সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা উপকূলের ফেরিঘাট জলসীমা থেকে মাছ ধরার জাল অপসারণের প্রশাসনিক নির্দেশনার কারণে চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন উপকূলীয় জলদাস সম্প্রদায়ের শত শত মৎস্যজীবী। জীবিকার একমাত্র উৎস হারানোর শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে উঠেছেন তারা।
সম্প্রতি সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা ফেরিঘাট সংলগ্ন ৫০০ মিটারের মধ্যে সব ধরনের মাছ ধরার জাল এক সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এই সিদ্ধান্তের পর হারামিয়া ইউনিয়নের কাছিয়াপাড়ার মৎস্যজীবীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ দেখা দেয়।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ফেরিঘাটের নিরাপত্তার কথা বলেই শুধু মগধরা উপকূলকে জালমুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা তারা বৈষম্যমূলক ও একপাক্ষিক বলে মনে করছেন। স্থানীয়দের মতে, অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এই সিদ্ধান্তকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ মনে করছেন।
এ অবস্থায় মৎস্যজীবীরা বিকল্পভাবে সীমারেখা নির্ধারণ এবং জাল অপসারণের সময়সীমা কমপক্ষে এক মাসে বৃদ্ধি করার দাবি জানান। তাদের মতে, দ্রুত ও কঠোরভাবে এই নির্দেশনা কার্যকর হলে তারা একদিকে যেমন জীবিকা হারাবেন, অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে মাছ সরবরাহেও বিপর্যয় ঘটতে পারে।
এই দাবিগুলো তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুর ১২টায় হারামিয়া কাছিয়াপাড়ার শতাধিক জেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমার কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হারামিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ফসিউল আলম রহিম, সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুল করিম, বাবুল দাস, বিধান দাস, স্বপন দাস, কালা দাস, অনিল দাস, রাজধন দাস, হরি মোহন দাস, মনোরঞ্জন দাস, গোবিন্দ দাস, প্রভাত দাসসহ শতাধিক জেলে।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা জেলেদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং আশ্বস্ত করেন যে বিষয়টি ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক ও মানবিক সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সন্দ্বীপের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে হাজার হাজার মানুষ প্রজন্ম ধরে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। এই সংকট যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে স্থানীয় অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।