চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবশেষে চাঞ্চল্যকর ফয়েজ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার করা হয়েছে স্ত্রী ফিরোজা বেগমসহ ৫ জনকে।
মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নের বদ্ধ ঘেড়ামারা এলাকায় ফয়েজ আহমেদ (৮৫) চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার (১৯ জুলাই) ভোরে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
এ বিষয়ে শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে জোরারগঞ্জ থানায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মীরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নোমান আহমেদ পিপিএম ও জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আব্দুল হালিম।
পুলিশ জানায়, গত ২৬ জুন ২০২৫ ইং, রাত আনুমানিক ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ভোর ৫টার মধ্যে কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা বৃদ্ধ ফয়েজ আহমেদকে নিজ ঘরে হাত-পা বেঁধে, মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে সকাল ৯টা ৫ মিনিটে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে এবং আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করে।
নিহতের ছেলে আলমগীর হোসেনের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে জোরারগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নং-১৬, তারিখ: ২৬/০৬/২০২৫, ধারা: ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি) রুজু করা হয়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, নিহতের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৫৫) এবং তার বড় বোন শ্যামলা বেগম (৬০) পারিবারিক অভাব-অভিযোগ ও স্বামীকে ঘরে রাখা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের ছক আঁটে। তারা স্থানীয় একজন দিনমজুর আকতারকে (৩২) ভাড়া করে এবং সে তার দুই সহযোগী ইয়াছিন রুবেল (২৫) ও শাকিব (২৩) কে সঙ্গে নেয়। হত্যাকাণ্ডের রাতে ফিরোজা ধাত্রী কাজের অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে দরজা খোলা রেখে আসে। ঘটনার দিন রাত ১২টার পর তিনজন ঘরে প্রবেশ করে ফয়েজ আহমেদকে খাটে ঘুমন্ত অবস্থায় হাত-পা বেঁধে ফেলে। চিৎকার করলে তার মুখে কাপড় গুঁজে ও তাকে মারধর করে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে ঘরের ড্রয়ারে থাকা ৩০ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।
পুলিশ প্রথমে আকতারকে সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রুবেল ও শাকিবকেও আটক করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ফিরোজা বেগম ও শ্যামলা বেগমকেও গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচ আসামিই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তারা জানায়, লুণ্ঠিত টাকার মধ্যে আকতার পেয়েছে ১৪ হাজার, রুবেল ও শাকিব ভাগ করে নিয়েছে বাকি ১৬ হাজার টাকা।
এই বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আব্দুল হালিম বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত পারিবারিক হত্যাকাণ্ড। ঘটনাটি উদঘাটনে আমরা প্রযুক্তির সহায়তা, গোপন তথ্য এবং ময়না তদন্তের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে চিহ্নিত আসামিদের গ্রেফতার সম্ভব হয়েছে। তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে এবং আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করা হবে।”
মীরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নোমান আহমেদ পিপিএম বলেন, “ফয়েজ আহমেদ ছিলেন একজন নিরীহ বৃদ্ধ। পারিবারিক অভাব এবং টাকা-পয়সা নিয়ে অসন্তোষ থেকেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। মামলাটি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি এবং দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে।”