চট্টগ্রাম 2:19 am, Tuesday, 1 July 2025

চট্টগ্রাম -১ মিরসরাইয়ে কে হবেন ৬ষ্ঠ সাংসদ?

রাত পোহালে ভোট। ভোটের মাঠ এখন উৎসব মুখর। প্রার্থী কর্মী সমর্থকদের শুরু হয়েছে হৃদকম্পন। কে হারবে আর কে জিতবে নানা হিসেব নিকেষ। চুল চেরা বিশ্লেষণ।

ভোটের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষার কঠিন অপেক্ষা।

অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত চট্টগ্রামের প্রবেশধার অসংখ্য পীর আউলিয়ার পূর্ণ্যভূমি বুনো ঝর্ণার শহর পূর্বে পাহাড় পশ্চিমে সাগর বেষ্টিত এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চলের চাকা ঘুরছে যেখানে সেটাই মিরসরাই। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ হযে স্বাধীকার বা স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামের পরতে পরতে যেখানে আছে রক্তমাখা ইতিহাস। আছে রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক বরেন্য ব্যক্তিত্ববর্গ। সেই মিরসরাই জাতীয় নির্বাচন আসলেই নানা আলোচনার জন্ম দেয়। এবারও তাে ব্যতিক্রম নয়।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন ২৭৮ নং চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই থেকে ৬ষ্ঠ সাংসদ সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল ৭ জানুয়ারি’২৪ পর্যন্ত। তবে ভোটে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে মিরসরাইয়ের ৫১৫৫৯ জন নতুন ভোটার।

চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মীরসরাই উপজেলা। সংসদীয় এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৫ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৪১ জন পুরুষ ভোটার, ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮২ জন মহিলা ভোটার এবং দুজন রয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। ভোট কেন্দ্র ১০৬টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭১৭টি।

তার আগে জেনে রাখা দরকার ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ + ১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত ১০টি আসনসহ মোট ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আর ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদে সাধারণ নির্বাচনে ৩০০ + ১৩টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত ৭টি আসনসহ মোট ১৬৭টি আসন লাভ করে। ৫১.৩% ভোট সংগৃহীত হয়।
সে নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে মিরসরাইবাসী আবিষ্কার করলো ২৭ বছরের তরুণ তুর্কী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের। তিনিই নির্বাচিত হলেন এবং টানা ৫৪ বছর বর্ণাঢ্য আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির শোভাবর্ধন করে এই প্রথম তাঁর মেঝ ছেলেন হাতে তুলে দিলেন মিরসরাইয়ের আগামীর নেতৃত্ব। যদিও ঐসময়ে এডভোকেট আবুল খায়ের (উকিল)মোশাররফ হোসেনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। বাস প্রতিকে নির্বাচন করে তিনি হেরে যান। ঐসময়ের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কাকে বেচে নিবেন খায়ের নাকি মোশাররফ এই চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। সে যাত্রায় পার হয়ে মোশাররফ হোসেন অর্ধ শতাব্দী আর পিছনে তাকাতে হয়নি।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ ২৯৩ আসন জয়লাভ করে। মিরসরাইয়ে ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালের ততকালীন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর হারুন অর রশীদকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চট্টগ্রাম -১ আসন মিরসরাইয়ের প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন । জাতীয়ভাবে ৫৪.৯% ভোট সংগৃহীত হয়।

১৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নব গঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০৭ আসন জয়লাভ করে। মিরসরাই থেকে ওবায়দুল হক খোন্দকার (ওবায়েদ বলি) ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করে। অপর দিকে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ফজলুল হক বিএসসি। প্রথম নির্বাচনে চমক দেখান ধানের শীর্ষের প্রার্থী ওবায়েদ বলি খ্যাত ওবায়দুল হক খন্দকার। নৌকার প্রার্থীকেকে ৩৮৫ ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হোন। জাতীয়ভাবে ৫১.৩% ভোট সংগৃহীত হয়।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক বাহিনীর প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। সে থেকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পাটি গঠন করে থাকে। তিনি ৮ বছর ৮ মাস ১২ দিন ক্ষমতায় থেকে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঘোষণা দিয়ে ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। তার আগে ২ দফা ক্ষমতা আরোহন করে ভোটে নির্বাচিত হয়ে। ১৯৮৬ সালে ততকালীন ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ৫ দফার দাবীতে আ.লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন বর্জন ও স্বৈরাচারী এরশাদের বিরোধী আন্দোলন করে।

