চট্টগ্রাম 9:41 am, Tuesday, 15 October 2024

গ্রিসে ভযাবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় হাটহাজারীর ইদ্রিসের মৃত্যু 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গ্রীসে ভযাবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় মো.ইদ্রিস(৪০) নামের হাটহাজারীর এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার(০৩ মার্চ) দিবাগত রাত তিনটার দিকে জামিল ও বাচ্চু নামের দুই ব্যবসায়ী বন্ধু তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত মঙ্গলবার ২৮ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে গ্রিসের লারিসা শহরের কাছে ট্রেন দূর্ঘটনার ঘটনায় সে প্রান হারায়।

নিহত ইদ্রিস হাটহাজারী উপজেলার ৮ নং মেখল ইউনিয়নের ৯ নং ওযার্ড এলাকার মৃত সাহেব মিয়ার পুত্র।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে,বাল্যকালে পিতৃহারা ইদ্রিস ভাগ্য বদলের আশায় দীর্ঘ বছর পূর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান।  পরে সেখান থেকে গত প্রায ৯ বছর পূর্বে উন্নত জীবনের আশায ইউরোপিয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গ্রীসে চলে যান। ইউরোপের দেশ গ্রীসে কাগজপত্র হবার পর থেকে পরিবারের মা, ভাই বোনদের নিয়ে ভালই চলছিল দিনগুলো। পরে গত আনুমানিক তিন বছর পূর্বে দেশে ছুটিতে এসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করে যুগল জীবন শুরু করেন। গ্রিসে ভ্রাম্যমান ব্যবসা করা ইদ্রিস গত বছরখানেক আগে সর্বশেষ দেশে ছুটি কাটিয়ে পুনরায় প্রবাসে চলে যান। নিহতের বাল্যবন্ধু ওমান প্রবাসী জিয়া হাসানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, সম্পর্কে ভাগিনা(চাচাতো বোনের ছেলে)হলেও একই বয়সী হওযাতে আমরা ছিলাম ভাই, বন্ধুর মতো। যেদিন তাকে বহনকারী ট্রেন দূর্ঘটনার স্বীকার হয় সেদিন ট্রেন ছাড়ার ৩০ মিনিট আগেও আমার সাথে ফোনে কথা হযেছিলো ইদ্রিসের। ইদ্রিস বলেছিলো, কার্ড নবায়ন করতে সে ওই শহরে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই আজ ট্রেনে ভ্রমন করতে ইচ্ছে করছে না। ” অনেক কথা হযেছিলো, ভিডিও কলে ট্রেনটা এবং কোথায় সে বসেছে সে সিট সব দেখিযেছিলো সেরাতে। তার সিট ছিলো ২ নং বগিতে। পরে রাত বেশি হযে যাওযাতে ওই শহরে পৌঁছে সকালে ফোন দিবে বলে ভাই(ইদ্রিস)বিদায় নিলো। বুঝতে পারিনি এ বিদায শেষ বিদায় হবে। আমি কিছুতেই মনকে শান্তনা দিতে পারছিনা। এ রিপোর্ট লিখার সময বাংলাদেশ সময শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে গ্রীসের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিহতের বন্ধু জামিল ও বাচ্চু অবস্থান করছে। তারা জানান,  প্রযোজনীয প্রক্রিয়া শেষে হলে আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে ইদ্রিসের মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে নিহতের আপন ছোট ভাই অনেকটা বাকরুদ্ধ ইলিয়াস জানায, ‘ভাইকে এভাবে হারিয়ে ফেলবো কখনও কল্পনাও করিনি। আমি আর কি বলবো’ বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য বেলাল উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে গতকাল রাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে ইদ্রিস মারা গেছে। দূর্ঘটনায ট্রেনের বগিতে আগুন ধরে যাওযাতে তার শরীরের প্রায় ৮০ ভাগ পুড়ে যায়। তাই ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, গ্রিসে প্রায সাড়ে তিনশ যাত্রী বহন করা ওই ট্রেনটির একই পথে আসা অপর একটি কার্গো ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে অনেক বগি ছিটকে পড়ে যায়।এসময় কয়েকটি বগিতে আগুন ধরে যায়৷ এর ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে৷গ্রিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ ট্রেন দূর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৭ জন মারা গেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশ পূর্ণগঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ কর

