চট্টগ্রাম 5:02 am, Thursday, 5 June 2025

মিরসরাইয়ে খালের পাশে মিলল তোয়ালে মোড়ানো নবজাতক

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি খালপাড় থেকে তোয়ালে মোড়ানো কান্নারত অবস্থায় এক নবজাতককে উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। শনিবার সকালে উপজেলার ১৩ নং মায়ানী ইউনিয়নের পূর্ব মায়ানী গ্রামের একটি খালপাড়ে শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে স্থানীয় এক কৃষক তাকে উদ্ধার করে। সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলেশিশুটিকে কে বা কারা খালপাড়ে রেখে যায়, তা জানা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন জানান, পূর্ব মায়ানী এলাকার মো. মোস্তফা নামের এক কৃষক সকালে মাঠে যাওয়ার সময় খালপাড়ে বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতে পান। কান্নার শব্দ শুনে তিনি আশপাশে খুঁজে খালপাড়ে তোয়ালে মোড়ানো একটি নবজাতক দেখতে পান। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় মুজিবুল হক নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যান। ঘটনার জানাজানি হলে এলাকার শত শত লোক শিশুটিকে দেখতে ভিড় করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সম্মতিতে এক নিঃসন্তান দম্পতিকে দেওয়া হয়। শিশুটিকে এখন হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন ওই দম্পতি।

শিশুটি উদ্ধারের সময় সেখানে ছিলেন শাহাব উদ্দিন নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, নবজাতকটিকে জন্মের কিছু সময় পরই ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল। কান্নার শব্দ শুনে স্থানীয় কৃষক মোস্তফা নবজাতকটি পাওয়ার পর আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বিষয়টি এলাকার লোকজনকে জানালে তাঁদের উপস্থিতি ও সম্মতিতে শিশুটিকে নিঃসন্তান এক ব্যবসায়ী পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতকের পাশে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর ও দুর্বার প্রগতি সংগঠনসহ অনেকেই এগিয়ে এসেছে।

কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতককে দেখতে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোমাইয়া আক্তার ও উপজেলা সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. শাহাবুদ্দীন। এসময় শিশুটির সার্বিক দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর গ্রহণ করে এবং তাৎক্ষনিক স্থায়ী নিবাস সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শিশুটির নিরাপত্তা, নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা ,খাবার ও চিকিৎসার বিষয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে স্থানীয় খোরশেদ আলম ও ফারজানা আক্তার নি:সন্তান দম্পতির আগ্রহে ভিত্তিতে তাদের জিম্মায় ১ জুন সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত এসকল কিছু দেখবালের জন্য রেখে আসা হয় এবং তারা কুড়িয়ে পাওয়ার পর থেকেই শিশুটির যত্নে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১ জুন সকালে প্রশাসনিক সকল প্রক্রিয়া শেষে নবজাতকের নিরাপদ স্থায়ী নিবাস চূড়ান্ত করা হবে। বর্তমানে উপজেলার একটি বেসরকারী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শিশুটি মহান আল্লাহর রহমতে সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছেন।

এ সকল বিষয় সু-নিশ্চিত করণে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সাবরিনা লিনার তাৎক্ষনিক নির্দেশনা পেয়ে ছুটে যান দুর্বার প্রগতি সংগঠনের সভাপতি রিপন কুমার দাশ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং এসকল বিষয়ে প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করণে কাজ করেন তারা। প্রশাসন ও স্থানীয়দের সর্বাত্মক সহযোগিতায় শিশুটির নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হোক এ প্রত্যাশা সবার…
মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মুসা মিয়া জানান, খালপাড় থেকে একটি সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক উদ্ধারের পর স্থানীয় এক নিঃসন্তান পরিবারের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে। সে এখন সুস্থ রয়েছে।

এবিষয়ে তাৎক্ষনিক জানতে চাইলে এমন কোনো ঘটনার কথা শোনেননি বলে জানান মিরসরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহির আমিন। তিনি বলেন, ‘মায়ানী ইউনিয়ন আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা। সেখানে খালপাড়ে নবজাতক পাওয়া গেছে, এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা শুনতে পাইনি। এলাকা থেকেও কেউ এ বিষয়ে কিছু জানায়নি আমাদের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মিরসরাইয়ে চাঁদাবাজি ও মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের সংবাদ সম্মেলন