১৯৮৬ সালে ২১ মার্চ ১৫ দল নির্বাচনের ঘোষণা দিলে জোট ভেঙ্গে ৮ ও ৫ দলীয় আলাদা জোট হয়। ৮ দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। বিএনপি ও বাম ঘরনার ৫ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। ৩য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ মে ১৯৮৬ সালে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে । জাতীয়ভাবে জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসনে জয়লাভ করে। চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ৩৭০০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হোন। জাতীয় পাটির এডভোকেট আবু ছালেক ২১ হাজার ভোট ও জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা শামসুদ্দিন ২০ হাজার ভোট পেয়ে থাকেন। মোট ৬১.১% ভোট সংগৃহীত হয়।

৩ মার্চ ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলে প্যাড সর্বস্ব কিছু দল অংশ নেয়। এর মধ্যে তখনকার সময়ের আলোচিত হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে বটগাছ মার্কায় খেলাফত আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্ণেল ফারুক -রশীদের নেতৃত্বাধীন কুড়াল মার্কায় ফ্রিডম পার্টি, মশাল প্রতীকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে ৪ খলীফার একজন ডাকসুর সাবেক ভিপি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর একাংশের প্রধান আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ২৩ দলীয় জোট কমবাইন অপজিশন পার্টি (কপ)সহ গুটি কয়েক দল নির্বাচনে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টি ২৫১ আসনে জয়লাভ করে। চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আবু ছালেক অনেকটা বিনা বাঁধায় দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়। ১৯৯০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন পর্যন্ত মিরসরাইয়ে সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ৪র্থ সংসদে ৫২.৫% ভোট সংগৃহীত হয়।
১৪ জানুয়ারি ২০১৩ চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের জেষ্ঠ্য আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু ছালেক (৮৮) ইন্তেকাল করেন।

২৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীর্ষ থেকে নতুন প্রার্থী এম এ জিন্নাহ ও নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এম এ জিন্নাহ ২৭ হাজার ভোটে আ.লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পরাজিত করে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন । ৫৫.৫% ভোট জাতীয়ভাবে ভোট সংগৃহীত হয়।

১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধী দল বিহীন অপরিচিত দল নিয়ে একচেটিয়া নির্বাচনে বিএনপির ২৭৮ টি আসনে জয়লাভ করে। মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী ওবায়দুল হক খোন্দকার দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হোন। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদল নেতা এম এ কাসেম ও টেবিল প্রতিকের মঞ্জুরুল আলম। ৬ষ্ঠ সংসদ সম্মিলিত বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে ধারাবাহিক হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলনের মুখে ৪৩ দিনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সংসদ তত্ত্বাবধায়ক বিল সংসদ পাশ করে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পূনঃনির্বাচনের ঘোষণা দেয়।

১২ জুন ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম -১ মিরসরাইয়ে বিএনপির দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করে। একাধীক নেতা প্রার্থী হতে গিয়ে দলীয় কোন্দলের খবর বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কানে পৌঁছে যায়। ফলে কোন্দল ঠেকাতে বেগম খালেদা জিয়া ফেনী -১ (ছাগলনাইয়া – পরশুরাম- ফুলগাজী) আসনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই আসনে প্রার্থী হোন। তিনি ২ আসনেই বিজয়ী হোন। মিরসরাইয়ে আ.লীগ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে ৩ হাজার তিন শত ভোটে পরাজিত করে বিজয়ী হোন ।

১ অক্টোবর ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী এম এ জিন্নাহ আ.লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে ৪ হাজার চার শত ভোটে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মতো তিনি বিজয়ী হয় ।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম ডি এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় ১২ হাজার ভোটে পরাজিত করে। প্রাপ্ত ভোট ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১০৫৩৩৯, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন চৌধুরী ৯৪৬৬৫ ভোট।

৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে প্রধান প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলে অল্প কিছু দল নিয়ে আ.লীগ নির্বাচন করে এবং বিনা ভোটে ১৫৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হোন।

৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিএনপির প্রার্থী মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে পরাজিত করে বিজয়ী হোন। প্রাপ্ত ভোট মোশাররফ হোসেন ২ লাখ ৬৬ হাজার, নুরুল আমিন ৩ হাজার ৯ শত।

