্যে এমপি দিদারের প্রভাব খাটিয়ে জাহেদ তার ওই চক্রটি দিয়ে আমার জায়গা দখল করিয়ে দেয়।

অপর এক ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখলের অভিযোগে একটি মামলা ও তাকে হয়রানির অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা হয় জাহেদের বিরুদ্ধে। মামলার বাদি মুক্তিযোদ্ধা নজর আলী বলেন, জাহেদের চাচাদের কাছ থেকে আমার ক্রয়কৃত একটি জায়গার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসে মামলা করে জাহেদ। সেসময় এসিল্যান্ড আশরাফুল আলমকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাব দেখিয়েও তার পক্ষে রায় নিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টান জাহেদ। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে গত ১২ অক্টোবর গোপনে মামলার রায় নিয়ে নেন। অথচ ২১ অক্টোবর মামলাটির শুনানীর দিন ধার্য ছিল।

এদিকে জাহেদের এমন কর্মকান্ডে রীতিমত ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে ওঠেছিলেন খোদ সীতাকুন্ডের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম আল মামুন। তিনি স্বৈরাচারের সর্বশেষ আমি-ডামির নির্বাচনে এমপি হয়ে মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষের কাছে ফোন দিয়ে বলেন, মাদ্রাসা মার্কেটের সেপটিক ট্যাংকের ওপর কোন দোকান থাকতে পারবেনা । তিন দিনের মধ্যে তা সরিয়ে দিবেন। কিন্তু এর একদিন পর মামুনের পিএস আসলাম অধ্যক্ষকে জানান, সেপটিক ট্যাংকের ওপর গড়ে তোলা দোকানটি সরাতে হবে না। বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য অধ্যক্ষ মামুনকে পুণরায় ফোন দিলে মামুনও দোকান সরানো লাগবেনা বলে জানান। পরে খোঁজ নিয়ে অধ্যক্ষ জানতে পারেন, আমি-ডামির উপজেলা চেয়ারম্যান রাজুকে দিয়ে মামুনকে ম্যানেজ করেছেন জাহেদ।

অপরদিকে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এবং অধ্যক্ষকে বাধ্য করে লেখা সেই চুক্তিনামার মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও ৩ বছর আগে। এরপর হতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দোকান ছেড়ে দিতে বারংবার তাগাদা দিলেও দোকান ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দেয় জাহেদ। এমনকি ৫ আগস্টের পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অসংখ্যবার দোকান ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু জাহেদ উল্টো পূর্বদেশ পত্রিকায় নিউজের ভয়-ভীতি দেখিয়ে অধ্যক্ষের কথায় কর্ণপাত করছেন না। এমনকি আগস্টের পর কোন ভাড়াও পরিশোধ করেননি জাহেদ।

এসব বিষয়ে মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাওলানা ওসমান গণি বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকারের সময় এমপি দিদারের হস্তক্ষেপে জোরপূর্বক সেপটিক ট্যাংকের ওপর দোকান নির্মাণ করে জাহেদ। এমনকি কয়েক বছর আগে দোকানটি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দিঘীর ওপর বর্ধিত করে। এতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জেলা পরিষদের কাছে হেনস্তার শিকার হতে হয়। আবার জাহেদ নামমাত্র ৪০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় জোড়পূর্বক চুক্তি করিয়ে নেয় তাও যখন ইচ্ছে তখন পরিশোধ করেন।

তিনি বলেন, চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়েছে প্রায় তিন বছর। বারংবার দোকান ছাড়তে বললেও ক্ষমতার জোর দেখিয়ে দখলে রেখেছে দোকানটি। ৫ আগস্টের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আগস্টের পর এ পর্যন্ত ভাড়াও পরিশোধ করেননি জাহেদ। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চায় তিনি এখনই দোকান ছেড়ে দিবেন যোগ করেন অধ্যক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে জাহেদুল আনোয়ার কে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও প্রত্যুত্তর দেননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাইফ-এর উদ্যোগে ইউএনও রিগ্যান চাকমাকে হৃদয়বিদারক বিদায়ী সংবর্ধনা

