রাঙ্গুনিয়ায় সাংবাদিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন দিন দিন বেড়েই চলেছে। হাতে একটি মোবাইল, গলায় ঝুলানো অপরিচিত কোনো সংগঠনের পরিচয়পত্র, এ দু’টিই এখন অনেকের কাছে ‘সাংবাদিক’ হওয়ার যোগ্যতা। অথচ সাংবাদিকতা একটি নৈতিক পেশা, যেখানে তথ্য যাচাই, নিরপেক্ষতা ও পেশাগত দায়িত্বশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসব উপাদানকে পাশ কাটিয়ে এক শ্রেণির তুনোধুনো বা ভুঁইফোড় সাংবাদিকতার দৌরাত্ম্য বাড়ছে, যা পুরো পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ভুঁইফোড় পোর্টাল ও পরিচয়পত্রের ব্যবসা: স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়ায় একাধিক ভুঁইফোড় সাংবাদিক তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন অনিবন্ধিত পোর্টাল থেকে সহজেই পরিচয়পত্র পেয়ে যাচ্ছে। অনেকেই সেই পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ছেন, এমনকি কখনো কখনো ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্যও তা ব্যবহার করছেন। অথচ তাদের কোনো জাতীয় বা আঞ্চলিক দৈনিক, নিবন্ধিত অনলাইন সংবাদপত্র কিংবা বৈধ মিডিয়ায় সম্পৃক্ততা নেই।
ফেসবুক লাইভ আর কাগুজে খবর: এ ছাড়া, অনেকে ফেসবুক লাইভকেই ‘সংবাদ’ হিসেবে চালাচ্ছেন। মোবাইলে ভিডিও করে সঙ্গে সঙ্গে প্রচার করাই যেন সাংবাদিকতার মূল কাজ। কিন্তু এসব তথাকথিত ‘সংবাদে’ থাকে না তথ্য যাচাই, থাকে না সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য। ফলাফল, ভুল তথ্য, বিভ্রান্তি আর জনমনে অবিশ্বাস।
প্রকৃত সাংবাদিকদের ক্ষোভ: প্রকৃত সাংবাদিকরা মনে করছেন, ভুঁইফোড়দের কারণে তাদের দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম এখন মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে।
একজন প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, “আমরা মাঠে থেকে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, অনিয়ম আর সমস্যা তুলে ধরি। অথচ ভুঁইফোড় সাংবাদিকরা কেবল পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রভাব খাটাতে চাইছে। এতে আসল সাংবাদিকতার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া: অনেক নাগরিক মনে করেন, এসব ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের কারণে আসল সাংবাদিকদের সংবাদও এখন অবিশ্বাসের মুখে পড়ছে। স্কুল, হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি সাধারণ ঘটনাকেও ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
সমাধানের পথ: সাংবাদিকতার মান রক্ষা ও জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
১, প্রশাসনের ভূমিকা: বৈধ সংবাদমাধ্যমের তালিকা প্রণয়ন, ভুঁইফোড় সংগঠন ও পরিচয়পত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ।
২, সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা: প্রবীণ ও প্রকৃত সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মান রক্ষার আন্দোলন গড়ে তোলা।
৩, জনসচেতনতা: জনগণকে সচেতন করে তোলা—প্রতিটি তথ্যের উৎস যাচাই ছাড়া বিশ্বাস না করা।
রাঙ্গুনিয়ার সাংবাদিকতা এক সময় মানুষের আস্থা অর্জন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে তুনোধুনো সাংবাদিকতার ছড়াছড়িতে সেই আস্থা ক্ষয় হচ্ছে। যদি এখনই পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে আসল সাংবাদিকতাই হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে। সাংবাদিকতা পেশাকে বাঁচাতে হলে প্রশাসন, সাংবাদিক সমাজ এবং সচেতন মহল সবার সম্মিলিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।