৭ জানুয়ারী’২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেঝ পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলকে দিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে তাঁর বাবা’র শীর্ষ। মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেডিকেল বন্ধু খ্যাত গিয়াস উদ্দিন। তিনি লিজেন্ডধারী নেতার মতো সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন। হাসপাতাল আদালত সামাজিক কর্মকান্ডে ছাড়াও তাঁর বড় প্লাস পয়েন্ট তরুণ উদ্যোক্তা জুনিয়র চেম্বার সভাপতি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের পুর্নাঙ্গ সমর্থন। এলিটের নিজস্ব বলয় নিয়ে গিয়াসের সাথে সর্বত্র ঈগল প্রতীকের ভোট প্রার্থনা বাড়তি সুবিধা যোগ হয়েছে গিয়াসের।
চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই আসনে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ভোট হবে সেয়ানে সেয়ানে।

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেঝ ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন লড়ছেন ঈগল প্রতীকে। এ আসনে জাতীয় পার্টির এমদাদ হোসাইন চৌধুরী , ইসলামিক ফ্রন্টের আবদুল মান্নান , বিএনএফের মোঃ ইউসুফ , বিএসপি নুরুল করিম আবসার এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল চৌঃ, মতো কম পরিচিত প্রার্থীও রয়েছে। তবে এ আসনে মূল লড়াই হবে ঈগল ও নৌকা প্রতীকের। অরস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আ.লীগের নিরাপদ আসন মীরসরাইয়ে নৌকার প্রার্থী রুহেলকে চোখ রাঙাচ্ছে স্বতন্ত্রের গিয়াস।

মূলত এই দুই প্রার্থীর মুখোমুখি জমজমাট ভোটের লড়াইয়ে চট্টগ্রাম-১ আসনের নির্বাচন উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। নৌকার নবীন এবং ঈগলের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের ভোট রঙ্গ দেখছে এলাকাবাসী । ফলে এই ভোটের লড়াইয়ে এই আসনে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্রে কোনো অঘটনও ঘটে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এবারের নির্বাচনে মাহবুব উর রহমান রুহেল এবং গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম-১ আসনে ভোটের ভিআইপি হয়ে উঠেছেন।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কমজমাট ভোটের আমেজ। পাড়া মহল্লায় সর্বত্র নির্বাচনী আলোচনার ঝড়। চট্টগ্রাম-১ আসনের ৭ বারের এমপি, সাবেক ২ বারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। নৌকা প্রতীকে এবার প্রার্থী হয়েছেন মোশাররফ মেঝ পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল। অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন। এলাকায় তিনি জনপ্রিয়। ফলে প্রথমবারের মতো ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে রুহেলকে লড়তে হবে এলাকার একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে।

মীরসরাইয়ে সাম্যবাদী দলের প্রার্থী ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই আসনে। মূল প্রতিদ্বন্দী রুহেল গিয়াস দুজনই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। একজন হেভিওয়েট পিতার সন্তান, অপরজন দীর্ঘ সময় ধরে তৃণমুল থেকে উঠে আসা মাঠের রাজনীতির নেতা। অপরদিকে এ আসনে দলীয় প্রার্থীর ছড়াছড়ি হলেও ভোটারেরা চেনেন না দল ও একাধিক প্রার্থীকে। দেশের ৪ বারের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় অপরিচিত দলের প্রার্থী বেড়েছে এবারের নির্বাচনে।
জনসমর্থনের দিক দিয়ে অতীতে সকল জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখানে সমানে-সমান। অতীতের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে এই আসনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা খুব সহজেই আ. লীগ প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। একই দলের নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ফলে নৌকার প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল ভোটযুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে টেক্কা দিতে হবে গিয়াস উদ্দিনকে।

সকল আড্ডার আলোচনায় আছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিনের (ঈগল পাখি) ভোট কোন অংশে কম নয়। দুই জনই আধুনিক শিক্ষিত স্মার্ট সুদর্শন। সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সচেতন ভোটারদের। নির্বাচন সামনে রেখে নানা কৌশলে সভা, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে পাড়া মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতিও।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের সমর্থকদের দাবি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাতবারের এমপি ও দুইবারের সাবেক সফল মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে মীরসরাইয়ের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরসহ পর্যটনবান্ধব মীরসরাই গড়তে নিরলসভাবে কাজ করেছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ।  এ ছাড়াও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ পাওয়া এবং সকল ১৬ ইউপি চেয়ারম্যান ও দুই মেয়র সকলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনুসারী বলে পরিচিত। তাই পিতার জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং নৌকার ভোট ব্যাংকের মাধ্যমে পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবেন বলে দাবি তাঁর অনুসারীদের।

অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকদের দাবি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রামের মেডিক্যাল বন্ধুখ্যাত মো. গিয়াস উদ্দিনের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়াও পদ বঞ্চিত প্রবীণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের অনুসারীদের সমর্থন তার পক্ষে থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন গিয়াস উদ্দিন।  নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত হলে সাধারণ ভোটারদের ভালোবাসায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন জয়লাভ করবেন এবং তাঁকে ঠেকাতে পারবেন না বলে দাবি তাঁর সমর্থকদের।

নির্বাচনের মাঠে নৌকার প্রার্থী রুহেল কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন সাধারণ ভোটারদের মাঝে যিনি ভোট পেতে শক্তি-সামর্থ্য ও কৌশলের ব্যর্তয় ঘটাতে সক্ষম হবেন তিনিই ভোটের পাল্লা ভারি করতে পারবেন। এ ছাড়াও এই আসনে যিনি প্রান্তিক ভোটারসহ নবীন ভোটারদের সমর্থন পাবেন তিনিই জয়ের মালা বলে মনে করেন সচেতন মহল।
নির্বাচনকে ঘিরেই সরগরম হয়েছে ভোটের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী রুহেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াসের সমর্থকদের মধ্যে ইতোমধ্যে হামলা, মামলা, গ্রেফতার ঘটনাও ঘটেছে।

রুহেল তাঁর প্রচারে আনছেন বিগত সময়ে মীরসরাই আসনে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর। বলছেন, তিনি তাঁর পিতার পথ ধরে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চান। বিভিন্ন এলাকায় তাঁর অনুসারীদের মধ্যে কঠোর অবস্থানও দেখা যাচ্ছে। ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের আবহ সৃষ্টির মধ্যে কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে। তবে ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবেই এ শঙ্কা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ গিয়াস অনুসারীদের।

গিয়াস উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবে। নির্বাচনকে তিনি উন্মুক্ত করেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে। দলের সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন, নেতাকর্মীরা দলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্যও কাজ করতে পারবেন। আমার মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। এতে মীরসরাইর জনগণ খুব দুঃখ পান। ফিরে পাওয়ায় তারা খুব খুশি।

জনগণের মাঝে যে জোয়ার উচ্ছ্বাস আকাক্সক্ষা তা যেন রাখতে পারে। মীরসরাইয়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তারা একটা সুযোগ পেয়েছে, একটা জায়গা থেকে বের হবার। যদিও আমার মার্কা ঈগল। আমিও কিন্তু নৌকার মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী। আমি জয়ী হলেও নৌকারই জয়।

তিনি আরও বলেন, ৫০ বছর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আমার। ৭৫ সাল থেকে দলের জন্য রাজপথে। দলের  নেতাকর্মীদের ত্যাগ অবদান অপরিসীম। ২০০১ এর পরে ২৯ লাশ পড়েছে, সেই লাশ আমি টেনেছি। ২০১২ থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত আমি নেতৃত্বে থেকে মোকাবিলা করেছি। আমি রাজপথ থেকে বেড়ে ওঠা কর্মী। ড্রইং রুম থেকে আসিনি। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা ফ্রি এন্ড  ফেয়ার নির্বাচন হবে। কাউকে কেন্দ্র দখল করতে দেওয়া হবে না। ইঞ্জিনিয়ার  মোশাররফকে আমি শ্রদ্ধা করি। উনি ত্যাগী। কিন্তু বাবার ত্যাগ ছেলের সঙ্গে যোগ হবে না। উনি উনার মতো এগিয়ে। আমি চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যতবেশি শান্তিপূর্ণ হবে, ততবেশি ভোট পড়বে, তত বড় ব্যবধানে আমি জয়ী হব।

সবশেষে কে হবে মিরসরাইয়ের ৬ষ্ঠ সাংসদ কে হাসবে শেষ হাসি দেখতে অপেক্ষা করতে কবে ৭ জানুয়ারী সারাদিন ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধর্ষণ মামলার আসামী গ্রেফতার

চট্টগ্রাম -১ মিরসরাইয়ে কে হবেন ৬ষ্ঠ সাংসদ?