সাংবাদিক জাহেদের জবরদখলে সীতাকুণ্ড কামিল মাদ্রাসার দোকান

Update Time : 11:03:28 pm, Saturday, 23 November 2024

সীতাকুণ্ড কামিল এমএ মাদ্রাসার মালীকানাধীন মাদ্রাসা মার্কেটের দোকান দীর্ঘ ৮ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন সাংবাদিক জাহেদুল আনোয়ার। যিনি রাতের ভোটের এমপি দিদারুল আলমের প্রভাব খাটিয়ে ২০১৭ সালে দোকানটি দখলে নেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পালিয়ে গেলে আত্মগোপনে চলে যান এমপি দিদার। কিন্তু বহাল তবিয়তে রয়ে যান তার সহযোগী জাহেদুল আনোয়ার। শুধু মার্কেটের দোকানই নয় তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভূমিদস্যুতার অভিযোগও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সীতাকুন্ড পৌর সদরের ব্যয়বহুল ও ব্যস্ততম এলাকায় ত্রিতল বিশিষ্ট মাদ্রাসা মার্কেট বিগত জোট সরকারের আমলে নির্মিত হয়। সে সময় মার্কেটের নিচ তলার ১৬টি দোকানের সবকয়টি ভাড়া হয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নিলে জাহেদুল আনোয়ার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি দোকান চেয়ে বসেন। তখন কোন দোকান খালি না থাকায় কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করলে জাহেদ মার্কেটের পিছনে সেপটিক ট্যাংকের (পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা) ওপর জোরপূর্বক দোকান করার ঘোষণা দেন। এসময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে এমপি দিদার মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাহমুদুল হককে সেপটিক ট্যাংকের ওপর জাহেদের দোকান নির্মাণে বাধা না দিতে নির্দেশ দেন। বাধ্য হয়ে চুপসে যান অধ্যক্ষ মাহমুদুল হক।

মাদ্রাসা সূত্র জানায়, মাহমুদুল হককে বাধ্য করার পর মাদ্রাসা মার্কেটের প্ল্যান বহির্ভূত জায়গায় সেই সেপটিক ট্যাংকের ওপরই দোকান নির্মাণ করে জাহেদ। এরপর ১  জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে দেড়শ টাকার রিভিনিউ স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক একটি ভাড়া চুক্তিনামা করে নেয়া হয়। যেখানে নামমাত্র ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৪শ টাকা। এই ৪শ টাকাও সাত থেকে আট মাস বকেয়া রেখে ইচ্ছেমত পরিশোধ করতেন জাহেদ।

দোকানটির ভাড়া চুক্তিনামায় কাপড়, ইলেকট্রিক, ফার্মেসী, ষ্টেশনারী ও কুলিংকর্ণার জাতীয় ব্যবসার উল্লেখ থাকলেও ৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এমপি দিদার গ্রুপের অফিস হিসাবেই ব্যবহার করা হত। উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ সকল নেতার গোপন আড্ডাস্থল ছিল এ দোকান। এমনকি আওয়ামী পুলিশ অফিসারদেরও আসর বসত জাহেদের দোকান কাম আস্তানায়। এখানে বসে বিভিন্ন সময় পুলিশের কাছে শিবির নেতাদেরকে চিহ্নিত করে দিত জাহেদ। এরকম একটি ঘটনায় মাদ্রাসা মার্কেটে দাঁড়িয়ে পশ্চিম পাশের হিফজখানা থেকে শিবিরের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৩জন শীর্ষ দায়িত্বশীলকে গ্রেফতার করান জাহেদুল আনোয়ার।

সূত্র জানায়, দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার পরিচয়ে এমপি দিদারের সাথে সখ্যতা থেকে সহযোগী হয়ে ওঠেন জাহেদ। এক সময় এর প্রভাবে এ দোকানে বসেই ভূমি দস্যুদার মত অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার একাধিক মামলা রয়েছে। সীতাকুণ্ডের এক প্রবাসী বিএনপি নেতার জায়গা জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রী স্বৈরাচারের আমলে পরপর ৪টি মামলা করেন। হোসনে আরা নামের ওই নারী জানিয়েছেন ২০২১ সাল থেকে তার জায়গাটি জোরপূর্বক দখলে নিতে জাহেদের নেতৃত্বে একটি চক্র আমাকে সীমাহীন হয়রানি করেছে। এমনকি আমার বাড়ির সামনে সিসি ক্যামরা বসিয়ে আমাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। এতে আমি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে এক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য ভারত চলে যায়। এর মধ্যে এমপি দিদারের প্রভাব খাটিয়ে জাহেদ তার ওই চক্রটি দিয়ে আমার জায়গা দখল করিয়ে দেয়।

