চট্টগ্রাম 12:42 am, Friday, 4 July 2025

সীতাকুণ্ডে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার, দুর্ঘটনার শঙ্কা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পৌর এলাকায় সহস্রাধিক দোকান নিয়ে সীতাকুণ্ড বাজার। সেখানকার জাফর ইলেকট্রিক নামক দোকানের ভিতর বাইরে থরে থরে সাজানো গ্যাস সিলিন্ডার। পাশে দাহ্য পদার্থ গ্যাস লাইটার রিফিলের যন্ত্রপাতি। চলছে রিফিলের কাজও। একই সাথে গ্যাস সিলিন্ডারের ওপর রেখে চলছে গ্র্যান্ডিং মেশিনে চুলা মেরামতের কাজ। মেশিন থেকে আগুনের ফুলকি ছিটকে পড়ছে গ্যাস সিলিন্ডারগুলোতে। যেন এক বোমা সদৃশ দোকান। যে কোন মূহুর্তে ঘটতে পারে বিস্ফোরণ। দোকানটিতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা বা বিক্রির কোন অনুমোদন নেই। কেবল জাফর ইলেকট্রিকই নয় সীতাকুণ্ড বাজার ঘুরে নামে-বেনামে এমন অনেক দোকানের দেখা মেলে। যেসব মূলত খাবার, ইলেকট্রিক, মুদি কিংবা দাহ্য পদার্থ কালো লাকড়ির দোকান।

তথ্য অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুদ করতে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়ার বিধান রয়েছে। ২০০৪ সালের এলপিজি মজুত সংরক্ষণ আইনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতীত কেউ এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করতে পারবে না। গ্যাস সিলিন্ডার মজুত স্থান সব সময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেখানে কোনো প্রকারের আগুন বা বৈদ্যুতিক সংস্পর্শ না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সীতাকুণ্ডে যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম এর পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী খুচরা দোকানে বিক্রির জন্য সর্ব্বোচ্চ ৮টি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা যাবে। এক্ষেত্রে কেবল ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নিলেই হবে। ৮টি গ্যাস সিলিন্ডার বা সর্বমোট ১০০ লিটারের বেশি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু সীতাকুণ্ড পৌরসভায় একটি দোকানেরও বিস্ফোরক লাইসেন্স নেই।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল জানান, পৌর এলাকায় অর্ধশতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার দোকান রযেছে। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচটির ফায়ার লাইসেন্স আছে। এ লাইসেন্স নিতে হলে অবশ্যই দোকান ঘর পাকা হতে হবে।

এদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ফায়ার লাইসেন্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের পরিদর্শক জাহাঙ্গির আলম বলেন, আমার জানামতে সীতাকুণ্ডে কোন গ্যাস সিলিন্ডার দোকানের ফায়ার লাইসেন্স নেই এমনকি আমি কর্মস্থলে যোগ দেয়ার ৮ মাসে কোন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি দোকানকে লাইসেন্স দেইনি।

বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন তার লোকবল সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, শীঘ্রই অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হলাম। সীতাকুণ্ডে যে সমস্ত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের পর্যাপ্ত লাইসেন্স আছে কিনা অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বা মজুত করার কারনে দেশের প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এরপরও অসাধু ব্যবসায়ীদের আইন অমান্যের প্রবণতা কমছেনা। সীতাকুণ্ডে লাইসেন্সবিহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাইফ-এর উদ্যোগে ইউএনও রিগ্যান চাকমাকে হৃদয়বিদারক বিদায়ী সংবর্ধনা

সীতাকুণ্ডে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার, দুর্ঘটনার শঙ্কা

Update Time : 12:49:03 pm, Tuesday, 5 March 2024

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পৌর এলাকায় সহস্রাধিক দোকান নিয়ে সীতাকুণ্ড বাজার। সেখানকার জাফর ইলেকট্রিক নামক দোকানের ভিতর বাইরে থরে থরে সাজানো গ্যাস সিলিন্ডার। পাশে দাহ্য পদার্থ গ্যাস লাইটার রিফিলের যন্ত্রপাতি। চলছে রিফিলের কাজও। একই সাথে গ্যাস সিলিন্ডারের ওপর রেখে চলছে গ্র্যান্ডিং মেশিনে চুলা মেরামতের কাজ। মেশিন থেকে আগুনের ফুলকি ছিটকে পড়ছে গ্যাস সিলিন্ডারগুলোতে। যেন এক বোমা সদৃশ দোকান। যে কোন মূহুর্তে ঘটতে পারে বিস্ফোরণ। দোকানটিতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা বা বিক্রির কোন অনুমোদন নেই। কেবল জাফর ইলেকট্রিকই নয় সীতাকুণ্ড বাজার ঘুরে নামে-বেনামে এমন অনেক দোকানের দেখা মেলে। যেসব মূলত খাবার, ইলেকট্রিক, মুদি কিংবা দাহ্য পদার্থ কালো লাকড়ির দোকান।

তথ্য অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুদ করতে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়ার বিধান রয়েছে। ২০০৪ সালের এলপিজি মজুত সংরক্ষণ আইনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতীত কেউ এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করতে পারবে না। গ্যাস সিলিন্ডার মজুত স্থান সব সময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেখানে কোনো প্রকারের আগুন বা বৈদ্যুতিক সংস্পর্শ না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সীতাকুণ্ডে যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম এর পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী খুচরা দোকানে বিক্রির জন্য সর্ব্বোচ্চ ৮টি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা যাবে। এক্ষেত্রে কেবল ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নিলেই হবে। ৮টি গ্যাস সিলিন্ডার বা সর্বমোট ১০০ লিটারের বেশি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু সীতাকুণ্ড পৌরসভায় একটি দোকানেরও বিস্ফোরক লাইসেন্স নেই।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল জানান, পৌর এলাকায় অর্ধশতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার দোকান রযেছে। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচটির ফায়ার লাইসেন্স আছে। এ লাইসেন্স নিতে হলে অবশ্যই দোকান ঘর পাকা হতে হবে।

এদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ফায়ার লাইসেন্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের পরিদর্শক জাহাঙ্গির আলম বলেন, আমার জানামতে সীতাকুণ্ডে কোন গ্যাস সিলিন্ডার দোকানের ফায়ার লাইসেন্স নেই এমনকি আমি কর্মস্থলে যোগ দেয়ার ৮ মাসে কোন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি দোকানকে লাইসেন্স দেইনি।

বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন তার লোকবল সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, শীঘ্রই অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হলাম। সীতাকুণ্ডে যে সমস্ত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের পর্যাপ্ত লাইসেন্স আছে কিনা অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বা মজুত করার কারনে দেশের প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এরপরও অসাধু ব্যবসায়ীদের আইন অমান্যের প্রবণতা কমছেনা। সীতাকুণ্ডে লাইসেন্সবিহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।