চট্টগ্রাম 10:44 pm, Saturday, 26 July 2025
রাঙ্গুনিয়ার বেতাগীতে জনসভায় হুম্মাম কাদের চৌধুরী

“নতুন রাজনৈতিক দলই আওয়ামীলীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে”

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছেন “এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে লুকিয়ে আছে আওয়ামীলীগের মানুষ। ঘর থেকে বের হয় না। তবে জানিয়ে দিতে চাই, তারাও সুযোগ খুঁজছে। বার বার করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই নতুন রাজনৈতিক দল তারাই সুযোগ করে দিচ্ছে এই আওয়ামীলীগদেরকে। আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসনের জন্য কেনো তাদের উষ্কানি দিচ্ছে আমরা এখনো বুঝতে পারলাম না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটার ফলাফল কি হবে। তবে আওয়ামীলীগ যদি গর্ত থেকে বের হয়, তবে সকলের দায়িত্ব তাদেরকে ধরিয়ে দেয়ার।”

শনিবার (২৬ জুলাই) বিকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের গা¹ুলাতল এলাকায় ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে এবং জুলাই—আগস্ট এর শহীদদের স্মরণে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।

হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, “বলেছিলাম না, আমার বয়স কম রক্ত গরম। ততক্ষণ আমার এই রক্ত ঠান্ডা হবে না, যতদিন এই আওয়ামীলীগের বিচার না হবে। এখন সময় এসেছে, তাদের স্বীকার করতে হবে তারা অপরাধ করেছে, ১৪০০ সন্তানদেরকে তারা হত্যা করেছে, এই দেশকে তারা লুঠপাট করেছে। বিএনপি নেতাকমীর্দের মন অনেক বড়, ক্ষমা করে দিতে পারি। তবে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে, স্বীকার করতে হবে তাদের ভুলগুলো। কিন্তু এখনো তারা স্বীকার করছে না। ইতিমধ্যেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। হয়ত নির্বাচনের আগে কিছু কিছু বিচার আমরা দেখতে পাবো। তবে ইন্টেরিয়ামের উপর ভরশা করছি না তারা বিচার করবে। যেইদিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় আসবে, আওয়ামীলীগের বিচার সেইদিন থেকে শুরু হবে।”

রাঙ্গুনিয়ায় এখন তিনটি সমস্যা বিরাজমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদে রাঙ্গুনিয়ার মধ্যে তিনটাই সমস্যা, চাঁদাবাজি, বালির ব্যবসায় আর মাদকের ব্যবসায়। মাদক সমাজ ধ্বংস করছে, বালির ব্যবসায় মানুষের গ্রাম ধ্বংস করছে আর চাঁদাবাজি মানুষের ঈমান ধ্বংস করছে। যারা এসবের সাথে জড়িত, তাদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিবেন। বালির ব্যবসার সাথে যারা জড়িত, তারা আমার পাশে আর নেই। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা তার পরিবারের নাম বিক্রি করে যারা চাঁদাবাজি করবে, অবৈধ ব্যবসায় করবে তাদের বিচার আপনারাই করবেন।”

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বেতাগী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিজামুল হক চৌধুরী তপন। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাকসুদুল হক চৌধুরী। বেতাগী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজিম উদ্দীনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান এবং উত্তরজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে করিম মিনা, সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, উত্তরজেলা বিএনপির সদস্য শওকত আলী নূও, এডভোকেট কামাল হোসেন, হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস, মছিহুদ্দৌলা চৌধুরী, ইউসুফ সিকদার, ভিপি আনছুর উদ্দিন, এস এম ইফতেখার হোসেন রুবেল, ফারুকুল ইসলাম, পারভেজ মোশাররফ, আবু বক্কর, হেলাল আহমদ, আশরাফুল হক হারুন।

বক্তব্য দেন সৈয়দ মোহাম্মদ সাবেরুল ইসলাম, আলী আকবর, কাজী মোহাম্মদ জালাল, খালেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ হারুন, ফজলুল কাদের, আব্দুল আজিজ পলাশ, শাহাদাত তালুকদার, জিয়াউল হায়দার রায়হান, মো. মফিজ, মো. আরিফ, দিদারুল আলম, মিশন চৌধুরী, মো. শাহেদ, আহাদুল হক প্রমুখ।
নির্বাচন প্রসঙ্গে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, “ সকলেই অপেক্ষায় আছেন কখন নির্বাচনের ঘোষণা আসবে। তবে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য। তবে যদি হুকুম হয়ে যায় নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে, তখনও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা গত ১৬ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যেকোন মুহুর্তে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। রাঙ্গুনিয়ার মানুষ প্রস্তুত রয়েছে বিচার করার জন্য, নির্বাচন করার জন্য এবং লড়াই করার জন্য।”

