স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন (ইপসা), সেইভ দ্যা চিল্ড্রেন এর সহযোগিতায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় কর্তৃক বাস্তবায়িত “এন্টিসিপেটরি এ্যাকশন ফর ল্যান্ড স্লাইড কসিং ডিসেপ্লেসমেন্ট ইন চট্টগ্রাম এন্ড বান্দরবান ডিষ্ট্রিকস ইন বাংলাদেশ” প্রকল্পের আওতায় আজ ৯ অক্টোবর রোজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগরীতে ইপসার উদ্যোগে পাহাড় ধ্বসে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য অস্থায়ী নিরাপদ স্থান বা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতির গাইডলাইন বৈধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত বৈধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আশরাফুল আমিন, সচিব এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপসছিলেন জনাব মোচ্ছাম্মদ রাশেদা আকতার, শিক্ষা কর্মকর্তা (উপ-সচিব), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জনাব আলমগীর হোসাইন, উপ-সহকারী পরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চট্টগ্রাম, আব্দুল্লাহ আল ওমর, নগর পরিকল্পনাবিদ, এছাড়াও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব সৌমেন ব্যানার্জি, লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ আজাদ ইকবাল পারভেজ, কোয়াড পি ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জনাব সানজিদা আফরিন, ফিরোজ শাহ কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জনাব ক্বাজি সোহানা সুলতানা, মোহাম্মদনগর এইচ কে সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মুশফিকুর রহমান, আমিন জুট মিলস আল হেরা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জনাব হেদায়েত উল্লাহ, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনির সহ ট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অবস্থিত পাহাড় ধ্বস প্রবণ ওয়ার্ড যথাক্রমে ০৭ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিব জনাব তোফায়েল আহমেদ, ০৮ নং ওয়ার্ড সচিব জনাব তাসলিম উদ্দিন, ০৯ নং ওয়ার্ড সচিব জনাব রুবেল কুমার শীল ও ১৪ নং ওয়ার্ড সচিব জনাব মুজিবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিগন উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত বৈধকরণ কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইপসার প্রজেক্ট ম্যানেজার জনাব সানজিদা আকতার। সানজিদা আকতার বলেন ”ইপসা ১৯৮৫ সাল থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে দূর্যোগ নিয়ে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইপসা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পাহাড় ধ্বস প্রবণ এলাকায় সেইভ দ্যা চিল্ড্রেন এর সহযোগিতায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় ০৭ ,০৮,০৯ ও ১৪ নং ওয়ার্ডে পাহাড় ধসের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পূর্বপ্রস্তুতি মূলক আগাম কার্যক্রম নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমরা আশা করছি এই প্রকল্পের কর্মকান্ডের মাধ্যমে আমরা সম্ভব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনতে পারবো”।
ইপসার প্রজেক্ট অফিসার আতাউল হাকিম এর সঞ্চালনায় উক্ত বৈধকরণ কর্মশালায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতি গাইডলাইন সম্পর্কে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ডক্টর মোরশেদ হোসেন মোল্লা, রিসার্চ, মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন ম্যানেজার, ইপসা। তিনি তার উপস্থাপনায় সেইফ শেল্টারের ডেবলপমেন্ট প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য, সেইফ শেল্টারের বর্তমান অবস্থা, গ্যাপ এন্ড চ্যালেঞ্জ ও ব্যবহার গাইডলাইন সম্পর্কে একটি বিশদ উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন।
উক্ত বৈধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে জনাব আশরাফুল আমিন বলেন, ”ইপসা সবসময় নতুনভাবে চিন্তা করে কাজ করে এবং তাদের কার্যক্রমে নগরবাসী নানা উপায়ে উপকৃত হয়। বিশেষ করে তারা চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে মানসম্মত ডাটা তৈরি করছে, যা চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা সহ এবং সমস্যা ভিত্তিক তথ্য-উপাত্তের যোগান দেয়।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় আশ্রয় কেন্দ্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনো তেমন কাজ হয়নি। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও এআই ব্যবহারও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে”।
বিশেষ অতিথি হিসেবে জনাব মোচ্ছাম্মদ রাশেদা আকতার, শিক্ষা কর্মকর্তা (উপ-সচিব) বলেন, কিছুদিন আগে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সময় হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপ কলে আমাদেরকে জরুরি করণীয় জানানো হয়। আমি ও আমার টিম দ্রুত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মতি ঝর্ণা এলাকায় গিয়ে মানুষকে সেফ স্পেসে/ নিরাপদ স্থানে যেতে উদ্বুদ্ধ করি। কিন্তু বাস্তবে কেউ ঘর ছাড়তে রাজি হয়নি। তখন বুঝলাম তারা সাহসী হলেও নিজেদের ঘর ছাড়তে অনিচ্ছুক। যদিও তারা আমাদের চেনে এবং বোঝে। তবুও, মূল কাজ হলো পাহাড়ধ্বসের ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সরিয়ে নেওয়া, যা দুর্যোগকালীন সময়ে সবচেয়ে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ।
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনির বলেন, নিরাপদ আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। দূর্যোগের সময় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত মানুষেরা আশ্রয়ন কেন্দ্রে যেতে আপত্তি জানানোর কারণ হলো তারা সেখানে নিরাপত্তা পায় না৷ কিশোরী, নারীদের জন্য আলাদা কক্ষে থাকার ব্যবস্থা যেমন করতে হবে তেমনি শিশু, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখতে হবে পৃথক বিভাগ৷ রাতে জেনারেটর, সোলার বা অন্য মাধ্যমে সার্বক্ষণিক আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। হটলাইন, চালু, কেন্দ্র ভিত্তিক টীম গঠন, সম্পদের সুরক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়ে সবকটি সংস্থার সমন্বয় ঘটাতে হবে৷
পরিশেষে, সভার সম্মতিক্রমে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়ধ্বস ঝুঁকি মোকাবেলায় ইপসার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতি গাইডলাইন বৈধকরণ কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন হয়।