রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চা খাওয়ানোর কথা বলে মানসিক প্রতিবন্ধী নারীর কাছ থেকে জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার আপন ভাই ও ভাই বউয়ের বিরুদ্ধে। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মাইয়ার বাড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় মানসিক প্রতিবন্ধী শাহেদা আক্তার ওরপে সাজুর (৫০) স্বামী নুর আহমদ(৫৫) বাদী হয়ে সাজুর ভাই মো. আইয়ুব ও প্রবাসে থাকা তার অন্য ভাইয়ের স্ত্রী রিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এখন থেকে প্রায় ২০বছর আগে সাজু নামে এই মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলার রাঙ্গুনিয়ার একটি ইউনিয়নে বিয়ে হয়েছিলো। প্রতিবন্ধী হওয়ায় সে বিয়ে বেশি দিন ঠিকেনি। পরে ডিভোর্সের মাধ্যমে তাকে নিজ বাপের বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এরপর ওই এলাকায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা থেকে নুর আহমদ নামে এই দিন মজুর কাজ করতে আসে। তার সাথে প্রতিবন্ধী সাজুর বিয়ে দিয়ে উত্তরাধিকারসূত্রে বাপের ভিটার জরাজীর্ণ ছোট্ট একটা ঘরে তাদের থাকতে দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘদিন তাদের সন্তান না হওয়ায় নূর আহমদ ৮বছর বয়সী এক শিশু ছেলেকে দত্তক হিসেবে নিয়ে আসেন। পরে সে ছেলের জন্মনিবন্ধন কার্ডে অভিভাবকত্ব দেওয়া হয় নূর আহমদ ও প্রতিবন্ধী সাজুকে। বর্তমানে ছেলেটির বয়স প্রায় ২৫ বছর। সে বিয়ে করার জন্য ঘর ঠিক করতে চাইলে সেখানেই বিপাক বাঁধে। প্রতিবন্ধী সাজুর ভাইয়েরা চাই না তার পালক সন্তান এখানে থাকুক। প্রতিবন্ধী সাজুর মৃত্যুর পর সে ছেলে জায়গার মালিকানা না পাওয়ার জন্য সাজুর ভাই আইয়ুব, আইয়ুবের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, এবং সাজুর প্রবাসী ভাই ইদ্রিসের স্ত্রী রিয়া আক্তার চা খাওয়ানোর নামে পরিকল্পনা করে সোমবার রাতে সাজুকে বাসা থেকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। পরে সেখানে টিপসই নিয়ে জায়গা রেজিস্ট্র করে নেন।
সাজুর স্বামী নুর হোসেন বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর বেশি এই মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছি। তারা আমার প্রতিবন্ধী ভারসাম্যহীন স্ত্রীকে চা খাওয়ানোর কথা বলে ঘর থেকে নিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওনা জমির টিপসই নিয়ে জায়গা তাদের নামে করে নিয়েছে। কান্নাজনিত কন্ঠে তিনি আরো বলেন, এই প্রতিবন্ধী মহিলাকে নিয়ে এখন আমি কি করবো কার কাছে যাব আমার জানা নেই। এই বিচার আমি আপনাদের কাছে দিলাম।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জায়গার টিপসই নেওয়ার কথা স্বীকার করেন তার ভাই এবং ভাইয়ের বউয়েরা। তবে তারা বলেন সাজু সেচ্ছায় জায়গা লিখে দিয়েছেন তাই নিয়েছি। আইয়ুবের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সাজুর স্বামী নুর আহমদ জায়গাটি বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে। জায়গা লিখে নিয়েছি তার পালক সন্তান যাতে জায়গার মালিক না হয়। সাজু এবং তার স্বামী চাইলে এখনে আজীবন থাকতে পারবে এতে আমাদের কোন বাঁধা নেই। তবে তাদের মৃত্যুর পর তাদের পালক সন্তান এখানে থাকতে পারবেনা।
এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মহিলা সদস্য জামিলা আক্তার জানান, প্রতিবন্ধী মহিলার টিপসইয়ের ইঙ্গিতে জায়গা নেওয়ার বিষয়টা ধারণা করা হয়েছে। পরে খবর নিয়ে জানতে পারলাম উত্তরাধিকার সূত্রে পাওনা জায়গা তার ভাইসহ ভাইয়ের বউয়েরা লিখে নিয়েছে।
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাঙ্গুনিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এ এস আই) আবু তাহের জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাদের এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বিএমএর নেতা ডাক্তার ফয়সল ইকবাল চৌধুরী’র সাথে কথা হয়েছে তিনি সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে মানসিক প্রতিবন্ধীর সাথে এমন ঘটনার নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। তারা প্রশাসনসহ সবাইকে প্রতিবন্ধী সাজুর পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।