চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন করেরহাট রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা তারিকুর রহমান মানবেতর জীবনযাপন করছে। বনখেকো, পাহাড়খেকো দের জন্য আতঙ্ক ছিল এই কর্মকর্তা। তার দায়িত্ব প্রাপ্ত এলাকায় কোনো ভাবেই অবৈধ চোরাকারবারি সুযোগ পাচ্ছিল না। তার সততা ও পেশাদারিত্ব কাল হলো। বনখেকোদের ডাম্পার ট্রাকের ধাক্কায় গত ৬ মাস হাসপাতালের বারান্দায় ও বিছানায় কেটেছে সময়। চিকিৎসায় প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে এরমধ্যে। পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রয়োজন আরো ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে জমানো টাকা, বৌয়ের গহনা বিক্রি করে ও ঋণ করে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করে । অথচ যে বিভাগের জন্য অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় সে বিভাগ থেকে নূন্যতম সহযোগিতা পায়নি। অসুস্থ মা, দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ভাড়া বাসায় খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে এই রেঞ্জ কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলায়।
জানা যায়, অবৈধভাবে সরকারি সংরক্ষিত বনভূমিতে অবৈধ প্রবেশ করে বালু উত্তোলন ও পাচার কালে গত ১৫ জানুয়ারি রাত ৯ টায় করেরহাট রেঞ্জাধীন করেরহাট বিট কাম চেক স্টেশনের রামগড় – সীতাকুণ্ড রিজার্ভ ফরেস্ট মৌজায় সংরক্ষিত বনভূমির ঝিলতলী এলাকা অবৈধ বনখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযানে যায় একটি টিম। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ মাহদী হাসান(রেঞ্জে প্রশিক্ষন রত), রেঞ্জ কর্মকর্তা তারিকুর রহমান সহ সঙ্গীয় ফোর্স সহ এই অভিযানে অংশ নেয়। টিলা কেটে বালু ভর্তি করে ডাম্পার ট্রাকে করে বালু পাচার কালে ঐ গাড়িকে সিগনাল দেয় এই রেঞ্জ কর্মকর্তা। সিগনাল না মেনে হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর গাড়ি তুলে দেয় ড্রাইভার। এতে মারাত্মক আহত হয় রেঞ্জ কর্মকর্তা তারিকুর রহমান। পায়ের উপর গাড়ি তুলে দিলে বাম পায়ের পিউমার হাড় মারাত্মক ভাবে ভেঙ্গে যায়।
এ ঘটনায় স্টেশন কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং পিওআর ৩৩কেবিএস/ ১১৮/ক২৪-২৫। আসামিরা হলেন মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা গ্রামের মোঃ মোস্তফার ছেলে নুরুদ্দিন (৪৮) , একই ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল (৩৩)। এদের মধ্যে নুরুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হলেও অপর আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন ।
উল্লেখ্য, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের টিলা কেটে বালু উত্তোলন ১৯২৭ সনের (যাহা ২০০০ সালের সংশোধিত) বন আইনের ২৬(১ক) ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এবিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা তারিকুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুণ্ড – রামগড় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জিলতলী এলাকায় পাহাড় কেটে বালু উত্তোলনের তথ্য ছিল। ঐ দিন রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জিলতলী এলাকায় টিলার বালু ভর্তি একটি ডাম্পার আসতে দেখে সিগনাল দিই। সিগনাল না মেনে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার উপর গাড়ি তুলে দেয়। এসময় আমার পায়ের উপর গাড়ি উঠে যায়।
তিনি আরো বলেন, গত ১৮ জুন ভাঙা পা নিয়ে পুনরায় কর্মস্থলে যোগদান করি। কর্মচারী কল্যাণ ফান্ড থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সহযোগিতা করা হয়। সহযোগিতা চেয়ে আবেদনও করেছি তবে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সহযোগিতা পাইনি। পরবর্তীতে চিকিৎসা ব্যয় কিভাবে জোগাড় করবো তা নিয়ে চিন্তিত আমি।