দলীয় নেতাকমীর্দের গ্রুপিং না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলীয় নেতৃবৃন্দের অনেকেই আবেগে অনেক কিছু বলে ফেলেন। দলের সকলেই আমার ভাই, সকলেই আমার চাচা। তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করবেন। একসাথে পথ চলবেন। কাউকে হেয় করবেন না। আমার বাবাকে যদি আপনারা মহব্বত করে থাকেন, তাহলে এই জিনিসটা আপনারা আমার জন্য করবেন। যেই ভুল আওয়ামীলীগ করেছে, সেই একই ভুল আমরা করতে চাই না। আমরা চাই না তাদের কোন কষ্ট না দিতে, যারা কোন অপরাধ করেনি। তবে যেই অপরাধীরা এখনো লুকিয়ে আছে আমাদের মাঝে, তাদের বিচার ইনশাল্লাহ এই মাটিতে হবে।

নিজেকে রাঙ্গুনিয়ার সন্তান উল্লেখ করে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, “বাবার শেষ ইচ্ছে ছিলো রাঙ্গুনিয়ায় দাফন করার। উনি রাঙ্গুনিয়ার ভোটার ছিলেন। বাবার বাড়ি এখনো সকলে চিনেন কাদের নগর হিসেবে। বাবাকে সকলে জানতো রাঙ্গুনিয়ার সন্তান হিসেবে। তাহলে আমার প্রশ্ন আমি কোন ঘরের সন্তান। আমি বলতে চাই, নমিনেশন হোক আর না হোক, প্রার্থী আমি হয় আর না হয়, আমি রাঙ্গুনিয়ার সন্তান। বাবা থেকে শিক্ষা পেয়েছি, যাদেরকে বুক দিয়েছি, তাদেরকে পিঠ দেবো না। আপনারা আমার বিপদে আমাকে বুক দিয়েছেন, যতদিন বেঁচে আছি, আপনাদের পাশে থাকবো, আপনাদের জন্য কাজ করবো। আপনারা আমাকে পছন্দ করেন আর নাই করেন, আমি তো আপনাদের ভালবাসি, ভালবেসে যাবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

“নতুন রাজনৈতিক দলই আওয়ামীলীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে”

রাঙ্গুনিয়ার বেতাগীতে জনসভায় হুম্মাম কাদের চৌধুরী

“নতুন রাজনৈতিক দলই আওয়ামীলীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে”

Update Time : 10:44:10 pm, Saturday, 26 July 2025

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছেন “এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে লুকিয়ে আছে আওয়ামীলীগের মানুষ। ঘর থেকে বের হয় না। তবে জানিয়ে দিতে চাই, তারাও সুযোগ খুঁজছে। বার বার করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই নতুন রাজনৈতিক দল তারাই সুযোগ করে দিচ্ছে এই আওয়ামীলীগদেরকে। আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসনের জন্য কেনো তাদের উষ্কানি দিচ্ছে আমরা এখনো বুঝতে পারলাম না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটার ফলাফল কি হবে। তবে আওয়ামীলীগ যদি গর্ত থেকে বের হয়, তবে সকলের দায়িত্ব তাদেরকে ধরিয়ে দেয়ার।”

শনিবার (২৬ জুলাই) বিকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের গা¹ুলাতল এলাকায় ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে এবং জুলাই—আগস্ট এর শহীদদের স্মরণে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।

হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, “বলেছিলাম না, আমার বয়স কম রক্ত গরম। ততক্ষণ আমার এই রক্ত ঠান্ডা হবে না, যতদিন এই আওয়ামীলীগের বিচার না হবে। এখন সময় এসেছে, তাদের স্বীকার করতে হবে তারা অপরাধ করেছে, ১৪০০ সন্তানদেরকে তারা হত্যা করেছে, এই দেশকে তারা লুঠপাট করেছে। বিএনপি নেতাকমীর্দের মন অনেক বড়, ক্ষমা করে দিতে পারি। তবে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে, স্বীকার করতে হবে তাদের ভুলগুলো। কিন্তু এখনো তারা স্বীকার করছে না। ইতিমধ্যেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। হয়ত নির্বাচনের আগে কিছু কিছু বিচার আমরা দেখতে পাবো। তবে ইন্টেরিয়ামের উপর ভরশা করছি না তারা বিচার করবে। যেইদিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় আসবে, আওয়ামীলীগের বিচার সেইদিন থেকে শুরু হবে।”