অপর এক ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখলের অভিযোগে একটি মামলা ও তাকে হয়রানির অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা হয় জাহেদের বিরুদ্ধে। মামলার বাদি মুক্তিযোদ্ধা নজর আলী বলেন, জাহেদের চাচাদের কাছ থেকে আমার ক্রয়কৃত একটি জায়গার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসে মামলা করে জাহেদ। সেসময় এসিল্যান্ড আশরাফুল আলমকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাব দেখিয়েও তার পক্ষে রায় নিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টান জাহেদ। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে গত ১২ অক্টোবর গোপনে মামলার রায় নিয়ে নেন। অথচ ২১ অক্টোবর মামলাটির শুনানীর দিন ধার্য ছিল।

এদিকে জাহেদের এমন কর্মকান্ডে রীতিমত ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে ওঠেছিলেন খোদ সীতাকুন্ডের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম আল মামুন। তিনি স্বৈরাচারের সর্বশেষ আমি-ডামির নির্বাচনে এমপি হয়ে মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষের কাছে ফোন দিয়ে বলেন, মাদ্রাসা মার্কেটের সেপটিক ট্যাংকের ওপর কোন দোকান থাকতে পারবেনা । তিন দিনের মধ্যে তা সরিয়ে দিবেন। কিন্তু এর একদিন পর মামুনের পিএস আসলাম অধ্যক্ষকে জানান, সেপটিক ট্যাংকের ওপর গড়ে তোলা দোকানটি সরাতে হবে না। বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য অধ্যক্ষ মামুনকে পুণরায় ফোন দিলে মামুনও দোকান সরানো লাগবেনা বলে জানান। পরে খোঁজ নিয়ে অধ্যক্ষ জানতে পারেন, আমি-ডামির উপজেলা চেয়ারম্যান রাজুকে দিয়ে মামুনকে ম্যানেজ করেছেন জাহেদ।

অপরদিকে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এবং অধ্যক্ষকে বাধ্য করে লেখা সেই চুক্তিনামার মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও ৩ বছর আগে। এরপর হতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দোকান ছেড়ে দিতে বারংবার তাগাদা দিলেও দোকান ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দেয় জাহেদ। এমনকি ৫ আগস্টের পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অসংখ্যবার দোকান ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু জাহেদ উল্টো পূর্বদেশ পত্রিকায় নিউজের ভয়-ভীতি দেখিয়ে অধ্যক্ষের কথায় কর্ণপাত করছেন না। এমনকি আগস্টের পর কোন ভাড়াও পরিশোধ করেননি জাহেদ।

এসব বিষয়ে মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাওলানা ওসমান গণি বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকারের সময় এমপি দিদারের হস্তক্ষেপে জোরপূর্বক সেপটিক ট্যাংকের ওপর দোকান নির্মাণ করে জাহেদ। এমনকি কয়েক বছর আগে দোকানটি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দিঘীর ওপর বর্ধিত করে। এতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জেলা পরিষদের কাছে হেনস্তার শিকার হতে হয়। আবার জাহেদ নামমাত্র ৪০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় জোড়পূর্বক চুক্তি করিয়ে নেয় তাও যখন ইচ্ছে তখন পরিশোধ করেন।

তিনি বলেন, চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়েছে প্রায় তিন বছর। বারংবার দোকান ছাড়তে বললেও ক্ষমতার জোর দেখিয়ে দখলে রেখেছে দোকানটি। ৫ আগস্টের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আগস্টের পর এ পর্যন্ত ভাড়াও পরিশোধ করেননি জাহেদ। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চায় তিনি এখনই দোকান ছেড়ে দিবেন যোগ করেন অধ্যক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে জাহেদুল আনোয়ার কে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও প্রত্যুত্তর দেননি।