চট্টগ্রাম 5:13 am, Saturday, 6 September 2025

নবাবগঞ্জে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন; অধ্যক্ষ বরখাস্ত

নবাবগঞ্জে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকার নবাবগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমুন আখতারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে বিদ্যালয়ের জ্যাষ্ঠ শিক্ষক জাকির হোসেন মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে মৌখিকভাবে বলেন, কমিউনিটি ব্যাংক গুলশান ব্রাঞ্চ থেকে জানানো হয়, ‘ একই ব্যাংকের নবাবগঞ্জ ব্রাঞ্চের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার একটি চেক জমা দেয়া হয়েছে। তাতে সভাপতির (ইউএনও) স্বাক্ষরে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় চেকটি ইস্যুবিহীন। এবিষয়ে সাবেক অধ্যক্ষ নাজমুন আখতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ চেকটি ইস্যু করেনি বলে ব্যাংকে লিখিত দিয়েছেন।’

ইউএনও আরও বলেন, আমি জানতে পেরেছি, চেকটি বহন করছিলেন নাজমুন আখতারের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ও তাঁর মেয়ে। এ মর্মে গুলশান থানায় জসিম উদ্দিন ও আসফিয়া নামের দুই জনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রমজান আলীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি, নাজমুন আখতার তার কাছ থেকে গত ২১ আগষ্ট জোরপূর্বক চেক বই নিয়ে নেয় এবং সেখান থেকে ৫টি চেকের পাতা রেখে দুই দিন পর চেক বই ফেরত দেয়া হয়।

স্টেটমেন্ট এনে দেখতে পাই, গত ২৫ আগষ্ট আসফিয়া নামের একজন ৪ লাখ ১১ হাজার টাকা লেনদেন করেছেন। সে সব চেক ইস্যুবিহীন এবং আমি ঐসব চেকে স্বাক্ষর করিনি। এবিষয়ে অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এলাকার গন্যমান্যদের সাথে আলোচনা করে নাজমুন আখতারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সাথে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী বিদ্যালয়ে জ্যাষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ইউএনও আরও বলেন, ইতিপূর্বে নাজমুন আখতারের বিরুদ্ধে আরও দুইটি অভিযোগের বিষয়ে কমিটি তদন্ত করে যাচ্ছে। ঐ তদন্ত কমিটি জানিয়েছেন, নাজমুন আখতারের কাছে যে সব তথ্য তারা চেয়েছেন তিনি তা সরবরাহ করেননি। চুড়ান্ত সময়ে কমিটি অসহযোগীতার সেই প্রতিবেদন জমা দিয়ে দেবেন।

বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রমজান আলী এবিষয়ে বলেন, গত ২১ আগষ্ট বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে পৌনে ৪টার দিকে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের সামনে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমুন আখতার আমাকে চেক বই দিতে বলেন। শিক্ষকদের সামনে আমি চেক বই বুঝিয়ে দেই। দুই দিন পর চেক বই আমাকে ফেরত দেয়া হয়। দেখি সেখান থেকে ৭১ থেকে ৭৫ নম্বর পর্যন্ত চেকের পাতা নেই। পরে চেক জালিয়োতির বিষয়ে জানতে পারি। এই চেকের বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করবো।

এবিষয়ে জানতে নবাবগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমুন আখতারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়। অফিসে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মিরসরাইয়ে ছাত্রনেতা এয়াছিন শিপনের ১৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও স্মরণসভা

নবাবগঞ্জে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন; অধ্যক্ষ বরখাস্ত

Update Time : 04:05:37 pm, Friday, 5 September 2025

নবাবগঞ্জে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকার নবাবগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমুন আখতারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে বিদ্যালয়ের জ্যাষ্ঠ শিক্ষক জাকির হোসেন মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে মৌখিকভাবে বলেন, কমিউনিটি ব্যাংক গুলশান ব্রাঞ্চ থেকে জানানো হয়, ‘ একই ব্যাংকের নবাবগঞ্জ ব্রাঞ্চের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার একটি চেক জমা দেয়া হয়েছে। তাতে সভাপতির (ইউএনও) স্বাক্ষরে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় চেকটি ইস্যুবিহীন। এবিষয়ে সাবেক অধ্যক্ষ নাজমুন আখতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ চেকটি ইস্যু করেনি বলে ব্যাংকে লিখিত দিয়েছেন।’

ইউএনও আরও বলেন, আমি জানতে পেরেছি, চেকটি বহন করছিলেন নাজমুন আখতারের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ও তাঁর মেয়ে। এ মর্মে গুলশান থানায় জসিম উদ্দিন ও আসফিয়া নামের দুই জনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রমজান আলীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি, নাজমুন আখতার তার কাছ থেকে গত ২১ আগষ্ট জোরপূর্বক চেক বই নিয়ে নেয় এবং সেখান থেকে ৫টি চেকের পাতা রেখে দুই দিন পর চেক বই ফেরত দেয়া হয়।

স্টেটমেন্ট এনে দেখতে পাই, গত ২৫ আগষ্ট আসফিয়া নামের একজন ৪ লাখ ১১ হাজার টাকা লেনদেন করেছেন। সে সব চেক ইস্যুবিহীন এবং আমি ঐসব চেকে স্বাক্ষর করিনি। এবিষয়ে অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এলাকার গন্যমান্যদের সাথে আলোচনা করে নাজমুন আখতারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সাথে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী বিদ্যালয়ে জ্যাষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ইউএনও আরও বলেন, ইতিপূর্বে নাজমুন আখতারের বিরুদ্ধে আরও দুইটি অভিযোগের বিষয়ে কমিটি তদন্ত করে যাচ্ছে। ঐ তদন্ত কমিটি জানিয়েছেন, নাজমুন আখতারের কাছে যে সব তথ্য তারা চেয়েছেন তিনি তা সরবরাহ করেননি। চুড়ান্ত সময়ে কমিটি অসহযোগীতার সেই প্রতিবেদন জমা দিয়ে দেবেন।

বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রমজান আলী এবিষয়ে বলেন, গত ২১ আগষ্ট বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে পৌনে ৪টার দিকে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের সামনে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমুন আখতার আমাকে চেক বই দিতে বলেন। শিক্ষকদের সামনে আমি চেক বই বুঝিয়ে দেই। দুই দিন পর চেক বই আমাকে ফেরত দেয়া হয়। দেখি সেখান থেকে ৭১ থেকে ৭৫ নম্বর পর্যন্ত চেকের পাতা নেই। পরে চেক জালিয়োতির বিষয়ে জানতে পারি। এই চেকের বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করবো।

এবিষয়ে জানতে নবাবগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমুন আখতারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়। অফিসে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।