রাঙ্গুনিয়ায় এখন তিনটি সমস্যা বিরাজমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদে রাঙ্গুনিয়ার মধ্যে তিনটাই সমস্যা, চাঁদাবাজি, বালির ব্যবসায় আর মাদকের ব্যবসায়। মাদক সমাজ ধ্বংস করছে, বালির ব্যবসায় মানুষের গ্রাম ধ্বংস করছে আর চাঁদাবাজি মানুষের ঈমান ধ্বংস করছে। যারা এসবের সাথে জড়িত, তাদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিবেন। বালির ব্যবসার সাথে যারা জড়িত, তারা আমার পাশে আর নেই। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা তার পরিবারের নাম বিক্রি করে যারা চাঁদাবাজি করবে, অবৈধ ব্যবসায় করবে তাদের বিচার আপনারাই করবেন।”

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বেতাগী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিজামুল হক চৌধুরী তপন। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাকসুদুল হক চৌধুরী। বেতাগী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজিম উদ্দীনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান এবং উত্তরজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে করিম মিনা, সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, উত্তরজেলা বিএনপির সদস্য শওকত আলী নূও, এডভোকেট কামাল হোসেন, হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস, মছিহুদ্দৌলা চৌধুরী, ইউসুফ সিকদার, ভিপি আনছুর উদ্দিন, এস এম ইফতেখার হোসেন রুবেল, ফারুকুল ইসলাম, পারভেজ মোশাররফ, আবু বক্কর, হেলাল আহমদ, আশরাফুল হক হারুন।

বক্তব্য দেন সৈয়দ মোহাম্মদ সাবেরুল ইসলাম, আলী আকবর, কাজী মোহাম্মদ জালাল, খালেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ হারুন, ফজলুল কাদের, আব্দুল আজিজ পলাশ, শাহাদাত তালুকদার, জিয়াউল হায়দার রায়হান, মো. মফিজ, মো. আরিফ, দিদারুল আলম, মিশন চৌধুরী, মো. শাহেদ, আহাদুল হক প্রমুখ।
নির্বাচন প্রসঙ্গে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, “ সকলেই অপেক্ষায় আছেন কখন নির্বাচনের ঘোষণা আসবে। তবে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য। তবে যদি হুকুম হয়ে যায় নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে, তখনও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা গত ১৬ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যেকোন মুহুর্তে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। রাঙ্গুনিয়ার মানুষ প্রস্তুত রয়েছে বিচার করার জন্য, নির্বাচন করার জন্য এবং লড়াই করার জন্য।”

দলীয় নেতাকমীর্দের গ্রুপিং না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলীয় নেতৃবৃন্দের অনেকেই আবেগে অনেক কিছু বলে ফেলেন। দলের সকলেই আমার ভাই, সকলেই আমার চাচা। তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করবেন। একসাথে পথ চলবেন। কাউকে হেয় করবেন না। আমার বাবাকে যদি আপনারা মহব্বত করে থাকেন, তাহলে এই জিনিসটা আপনারা আমার জন্য করবেন। যেই ভুল আওয়ামীলীগ করেছে, সেই একই ভুল আমরা করতে চাই না। আমরা চাই না তাদের কোন কষ্ট না দিতে, যারা কোন অপরাধ করেনি। তবে যেই অপরাধীরা এখনো লুকিয়ে আছে আমাদের মাঝে, তাদের বিচার ইনশাল্লাহ এই মাটিতে হবে।

নিজেকে রাঙ্গুনিয়ার সন্তান উল্লেখ করে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, “বাবার শেষ ইচ্ছে ছিলো রাঙ্গুনিয়ায় দাফন করার। উনি রাঙ্গুনিয়ার ভোটার ছিলেন। বাবার বাড়ি এখনো সকলে চিনেন কাদের নগর হিসেবে। বাবাকে সকলে জানতো রাঙ্গুনিয়ার সন্তান হিসেবে। তাহলে আমার প্রশ্ন আমি কোন ঘরের সন্তান। আমি বলতে চাই, নমিনেশন হোক আর না হোক, প্রার্থী আমি হয় আর না হয়, আমি রাঙ্গুনিয়ার সন্তান। বাবা থেকে শিক্ষা পেয়েছি, যাদেরকে বুক দিয়েছি, তাদেরকে পিঠ দেবো না। আপনারা আমার বিপদে আমাকে বুক দিয়েছেন, যতদিন বেঁচে আছি, আপনাদের পাশে থাকবো, আপনাদের জন্য কাজ করবো। আপনারা আমাকে পছন্দ করেন আর নাই করেন, আমি তো আপনাদের ভালবাসি, ভালবেসে যাবো।