চট্টগ্রাম 12:28 am, Tuesday, 21 October 2025
ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী

নবাবগঞ্জে শক্তি ফাউন্ডেশনের করা ৮১ হাজার টাকার ঋণের মামলায় বৃদ্ধা কারাগারে

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"transform":3},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

ঢাকার নবাবগঞ্জে প্রবাসী ছেলের জন্য এনজিও থেকে নেয়া ঋণের ফাঁদে পড়ে পারুল বেগম (৬০) নামের এক বৃদ্ধা ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। মাত্র ৮১ হাজার টাকার ঋণের দায়ে বৃদ্ধা মহিলাকে কারাগারে পাঠিয়েছে শক্তি ফাউন্ডেশন। ‘নারীর ক্ষমতায়নে শক্তি’ এই স্লোগানে তাদের কার্যক্রম চালালেও বাস্তবে বৃদ্ধা নারীকেই কারাগারে পাঠালো এনজিওটি।

রোববার (২৪ আগষ্ট) বিকেলে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর চাপে বৃদ্ধাকে জামিনের আশ্বাস দেয় এনজিও শক্তি ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়ক রমজান আলী।

গত বৃহষ্পতিবার দুপুরে ২০ হাজার টাকা কিস্তি দিলেও রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কারাভোগকৃত পারুল বেগম উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রামের আব্দুল করিমের স্ত্রী।

এনজিওটির স্থানীয় কার্যালয় উপজেলা সদর কলাকোপা ইউনিয়নের পানালিয়া গ্রামে।

ঋণ গ্রহিতা পরিবার ও শক্তি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানায়, পারুল বেগম ২০২২ সালের ১৩ জুন পানালিয়া শাখা শক্তি ফাউন্ডেশন থেকে প্রবাসী খাতে ৪ লাখ টাকা ঋণ নেয়। ১৮ মাস মেয়াদে তা পরিশোধ করার ছিল। কিন্তু ছেলে প্রবাস থেকে টাকা দিতে না পারায় নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তিন তারিখে আদালতে মামলা করে শক্তি ফাউন্ডেশন। শক্তি ফাউন্ডেশনের পক্ষে হিসাব রক্ষক মানিক হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপরও ওই নারী আরো ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। পরে মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ৬ মাসের সাজার রায় হয়। এনজিও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নারীকে জানায়নি।

এনজিও’র হিসাব রক্ষক মানিক হোসেন জানান, সুদসহ ওই ঋণের পরিমাণ দাড়ায় ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩২৮ টাকা। এ পর্যন্ত পারুল বেগম ৪ লাখ ১৪ হাজার ১০৪ টাকা পরিশোধ করেছেন। আরো ৮১ হাজার ৩২৪ টাকা অপরিশোধিত রয়েছে।

এ ঘটনায় গত বৃহষ্পতিবার রাতে বৃদ্ধাকে পুলিশ সাজা পরোয়ানার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। বিষয়টি এনজিওকে জানালে তারা গুরুত্ব দেয়নি। পরে রোববার দুপুরে ঋণ গ্রহিতার মেয়ে সায়মা আক্তার স্থানীয়দের জানালে তারা শক্তি ফাউন্ডেশনের পানালিয়া শাখায় গিয়ে বিস্তারিত জেনে ওই নারীকে মুক্ত করতে চাপ দেয়। এসময় শাখা ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান তাঁদেরকে বসিয়ে রেখে কয়েক ঘন্টা কালক্ষেপন করে উধাও হয়ে যায়।

উত্তেজনা শুরু হলে ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়ক রমজান আলী এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার পারুল বেগমকে জামিনের ব্যবস্থা করা হবে। উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের সাথে কথা হয়েছে।

আঞ্চলিক তত্তাবধায়ক আরও জানান, নবাবগঞ্জের তিনটি শাখায় তিন হাজারের অধিক ঋণ গ্রহীতা। উপজেলায় আরও ১৮টি খেলাপি ঋণের মামলা চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।

ভুক্তভোগীর মেয়ে সায়মা বলেন, তার মা অসুস্থ মাত্র ৮১ হাজার টাকার জন্য ৬ মাসের সাজায় জেলে দেয়া হয়। শক্তি ফাউন্ডেশনের গাফিলতির কারনে এটা হয়েছে। মা’র কিছু হলে তাঁদেরকে দায় নিতে হবে।

নবাবগঞ্জ ইউএনও দিলরুবা ইসলাম বলেন, এনজিওর বিষয়ে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মগধরায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী

