চট্টগ্রাম 10:49 am, Tuesday, 19 August 2025

সীতাকুণ্ডে একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় জনমনে অস্বস্তি, বিচলিত নন ওসি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একের পর এক খুনের ঘটনায় জনমনে অস্বস্তি দেখা দিলেও এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিচলিত নন সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মজিবুর রহমান। তবে এবার কোন রাজনৈতিক হানাহানিতে খুন নয়, নিজ গৃহে প্রিয়তম স্বামীর হাতে খুন হয়েছে স্ত্রী সীমা আক্তার (২৫)।

গত ১৬ এপ্রিল রাত ১১টায় উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের চাড়ালকান্দি এলাকার কাজী শহীদুল্লার বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সীতাকুণ্ডে ৫টি খুনের ঘটনা সংঘঠিত হলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুল হক কবির (২২) জিপিএইচ কারখানায় চাকরির সুবাদে স্ত্রী সীমা আক্তারসহ চাড়ালকান্দি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। মাত্র মাসখানেক আগে তারা বাসাটি ভাড়া নেন। দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এর মধ্যে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে তাদের। বর্তমানে মাত্র ৩ মাস বয়স ওই কন্যা সন্তানটির। পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকেন সীমার বাবা-মা ও ভাই-বোন।

আরিফ হোসেন নামে সীমার এক আত্মীয় জানান, অল্পদিনের সংসারে তাদের স্বামী-স্ত্রীর কলহ লেগেই থাকতো। গত ১৬ এপ্রিল রাত এগারোটায় সীমা আক্তারের সাথে কলহের এক পর্যায়ে স্ত্রীর পেটে ছুড়িকাঘাত করেন স্বামী মাহমুদুল হক। এসময় সীমার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে মাহমুদুল পালিয়ে যান। পাশের বাসায় থাকা সীমার পরিবারের লোকজন এসে দেখতে পান ছুরিকাঘাত সীমা উঠানে পড়ে আছে। তখনও সীমার পেটে ছুরি ঢুকানো। পরে তাকে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সীমা আক্তার।

নিহত সীমা হলেন, সন্দ্বীপ উপজেলার দীর্ঘাপাড় এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব খানের মেয়ে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় সীমার স্বামী মাহমুদুল হককে আসামী করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে সীমার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সীতাকুণ্ডে ৫টি খুনের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে লালানগর গ্রামে বোনের বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে ২নং বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফিরোজ খানকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর গত ৩ জানুয়ারী রাত সাড়ে ৭টার দিকে সলিমপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ মীর আরমান হোসেন রানাকে জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল ৫নং লোহার ব্রীজ এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করে। গত ২০ দিনে দুই ইউনিয়নে মাত্র ৫ কি.মি. দূরত্বে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে।

এরমধ্যে গত ২৬ মার্চ ইফতারের পর বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের হাতিলোটা গ্রামের ছরারকূল নামক স্থানে উপজেলা কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এর কয়েকদিন পর ১০ এপ্রিল বিকাল ৫টায় সাত ভাইওয়ালা বাড়ীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুরাদপুর ইউনিয়নস্থ ৫নং ওয়ার্ডের গোপ্তাখালী এলাকার যুবলীগ নেতা মুসলিম উদ্দিনকে। সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল বুধবার নিজের স্বামীর হাতে খুন হলেন সীমা আক্তার।

এবিষয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, স্বামী-স্ত্রীর ঝঁগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলেছে এখানে আমার কি করার আছে? তবে সীমা আক্তার হত্যার ঘটনায় মামলা হলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন ওসি মজিবুর রহমান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

চাইল্ড কেয়ার বাংলাদেশের উদ্যোগে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ

সীতাকুণ্ডে একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় জনমনে অস্বস্তি, বিচলিত নন ওসি

Update Time : 09:05:56 pm, Friday, 18 April 2025

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একের পর এক খুনের ঘটনায় জনমনে অস্বস্তি দেখা দিলেও এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিচলিত নন সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মজিবুর রহমান। তবে এবার কোন রাজনৈতিক হানাহানিতে খুন নয়, নিজ গৃহে প্রিয়তম স্বামীর হাতে খুন হয়েছে স্ত্রী সীমা আক্তার (২৫)।

গত ১৬ এপ্রিল রাত ১১টায় উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের চাড়ালকান্দি এলাকার কাজী শহীদুল্লার বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সীতাকুণ্ডে ৫টি খুনের ঘটনা সংঘঠিত হলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুল হক কবির (২২) জিপিএইচ কারখানায় চাকরির সুবাদে স্ত্রী সীমা আক্তারসহ চাড়ালকান্দি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। মাত্র মাসখানেক আগে তারা বাসাটি ভাড়া নেন। দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এর মধ্যে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে তাদের। বর্তমানে মাত্র ৩ মাস বয়স ওই কন্যা সন্তানটির। পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকেন সীমার বাবা-মা ও ভাই-বোন।

আরিফ হোসেন নামে সীমার এক আত্মীয় জানান, অল্পদিনের সংসারে তাদের স্বামী-স্ত্রীর কলহ লেগেই থাকতো। গত ১৬ এপ্রিল রাত এগারোটায় সীমা আক্তারের সাথে কলহের এক পর্যায়ে স্ত্রীর পেটে ছুড়িকাঘাত করেন স্বামী মাহমুদুল হক। এসময় সীমার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে মাহমুদুল পালিয়ে যান। পাশের বাসায় থাকা সীমার পরিবারের লোকজন এসে দেখতে পান ছুরিকাঘাত সীমা উঠানে পড়ে আছে। তখনও সীমার পেটে ছুরি ঢুকানো। পরে তাকে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সীমা আক্তার।

নিহত সীমা হলেন, সন্দ্বীপ উপজেলার দীর্ঘাপাড় এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব খানের মেয়ে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় সীমার স্বামী মাহমুদুল হককে আসামী করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে সীমার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সীতাকুণ্ডে ৫টি খুনের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে লালানগর গ্রামে বোনের বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে ২নং বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফিরোজ খানকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর গত ৩ জানুয়ারী রাত সাড়ে ৭টার দিকে সলিমপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ মীর আরমান হোসেন রানাকে জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল ৫নং লোহার ব্রীজ এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করে। গত ২০ দিনে দুই ইউনিয়নে মাত্র ৫ কি.মি. দূরত্বে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে।

এরমধ্যে গত ২৬ মার্চ ইফতারের পর বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের হাতিলোটা গ্রামের ছরারকূল নামক স্থানে উপজেলা কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এর কয়েকদিন পর ১০ এপ্রিল বিকাল ৫টায় সাত ভাইওয়ালা বাড়ীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুরাদপুর ইউনিয়নস্থ ৫নং ওয়ার্ডের গোপ্তাখালী এলাকার যুবলীগ নেতা মুসলিম উদ্দিনকে। সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল বুধবার নিজের স্বামীর হাতে খুন হলেন সীমা আক্তার।

এবিষয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, স্বামী-স্ত্রীর ঝঁগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলেছে এখানে আমার কি করার আছে? তবে সীমা আক্তার হত্যার ঘটনায় মামলা হলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন ওসি মজিবুর রহমান।