চট্টগ্রাম 1:29 am, Monday, 9 September 2024
প্রতিবন্ধী সন্তানের মানবেতর জীবনযাপন

ঋণ না নিয়েও এনজিও ‘টিএমএসএস’র মামলায় জেল খাটছে প্রতিবন্ধী’র মা

বেসরকারী এনজিও প্রতিষ্ঠান ‘টিএমএসএস’ এর গাফিলতির মাসুল দিচ্ছে তিন সদস্যের এক প্রতিবন্ধী পরিবার। কোন প্রকার ঋণ না নিয়েও প্রতিবন্ধী এ পরিবারের একমাত্র সুস্থ ব্যক্তিটি টিএমএসএস অর্থ মামলায় ৫দিন ধরে কারাবাস করছে। ফলে চরম অসহায়ত্বে দিন কাটছে পরিবারটি।

স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের মাইলাইল গ্রামের ‘টিএমএসএস’ এর গ্রাহক রিনা বেগম। গত তিন বছর আগে ১ বছরে ১২ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে এক লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন । ছয় মাস পর রিনা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ ফজল মৃত্যুবরণ করলে কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব হয়। আর বিলম্ভের কারনে ঋণ গ্রহিতা রিনাকে আসামী না করে জামিনদার বকুল বেগমের নামে আদালতে মামলা দায়ের করে টিএমএসএস। আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বের হলে জামিনদার বকুল বেগমকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। পরে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ইংরেজি তারিখে এক লাখ বিশ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয় টিএমএসএসকে । আর মামলা তুলে নেয়ার জন্য ‘টিএমএসএস’ আরো দশ হাজার টাকা দাবী করলে সে দশ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন তিনি।

ঘটনায় দেখা যায়, ‘টিএমএসএস’ সম্পূর্ণ টাকা বুঝে পেয়েও জামিনদার বকুল বেগমকে এ মামলা থেকে নিঃস্কৃতি দেয়নি। আদালত থেকে মামলা তুলেও নেয়নি। এদিকে বকুল টাকা পরিশোধ করে নিশ্চিন্ত হলেও আদালতকে টাকা প্রাপ্তির তথ্য গোপন করে। এ কারনে আদালত বকুলকে পলাতক দেখিয়ে এক লাখ বিশ টাকা অর্থদন্ড ও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়।
এঘটনায় ‘টিএমএসএস’ র গাফিলতির মাসুল দিতে হচ্ছে অসহায় প্রতিবন্দী পরিবারটিকে। এ পরিবারের প্রতিবন্দী রাসেল সাংবাদিকদের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার মা ট্যাকা নেয় নাই। আমার মায়রে পুলিশে ধইরা নিছে ক্যা। আমি অহন কি করুম, ক্যেমনে খামু। আমি মায়রে ছাড়া ঘুমাইতে পারি না। আমার মায়রে ছাড়া আমি বাঁচুম না। আমার মায়রে আপনারা আইনা দেন।

‘টিএমএসএস’ ম্যানেজার ওমর ফারুক বলেন, একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা দ্রুত জামিন করে এ মামলা থেকে সে যাতে দ্রুত নিঃস্কৃতি পায় সে ব্যবস্থা করতে সহায়তা করব।

এদিকে এ ঘটনায় নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ‘টিএমএসএস’ এর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনেছি। একটি অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক ঘটনায় অসহায় একটি পরিবারের নারী জেল খাটছে। ‘টিএমএসএস’ র গাফিলতি পেয়েছি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে পরিবারটিকে। এ পরিবারটির একমাত্র সুস্থ্য ব্যক্তি বকুল বেগম জেলে থাকায় পরিবারটি এখন মানবেতর দিন কাটছে। সে যাতে মামলা থেকে রক্ষা পায় সে ব্যবস্থা নিতে এনজিও প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দিয়েছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সন্দ্বীপে সাপের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু

প্রতিবন্ধী সন্তানের মানবেতর জীবনযাপন

ঋণ না নিয়েও এনজিও ‘টিএমএসএস’র মামলায় জেল খাটছে প্রতিবন্ধী’র মা

Update Time : 02:00:14 am, Thursday, 28 December 2023

বেসরকারী এনজিও প্রতিষ্ঠান ‘টিএমএসএস’ এর গাফিলতির মাসুল দিচ্ছে তিন সদস্যের এক প্রতিবন্ধী পরিবার। কোন প্রকার ঋণ না নিয়েও প্রতিবন্ধী এ পরিবারের একমাত্র সুস্থ ব্যক্তিটি টিএমএসএস অর্থ মামলায় ৫দিন ধরে কারাবাস করছে। ফলে চরম অসহায়ত্বে দিন কাটছে পরিবারটি।

স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের মাইলাইল গ্রামের ‘টিএমএসএস’ এর গ্রাহক রিনা বেগম। গত তিন বছর আগে ১ বছরে ১২ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে এক লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন । ছয় মাস পর রিনা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ ফজল মৃত্যুবরণ করলে কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব হয়। আর বিলম্ভের কারনে ঋণ গ্রহিতা রিনাকে আসামী না করে জামিনদার বকুল বেগমের নামে আদালতে মামলা দায়ের করে টিএমএসএস। আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বের হলে জামিনদার বকুল বেগমকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। পরে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ইংরেজি তারিখে এক লাখ বিশ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয় টিএমএসএসকে । আর মামলা তুলে নেয়ার জন্য ‘টিএমএসএস’ আরো দশ হাজার টাকা দাবী করলে সে দশ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন তিনি।

ঘটনায় দেখা যায়, ‘টিএমএসএস’ সম্পূর্ণ টাকা বুঝে পেয়েও জামিনদার বকুল বেগমকে এ মামলা থেকে নিঃস্কৃতি দেয়নি। আদালত থেকে মামলা তুলেও নেয়নি। এদিকে বকুল টাকা পরিশোধ করে নিশ্চিন্ত হলেও আদালতকে টাকা প্রাপ্তির তথ্য গোপন করে। এ কারনে আদালত বকুলকে পলাতক দেখিয়ে এক লাখ বিশ টাকা অর্থদন্ড ও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়।
এঘটনায় ‘টিএমএসএস’ র গাফিলতির মাসুল দিতে হচ্ছে অসহায় প্রতিবন্দী পরিবারটিকে। এ পরিবারের প্রতিবন্দী রাসেল সাংবাদিকদের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার মা ট্যাকা নেয় নাই। আমার মায়রে পুলিশে ধইরা নিছে ক্যা। আমি অহন কি করুম, ক্যেমনে খামু। আমি মায়রে ছাড়া ঘুমাইতে পারি না। আমার মায়রে ছাড়া আমি বাঁচুম না। আমার মায়রে আপনারা আইনা দেন।

‘টিএমএসএস’ ম্যানেজার ওমর ফারুক বলেন, একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা দ্রুত জামিন করে এ মামলা থেকে সে যাতে দ্রুত নিঃস্কৃতি পায় সে ব্যবস্থা করতে সহায়তা করব।

এদিকে এ ঘটনায় নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ‘টিএমএসএস’ এর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনেছি। একটি অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক ঘটনায় অসহায় একটি পরিবারের নারী জেল খাটছে। ‘টিএমএসএস’ র গাফিলতি পেয়েছি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে পরিবারটিকে। এ পরিবারটির একমাত্র সুস্থ্য ব্যক্তি বকুল বেগম জেলে থাকায় পরিবারটি এখন মানবেতর দিন কাটছে। সে যাতে মামলা থেকে রক্ষা পায় সে ব্যবস্থা নিতে এনজিও প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দিয়েছি।