নবাবগঞ্জে শক্তি ফাউন্ডেশনের করা ৮১ হাজার টাকার ঋণের মামলায় বৃদ্ধা কারাগারে

Update Time : 08:05:28 pm, Tuesday, 26 August 2025

ঢাকার নবাবগঞ্জে প্রবাসী ছেলের জন্য এনজিও থেকে নেয়া ঋণের ফাঁদে পড়ে পারুল বেগম (৬০) নামের এক বৃদ্ধা ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। মাত্র ৮১ হাজার টাকার ঋণের দায়ে বৃদ্ধা মহিলাকে কারাগারে পাঠিয়েছে শক্তি ফাউন্ডেশন। ‘নারীর ক্ষমতায়নে শক্তি’ এই স্লোগানে তাদের কার্যক্রম চালালেও বাস্তবে বৃদ্ধা নারীকেই কারাগারে পাঠালো এনজিওটি।

রোববার (২৪ আগষ্ট) বিকেলে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর চাপে বৃদ্ধাকে জামিনের আশ্বাস দেয় এনজিও শক্তি ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়ক রমজান আলী।

গত বৃহষ্পতিবার দুপুরে ২০ হাজার টাকা কিস্তি দিলেও রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কারাভোগকৃত পারুল বেগম উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রামের আব্দুল করিমের স্ত্রী।

এনজিওটির স্থানীয় কার্যালয় উপজেলা সদর কলাকোপা ইউনিয়নের পানালিয়া গ্রামে।

ঋণ গ্রহিতা পরিবার ও শক্তি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানায়, পারুল বেগম ২০২২ সালের ১৩ জুন পানালিয়া শাখা শক্তি ফাউন্ডেশন থেকে প্রবাসী খাতে ৪ লাখ টাকা ঋণ নেয়। ১৮ মাস মেয়াদে তা পরিশোধ করার ছিল। কিন্তু ছেলে প্রবাস থেকে টাকা দিতে না পারায় নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তিন তারিখে আদালতে মামলা করে শক্তি ফাউন্ডেশন। শক্তি ফাউন্ডেশনের পক্ষে হিসাব রক্ষক মানিক হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপরও ওই নারী আরো ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। পরে মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ৬ মাসের সাজার রায় হয়। এনজিও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নারীকে জানায়নি।

এনজিও’র হিসাব রক্ষক মানিক হোসেন জানান, সুদসহ ওই ঋণের পরিমাণ দাড়ায় ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩২৮ টাকা। এ পর্যন্ত পারুল বেগম ৪ লাখ ১৪ হাজার ১০৪ টাকা পরিশোধ করেছেন। আরো ৮১ হাজার ৩২৪ টাকা অপরিশোধিত রয়েছে।

এ ঘটনায় গত বৃহষ্পতিবার রাতে বৃদ্ধাকে পুলিশ সাজা পরোয়ানার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। বিষয়টি এনজিওকে জানালে তারা গুরুত্ব দেয়নি। পরে রোববার দুপুরে ঋণ গ্রহিতার মেয়ে সায়মা আক্তার স্থানীয়দের জানালে তারা শক্তি ফাউন্ডেশনের পানালিয়া শাখায় গিয়ে বিস্তারিত জেনে ওই নারীকে মুক্ত করতে চাপ দেয়। এসময় শাখা ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান তাঁদেরকে বসিয়ে রেখে কয়েক ঘন্টা কালক্ষেপন করে উধাও হয়ে যায়।

উত্তেজনা শুরু হলে ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়ক রমজান আলী এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার পারুল বেগমকে জামিনের ব্যবস্থা করা হবে। উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের সাথে কথা হয়েছে।

আঞ্চলিক তত্তাবধায়ক আরও জানান, নবাবগঞ্জের তিনটি শাখায় তিন হাজারের অধিক ঋণ গ্রহীতা। উপজেলায় আরও ১৮টি খেলাপি ঋণের মামলা চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।

ভুক্তভোগীর মেয়ে সায়মা বলেন, তার মা অসুস্থ মাত্র ৮১ হাজার টাকার জন্য ৬ মাসের সাজায় জেলে দেয়া হয়। শক্তি ফাউন্ডেশনের গাফিলতির কারনে এটা হয়েছে। মা’র কিছু হলে তাঁদেরকে দায় নিতে হবে।

নবাবগঞ্জ ইউএনও দিলরুবা ইসলাম বলেন, এনজিওর বিষয়ে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।