Update Time : 09:31:23 pm, Saturday, 6 January 2024

রাত পোহালে ভোট। ভোটের মাঠ এখন উৎসব মুখর। প্রার্থী কর্মী সমর্থকদের শুরু হয়েছে হৃদকম্পন। কে হারবে আর কে জিতবে নানা হিসেব নিকেষ। চুল চেরা বিশ্লেষণ।

ভোটের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষার কঠিন অপেক্ষা।

অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত চট্টগ্রামের প্রবেশধার অসংখ্য পীর আউলিয়ার পূর্ণ্যভূমি বুনো ঝর্ণার শহর পূর্বে পাহাড় পশ্চিমে সাগর বেষ্টিত এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চলের চাকা ঘুরছে যেখানে সেটাই মিরসরাই। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ হযে স্বাধীকার বা স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামের পরতে পরতে যেখানে আছে রক্তমাখা ইতিহাস। আছে রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক বরেন্য ব্যক্তিত্ববর্গ। সেই মিরসরাই জাতীয় নির্বাচন আসলেই নানা আলোচনার জন্ম দেয়। এবারও তাে ব্যতিক্রম নয়।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন ২৭৮ নং চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই থেকে ৬ষ্ঠ সাংসদ সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল ৭ জানুয়ারি’২৪ পর্যন্ত। তবে ভোটে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে মিরসরাইয়ের ৫১৫৫৯ জন নতুন ভোটার।

চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মীরসরাই উপজেলা। সংসদীয় এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৫ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৪১ জন পুরুষ ভোটার, ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮২ জন মহিলা ভোটার এবং দুজন রয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। ভোট কেন্দ্র ১০৬টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭১৭টি।

তার আগে জেনে রাখা দরকার ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ + ১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত ১০টি আসনসহ মোট ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আর ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদে সাধারণ নির্বাচনে ৩০০ + ১৩টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত ৭টি আসনসহ মোট ১৬৭টি আসন লাভ করে। ৫১.৩% ভোট সংগৃহীত হয়।
সে নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে মিরসরাইবাসী আবিষ্কার করলো ২৭ বছরের তরুণ তুর্কী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের। তিনিই নির্বাচিত হলেন এবং টানা ৫৪ বছর বর্ণাঢ্য আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির শোভাবর্ধন করে এই প্রথম তাঁর মেঝ ছেলেন হাতে তুলে দিলেন মিরসরাইয়ের আগামীর নেতৃত্ব। যদিও ঐসময়ে এডভোকেট আবুল খায়ের (উকিল)মোশাররফ হোসেনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। বাস প্রতিকে নির্বাচন করে তিনি হেরে যান। ঐসময়ের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কাকে বেচে নিবেন খায়ের নাকি মোশাররফ এই চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। সে যাত্রায় পার হয়ে মোশাররফ হোসেন অর্ধ শতাব্দী আর পিছনে তাকাতে হয়নি।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ ২৯৩ আসন জয়লাভ করে। মিরসরাইয়ে ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালের ততকালীন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর হারুন অর রশীদকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চট্টগ্রাম -১ আসন মিরসরাইয়ের প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন । জাতীয়ভাবে ৫৪.৯% ভোট সংগৃহীত হয়।

১৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নব গঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০৭ আসন জয়লাভ করে। মিরসরাই থেকে ওবায়দুল হক খোন্দকার (ওবায়েদ বলি) ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করে। অপর দিকে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ফজলুল হক বিএসসি। প্রথম নির্বাচনে চমক দেখান ধানের শীর্ষের প্রার্থী ওবায়েদ বলি খ্যাত ওবায়দুল হক খন্দকার। নৌকার প্রার্থীকেকে ৩৮৫ ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হোন। জাতীয়ভাবে ৫১.৩% ভোট সংগৃহীত হয়।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক বাহিনীর প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। সে থেকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পাটি গঠন করে থাকে। তিনি ৮ বছর ৮ মাস ১২ দিন ক্ষমতায় থেকে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঘোষণা দিয়ে ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। তার আগে ২ দফা ক্ষমতা আরোহন করে ভোটে নির্বাচিত হয়ে। ১৯৮৬ সালে ততকালীন ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ৫ দফার দাবীতে আ.লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন বর্জন ও স্বৈরাচারী এরশাদের বিরোধী আন্দোলন করে।

