ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম জেলার ১৯১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৩৬টি বাদে কোথাও জনপ্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জনসেবার মান উন্নত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের সকল নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্যে প্রথমবারের মতো সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নবাসীর সাথে নাগরিকসেবা বিষয়ক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দিনব্যাপী সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত এ কর্মসূচিকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।গণশুনানীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ সাদি উর রহিম জাদিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, সরকার জনগণের সেবায় বদ্ধপরিকর। এ ধরনের গণশুনানি আমাদের সরাসরি সমস্যাগুলো শুনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে। তিনি ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দেন এবং শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে। প্রশাসন জনগণের পাশে আছে, প্রতিটি সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, প্রথমবারের মতো সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে স্থানীয়দের সরাসরি কথা শোনার সুযোগ তৈরী হলো। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলায় এমন গণশুনানি আয়োজন করা হবে।
গণশুনানিতে ইউনিয়নবাসী সরাসরি নানা সমস্যা ও অভিযোগ তুলে ধরেন। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, রাস্তাঘাট ও কালভার্ট নির্মাণ, মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সংকট, শ্মশান সংস্কার, মাদক ও কিশোর গ্যাং-সব বিষয় নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় শিক্ষকরা শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা জানান। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। পাশাপাশি ইউনিয়নের সড়ক ও শ্মশান সংস্কার এবং কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশ দেন ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে।
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। তারা আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের নিয়মিত গণশুনানি নাগরিক সমস্যার দ্রুত সমাধান ও প্রশাসনের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ ও কার্যকর করে তুলবে।
অনুষ্ঠানে ১০ মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এছাড়া সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, যা উপস্থিতদের আবেগাপ্লুত করে।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে বৃক্ষ রোপণ করেন। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলতাপ হোসেন, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ কল্লোল বড়ুয়া, কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল্লাহ্, এলজিইডি কর্মকর্তা আলমগীর বাদশা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলামসহ প্রমুখ।