গ্রিসে ভযাবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় হাটহাজারীর ইদ্রিসের মৃত্যু 

Update Time : 04:36:46 pm, Saturday, 4 March 2023

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গ্রীসে ভযাবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় মো.ইদ্রিস(৪০) নামের হাটহাজারীর এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার(০৩ মার্চ) দিবাগত রাত তিনটার দিকে জামিল ও বাচ্চু নামের দুই ব্যবসায়ী বন্ধু তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত মঙ্গলবার ২৮ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে গ্রিসের লারিসা শহরের কাছে ট্রেন দূর্ঘটনার ঘটনায় সে প্রান হারায়।

নিহত ইদ্রিস হাটহাজারী উপজেলার ৮ নং মেখল ইউনিয়নের ৯ নং ওযার্ড এলাকার মৃত সাহেব মিয়ার পুত্র।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে,বাল্যকালে পিতৃহারা ইদ্রিস ভাগ্য বদলের আশায় দীর্ঘ বছর পূর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান।  পরে সেখান থেকে গত প্রায ৯ বছর পূর্বে উন্নত জীবনের আশায ইউরোপিয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গ্রীসে চলে যান। ইউরোপের দেশ গ্রীসে কাগজপত্র হবার পর থেকে পরিবারের মা, ভাই বোনদের নিয়ে ভালই চলছিল দিনগুলো। পরে গত আনুমানিক তিন বছর পূর্বে দেশে ছুটিতে এসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করে যুগল জীবন শুরু করেন। গ্রিসে ভ্রাম্যমান ব্যবসা করা ইদ্রিস গত বছরখানেক আগে সর্বশেষ দেশে ছুটি কাটিয়ে পুনরায় প্রবাসে চলে যান। নিহতের বাল্যবন্ধু ওমান প্রবাসী জিয়া হাসানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, সম্পর্কে ভাগিনা(চাচাতো বোনের ছেলে)হলেও একই বয়সী হওযাতে আমরা ছিলাম ভাই, বন্ধুর মতো। যেদিন তাকে বহনকারী ট্রেন দূর্ঘটনার স্বীকার হয় সেদিন ট্রেন ছাড়ার ৩০ মিনিট আগেও আমার সাথে ফোনে কথা হযেছিলো ইদ্রিসের। ইদ্রিস বলেছিলো, কার্ড নবায়ন করতে সে ওই শহরে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই আজ ট্রেনে ভ্রমন করতে ইচ্ছে করছে না। ” অনেক কথা হযেছিলো, ভিডিও কলে ট্রেনটা এবং কোথায় সে বসেছে সে সিট সব দেখিযেছিলো সেরাতে। তার সিট ছিলো ২ নং বগিতে। পরে রাত বেশি হযে যাওযাতে ওই শহরে পৌঁছে সকালে ফোন দিবে বলে ভাই(ইদ্রিস)বিদায় নিলো। বুঝতে পারিনি এ বিদায শেষ বিদায় হবে। আমি কিছুতেই মনকে শান্তনা দিতে পারছিনা। এ রিপোর্ট লিখার সময বাংলাদেশ সময শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে গ্রীসের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিহতের বন্ধু জামিল ও বাচ্চু অবস্থান করছে। তারা জানান,  প্রযোজনীয প্রক্রিয়া শেষে হলে আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে ইদ্রিসের মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে নিহতের আপন ছোট ভাই অনেকটা বাকরুদ্ধ ইলিয়াস জানায, ‘ভাইকে এভাবে হারিয়ে ফেলবো কখনও কল্পনাও করিনি। আমি আর কি বলবো’ বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য বেলাল উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে গতকাল রাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে ইদ্রিস মারা গেছে। দূর্ঘটনায ট্রেনের বগিতে আগুন ধরে যাওযাতে তার শরীরের প্রায় ৮০ ভাগ পুড়ে যায়। তাই ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, গ্রিসে প্রায সাড়ে তিনশ যাত্রী বহন করা ওই ট্রেনটির একই পথে আসা অপর একটি কার্গো ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে অনেক বগি ছিটকে পড়ে যায়।এসময় কয়েকটি বগিতে আগুন ধরে যায়৷ এর ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে৷গ্রিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ ট্রেন দূর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৭ জন মারা গেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।