১৯৮৬ সালে ২১ মার্চ ১৫ দল নির্বাচনের ঘোষণা দিলে জোট ভেঙ্গে ৮ ও ৫ দলীয় আলাদা জোট হয়। ৮ দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। বিএনপি ও বাম ঘরনার ৫ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। ৩য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ মে ১৯৮৬ সালে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে । জাতীয়ভাবে জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসনে জয়লাভ করে। চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ৩৭০০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হোন। জাতীয় পাটির এডভোকেট আবু ছালেক ২১ হাজার ভোট ও জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা শামসুদ্দিন ২০ হাজার ভোট পেয়ে থাকেন। মোট ৬১.১% ভোট সংগৃহীত হয়।

৩ মার্চ ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলে প্যাড সর্বস্ব কিছু দল অংশ নেয়। এর মধ্যে তখনকার সময়ের আলোচিত হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে বটগাছ মার্কায় খেলাফত আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্ণেল ফারুক -রশীদের নেতৃত্বাধীন কুড়াল মার্কায় ফ্রিডম পার্টি, মশাল প্রতীকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে ৪ খলীফার একজন ডাকসুর সাবেক ভিপি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর একাংশের প্রধান আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ২৩ দলীয় জোট কমবাইন অপজিশন পার্টি (কপ)সহ গুটি কয়েক দল নির্বাচনে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টি ২৫১ আসনে জয়লাভ করে। চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আবু ছালেক অনেকটা বিনা বাঁধায় দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়। ১৯৯০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন পর্যন্ত মিরসরাইয়ে সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ৪র্থ সংসদে ৫২.৫% ভোট সংগৃহীত হয়।
১৪ জানুয়ারি ২০১৩ চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের জেষ্ঠ্য আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু ছালেক (৮৮) ইন্তেকাল করেন।

২৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীর্ষ থেকে নতুন প্রার্থী এম এ জিন্নাহ ও নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এম এ জিন্নাহ ২৭ হাজার ভোটে আ.লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পরাজিত করে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন । ৫৫.৫% ভোট জাতীয়ভাবে ভোট সংগৃহীত হয়।

১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধী দল বিহীন অপরিচিত দল নিয়ে একচেটিয়া নির্বাচনে বিএনপির ২৭৮ টি আসনে জয়লাভ করে। মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী ওবায়দুল হক খোন্দকার দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হোন। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদল নেতা এম এ কাসেম ও টেবিল প্রতিকের মঞ্জুরুল আলম। ৬ষ্ঠ সংসদ সম্মিলিত বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে ধারাবাহিক হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলনের মুখে ৪৩ দিনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সংসদ তত্ত্বাবধায়ক বিল সংসদ পাশ করে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পূনঃনির্বাচনের ঘোষণা দেয়।

১২ জুন ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম -১ মিরসরাইয়ে বিএনপির দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করে। একাধীক নেতা প্রার্থী হতে গিয়ে দলীয় কোন্দলের খবর বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কানে পৌঁছে যায়। ফলে কোন্দল ঠেকাতে বেগম খালেদা জিয়া ফেনী -১ (ছাগলনাইয়া – পরশুরাম- ফুলগাজী) আসনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই আসনে প্রার্থী হোন। তিনি ২ আসনেই বিজয়ী হোন। মিরসরাইয়ে আ.লীগ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে ৩ হাজার তিন শত ভোটে পরাজিত করে বিজয়ী হোন ।

১ অক্টোবর ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী এম এ জিন্নাহ আ.লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে ৪ হাজার চার শত ভোটে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মতো তিনি বিজয়ী হয় ।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম ডি এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় ১২ হাজার ভোটে পরাজিত করে। প্রাপ্ত ভোট ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১০৫৩৩৯, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন চৌধুরী ৯৪৬৬৫ ভোট।

৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে প্রধান প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলে অল্প কিছু দল নিয়ে আ.লীগ নির্বাচন করে এবং বিনা ভোটে ১৫৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হোন।

৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিএনপির প্রার্থী মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে পরাজিত করে বিজয়ী হোন। প্রাপ্ত ভোট মোশাররফ হোসেন ২ লাখ ৬৬ হাজার, নুরুল আমিন ৩ হাজার ৯ শত।

