সন্দ্বীপে এসডিআই ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের পার্টনারশিপে পরিচালিত ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড রেজিলিয়েন্স (সিসিআর) প্রজেক্টের উদ্যোগে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন এর অংশ হিসাবে র্যালি আলোচনা সভা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর শনিবার বিকাল ৩ টায় মধ্য হরিশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফজলুল হক অডিটোরিয়ামে র্যালি
পরবর্তী আলোচনা সভা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এসডিআই সন্দ্বীপ অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোঃ কামাল হোসেন এর সভাপতিত্বে ও সিসিআর প্রজেক্টের কমিউনিটি মোবিলাইজার বাদল রায় স্বাধীন এর সঞ্চালনায় সেমিনার বক্তব্য রাখেন সন্দ্বীপ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ইলিয়াছ কামাল বাবু, বাংলাদেশ সাংবাদিক ইলিয়াছ সুমন, এসডিআই সমৃদ্ধি প্রজেক্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ সিরাজদৌল্ল্যা,ব্যবস্থাপক সুব্রত রায়, মাষ্টার আকবর হোসেন,উপজেলা জাসাস এর যুগ্ন আহবায়ক শাহাদাৎ হোসেন, বিএনপি নেতা আফসার উদ্দিন, পৌর বিএনপি নেতা ইউছুপ প্রমুখ। সেমিনারে ২ শতাধিক নারী পুরুষ ও কিশোর কিশোরী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন একটি সুস্থ জাতি পেতে প্রয়োজন একজন শিক্ষিত মা অথচ আজ এই একুশ শতকে এসেও বাংলাদেশের ৬৬% মেয়ে এখনো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, যার প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ । আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে উঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে বড় বাধা বাল্যবিবাহ।যারা বাল্য বিবাহে ইচ্ছুক তারা যে কোন উপায়ে জন্ম নিবন্ধনে মেয়ের বয়স টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধি করে নেয় ।এর ফলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এক্ষেত্রে কিছু কাজীও দায়ী থাকে এবং এরা মেয়ের বয়স বৃদ্ধি দেখিয়ে বিয়ে দিতে বর এবং কনে পক্ষকে সহায়তা করে। সাধারনত মেয়েদের অর্থনৈতিক অবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাল্যবিবাহে উৎসাহিত করে ছেলেদের পরিবার।
কখনও কখনও তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার প্রবনতা থেকেও বাল্য বিবাহের দিকে ঝুকে পড়ে গ্রাম্য পরিবারগুলো। উল্লেখযোগ্য এই কারনগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারনেই বাল্য বিবাহ দেওয়া হচ্ছে ।
বাল্যবিবাহের প্রধান প্রধান কুফল হলো নারী শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহের কারনে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ মা হতে গিয়ে প্রতি ২০ মিনিটে একজন মা মারা যাচ্ছেন। প্রতি ঘন্টায় মারা যাচ্ছে একজন নবজাতক৷ নবজাতক বেঁচে থাকলেও অনেক সময় তাকে নানা শারীরিক ও মানষিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়৷ অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে৷ বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরী হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়৷ । বাল্যবিবাহ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না, পারিবারিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনেও সহায়ক হয় । যেমন, শিক্ষার আলো এবং স্বাস্থ্যগত কারণে অল্প বয়সের মেয়েটি তার নিজের সম্পর্কে সচেতন নয়, সুতরাং পরিবার সম্পর্কে তার ধারণা না থাকায় স্বাভাবিক বিষয়।
তারা আরো বলেন বাল্য বিবাহের প্রভাবে স্বামী, সংসার, শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে বুঝে উঠার আগেই সংসার এবং পরিবারের ভারে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির থেকেও তার উপর চাপের সৃষ্টি হয়, শুরু হয় অশান্তি, পারিবারিক কলহ, এবং সর্বোপরি পারিবারিক নির্যাতন। এই পারিবারিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হয় পরিবারের সবাই, বিশেষ করে শিশুরা ভোগে নানা মানসিক অশান্তিতে ।এতে তাড়া লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়, পরিবারের প্রতি জন্মে নানারকম অনীহা, ফলে তাড়া পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নানারকম অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। বাল্য বিবাহের শিকার ছেলে ও মেয়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনের মত মৌলিক মানবাধিকার লংঘিত হয়, যা তাঁকে তার সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ করে। বাল্য বিবাহ একদিকে আইন এবং সংবিধানের লংঘন, অন্যদিকে বাল্য বিবাহের বর ও কনেকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। অপরিনত বাড়ন্ত পুষ্ঠিহীন শরীরে বেরে উঠে আরেকটি অনাগত ভবিষ্যত অপুষ্ঠিগত অভিশাপের বোঝা নিয়ে। জন্ম দিবে কিছুদিন পর আরেকটি অপুষ্টিতে আক্রান্ত প্রজন্ম। বেড়ে চলে মা ও নবাগত শিশুর জীবনের ঝুঁকি।