মিরসরাইয়ে খালের পাশে মিলল তোয়ালে মোড়ানো নবজাতক

Update Time : 07:40:52 pm, Sunday, 1 June 2025

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি খালপাড় থেকে তোয়ালে মোড়ানো কান্নারত অবস্থায় এক নবজাতককে উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। শনিবার সকালে উপজেলার ১৩ নং মায়ানী ইউনিয়নের পূর্ব মায়ানী গ্রামের একটি খালপাড়ে শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে স্থানীয় এক কৃষক তাকে উদ্ধার করে। সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলেশিশুটিকে কে বা কারা খালপাড়ে রেখে যায়, তা জানা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন জানান, পূর্ব মায়ানী এলাকার মো. মোস্তফা নামের এক কৃষক সকালে মাঠে যাওয়ার সময় খালপাড়ে বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতে পান। কান্নার শব্দ শুনে তিনি আশপাশে খুঁজে খালপাড়ে তোয়ালে মোড়ানো একটি নবজাতক দেখতে পান। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় মুজিবুল হক নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যান। ঘটনার জানাজানি হলে এলাকার শত শত লোক শিশুটিকে দেখতে ভিড় করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সম্মতিতে এক নিঃসন্তান দম্পতিকে দেওয়া হয়। শিশুটিকে এখন হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন ওই দম্পতি।

শিশুটি উদ্ধারের সময় সেখানে ছিলেন শাহাব উদ্দিন নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, নবজাতকটিকে জন্মের কিছু সময় পরই ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল। কান্নার শব্দ শুনে স্থানীয় কৃষক মোস্তফা নবজাতকটি পাওয়ার পর আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বিষয়টি এলাকার লোকজনকে জানালে তাঁদের উপস্থিতি ও সম্মতিতে শিশুটিকে নিঃসন্তান এক ব্যবসায়ী পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতকের পাশে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর ও দুর্বার প্রগতি সংগঠনসহ অনেকেই এগিয়ে এসেছে।

কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতককে দেখতে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোমাইয়া আক্তার ও উপজেলা সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. শাহাবুদ্দীন। এসময় শিশুটির সার্বিক দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর গ্রহণ করে এবং তাৎক্ষনিক স্থায়ী নিবাস সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শিশুটির নিরাপত্তা, নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা ,খাবার ও চিকিৎসার বিষয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে স্থানীয় খোরশেদ আলম ও ফারজানা আক্তার নি:সন্তান দম্পতির আগ্রহে ভিত্তিতে তাদের জিম্মায় ১ জুন সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত এসকল কিছু দেখবালের জন্য রেখে আসা হয় এবং তারা কুড়িয়ে পাওয়ার পর থেকেই শিশুটির যত্নে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১ জুন সকালে প্রশাসনিক সকল প্রক্রিয়া শেষে নবজাতকের নিরাপদ স্থায়ী নিবাস চূড়ান্ত করা হবে। বর্তমানে উপজেলার একটি বেসরকারী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শিশুটি মহান আল্লাহর রহমতে সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছেন।

এ সকল বিষয় সু-নিশ্চিত করণে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সাবরিনা লিনার তাৎক্ষনিক নির্দেশনা পেয়ে ছুটে যান দুর্বার প্রগতি সংগঠনের সভাপতি রিপন কুমার দাশ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং এসকল বিষয়ে প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করণে কাজ করেন তারা। প্রশাসন ও স্থানীয়দের সর্বাত্মক সহযোগিতায় শিশুটির নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হোক এ প্রত্যাশা সবার…
মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মুসা মিয়া জানান, খালপাড় থেকে একটি সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক উদ্ধারের পর স্থানীয় এক নিঃসন্তান পরিবারের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে। সে এখন সুস্থ রয়েছে।

এবিষয়ে তাৎক্ষনিক জানতে চাইলে এমন কোনো ঘটনার কথা শোনেননি বলে জানান মিরসরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহির আমিন। তিনি বলেন, ‘মায়ানী ইউনিয়ন আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা। সেখানে খালপাড়ে নবজাতক পাওয়া গেছে, এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা শুনতে পাইনি। এলাকা থেকেও কেউ এ বিষয়ে কিছু জানায়নি আমাদের।