৭ জানুয়ারী’২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেঝ পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলকে দিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে তাঁর বাবা’র শীর্ষ। মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেডিকেল বন্ধু খ্যাত গিয়াস উদ্দিন। তিনি লিজেন্ডধারী নেতার মতো সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন। হাসপাতাল আদালত সামাজিক কর্মকান্ডে ছাড়াও তাঁর বড় প্লাস পয়েন্ট তরুণ উদ্যোক্তা জুনিয়র চেম্বার সভাপতি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের পুর্নাঙ্গ সমর্থন। এলিটের নিজস্ব বলয় নিয়ে গিয়াসের সাথে সর্বত্র ঈগল প্রতীকের ভোট প্রার্থনা বাড়তি সুবিধা যোগ হয়েছে গিয়াসের।
চট্টগ্রাম -১ মিরসরাই আসনে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ভোট হবে সেয়ানে সেয়ানে।

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেঝ ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন লড়ছেন ঈগল প্রতীকে। এ আসনে জাতীয় পার্টির এমদাদ হোসাইন চৌধুরী , ইসলামিক ফ্রন্টের আবদুল মান্নান , বিএনএফের মোঃ ইউসুফ , বিএসপি নুরুল করিম আবসার এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল চৌঃ, মতো কম পরিচিত প্রার্থীও রয়েছে। তবে এ আসনে মূল লড়াই হবে ঈগল ও নৌকা প্রতীকের। অরস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আ.লীগের নিরাপদ আসন মীরসরাইয়ে নৌকার প্রার্থী রুহেলকে চোখ রাঙাচ্ছে স্বতন্ত্রের গিয়াস।

মূলত এই দুই প্রার্থীর মুখোমুখি জমজমাট ভোটের লড়াইয়ে চট্টগ্রাম-১ আসনের নির্বাচন উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। নৌকার নবীন এবং ঈগলের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের ভোট রঙ্গ দেখছে এলাকাবাসী । ফলে এই ভোটের লড়াইয়ে এই আসনে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্রে কোনো অঘটনও ঘটে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এবারের নির্বাচনে মাহবুব উর রহমান রুহেল এবং গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম-১ আসনে ভোটের ভিআইপি হয়ে উঠেছেন।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কমজমাট ভোটের আমেজ। পাড়া মহল্লায় সর্বত্র নির্বাচনী আলোচনার ঝড়। চট্টগ্রাম-১ আসনের ৭ বারের এমপি, সাবেক ২ বারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। নৌকা প্রতীকে এবার প্রার্থী হয়েছেন মোশাররফ মেঝ পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল। অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন। এলাকায় তিনি জনপ্রিয়। ফলে প্রথমবারের মতো ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে রুহেলকে লড়তে হবে এলাকার একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে।

মীরসরাইয়ে সাম্যবাদী দলের প্রার্থী ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই আসনে। মূল প্রতিদ্বন্দী রুহেল গিয়াস দুজনই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। একজন হেভিওয়েট পিতার সন্তান, অপরজন দীর্ঘ সময় ধরে তৃণমুল থেকে উঠে আসা মাঠের রাজনীতির নেতা। অপরদিকে এ আসনে দলীয় প্রার্থীর ছড়াছড়ি হলেও ভোটারেরা চেনেন না দল ও একাধিক প্রার্থীকে। দেশের ৪ বারের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় অপরিচিত দলের প্রার্থী বেড়েছে এবারের নির্বাচনে।
জনসমর্থনের দিক দিয়ে অতীতে সকল জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখানে সমানে-সমান। অতীতের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে এই আসনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা খুব সহজেই আ. লীগ প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। একই দলের নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ফলে নৌকার প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল ভোটযুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে টেক্কা দিতে হবে গিয়াস উদ্দিনকে।

সকল আড্ডার আলোচনায় আছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিনের (ঈগল পাখি) ভোট কোন অংশে কম নয়। দুই জনই আধুনিক শিক্ষিত স্মার্ট সুদর্শন। সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সচেতন ভোটারদের। নির্বাচন সামনে রেখে নানা কৌশলে সভা, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে পাড়া মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতিও।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের সমর্থকদের দাবি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাতবারের এমপি ও দুইবারের সাবেক সফল মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে মীরসরাইয়ের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরসহ পর্যটনবান্ধব মীরসরাই গড়তে নিরলসভাবে কাজ করেছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ।  এ ছাড়াও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ পাওয়া এবং সকল ১৬ ইউপি চেয়ারম্যান ও দুই মেয়র সকলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনুসারী বলে পরিচিত। তাই পিতার জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং নৌকার ভোট ব্যাংকের মাধ্যমে পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবেন বলে দাবি তাঁর অনুসারীদের।

অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকদের দাবি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রামের মেডিক্যাল বন্ধুখ্যাত মো. গিয়াস উদ্দিনের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়াও পদ বঞ্চিত প্রবীণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের অনুসারীদের সমর্থন তার পক্ষে থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন গিয়াস উদ্দিন।  নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত হলে সাধারণ ভোটারদের ভালোবাসায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন জয়লাভ করবেন এবং তাঁকে ঠেকাতে পারবেন না বলে দাবি তাঁর সমর্থকদের।

নির্বাচনের মাঠে নৌকার প্রার্থী রুহেল কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন সাধারণ ভোটারদের মাঝে যিনি ভোট পেতে শক্তি-সামর্থ্য ও কৌশলের ব্যর্তয় ঘটাতে সক্ষম হবেন তিনিই ভোটের পাল্লা ভারি করতে পারবেন। এ ছাড়াও এই আসনে যিনি প্রান্তিক ভোটারসহ নবীন ভোটারদের সমর্থন পাবেন তিনিই জয়ের মালা বলে মনে করেন সচেতন মহল।
নির্বাচনকে ঘিরেই সরগরম হয়েছে ভোটের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী রুহেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াসের সমর্থকদের মধ্যে ইতোমধ্যে হামলা, মামলা, গ্রেফতার ঘটনাও ঘটেছে।

রুহেল তাঁর প্রচারে আনছেন বিগত সময়ে মীরসরাই আসনে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর। বলছেন, তিনি তাঁর পিতার পথ ধরে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চান। বিভিন্ন এলাকায় তাঁর অনুসারীদের মধ্যে কঠোর অবস্থানও দেখা যাচ্ছে। ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের আবহ সৃষ্টির মধ্যে কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে। তবে ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবেই এ শঙ্কা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ গিয়াস অনুসারীদের।

গিয়াস উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবে। নির্বাচনকে তিনি উন্মুক্ত করেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে। দলের সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন, নেতাকর্মীরা দলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্যও কাজ করতে পারবেন। আমার মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। এতে মীরসরাইর জনগণ খুব দুঃখ পান। ফিরে পাওয়ায় তারা খুব খুশি।

জনগণের মাঝে যে জোয়ার উচ্ছ্বাস আকাক্সক্ষা তা যেন রাখতে পারে। মীরসরাইয়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তারা একটা সুযোগ পেয়েছে, একটা জায়গা থেকে বের হবার। যদিও আমার মার্কা ঈগল। আমিও কিন্তু নৌকার মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী। আমি জয়ী হলেও নৌকারই জয়।

তিনি আরও বলেন, ৫০ বছর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আমার। ৭৫ সাল থেকে দলের জন্য রাজপথে। দলের  নেতাকর্মীদের ত্যাগ অবদান অপরিসীম। ২০০১ এর পরে ২৯ লাশ পড়েছে, সেই লাশ আমি টেনেছি। ২০১২ থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত আমি নেতৃত্বে থেকে মোকাবিলা করেছি। আমি রাজপথ থেকে বেড়ে ওঠা কর্মী। ড্রইং রুম থেকে আসিনি। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা ফ্রি এন্ড  ফেয়ার নির্বাচন হবে। কাউকে কেন্দ্র দখল করতে দেওয়া হবে না। ইঞ্জিনিয়ার  মোশাররফকে আমি শ্রদ্ধা করি। উনি ত্যাগী। কিন্তু বাবার ত্যাগ ছেলের সঙ্গে যোগ হবে না। উনি উনার মতো এগিয়ে। আমি চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যতবেশি শান্তিপূর্ণ হবে, ততবেশি ভোট পড়বে, তত বড় ব্যবধানে আমি জয়ী হব।

সবশেষে কে হবে মিরসরাইয়ের ৬ষ্ঠ সাংসদ কে হাসবে শেষ হাসি দেখতে অপেক্ষা করতে কবে ৭ জানুয়ারী সারাদিন ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত।