চট্টগ্রাম 8:47 am, Sunday, 6 July 2025

তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন – সালমা ইসলাম

যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও নুরুল ইসলামের সহধর্মিণী সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালাম ইসলাম এমপি বলেছেন, যুগান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার তিন বছর হয়ে গেল। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা মনে করি, তিনি আমাদের রেখে চলে যাননি, তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন, সারাজীবন আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার যুগান্তর কার্যালয়ে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সালমা ইসলাম।

তিনি বলেন, নুরুল ইসলামের আদর্শ মেনে তাকে যারা অনুসরণ করতেন, তাদের স্মৃতিচারণ শুনে আমি অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়েছি। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তবে এটুকু বলতে পারি— আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে গর্ববোধ করছি। দেশকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন। এর বিনিময়ে তিনি লাল-সবুজের পতাকা আমাদের উপহার দিয়েছেন। তিনি জীবন বাজি রেখে দেশ ভালোবেসে যুদ্ধ করেছেন।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তার (নুরুল ইসলাম) মৃত্যুই প্রমাণ করে যে, তিনি শহিদি মর্যাদা পেয়েছেন। তিনি জীবনে কখনো জানতেন না যে, শহিদ হতে হলে কী কী হতে হয় বা করতে হয়। শুধু তিনি জানতেন— দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেন, তারা শহিদ। এটিই লক্ষ্যে নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু মহামারিতে যারা শহিদ হন, তাদের মধ্যে তিনিও চলে যাবেন, এটি হয়তো কখনো ভাবেননি।

নুরুল ইসলামের কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করে যুগান্তর প্রকাশক সালমা ইসলাম বলেন, তার জীবদ্দশায় যে কাজগুলো করে গেছেন, এ কাজের জন্য তাকে মানুষ সারাজীবন মনে রাখবে। বিশেষ করে যারা কর্মসংস্থানের অভাবে পরিবারের হাল ধরতে পারেন না। তাদের কথা বিবেচনা করে তিনি অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন।

নুরুল ইসলামের সঙ্গে সংসার জীবনের স্মৃতিচারণ করে সালমা ইসলাম বলেন, আমি তার স্ত্রী হিসেবে আশা করি, তিনি মানুষের দোয়া ও তার ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শহিদি মর্যাদা পাবেন। আমি তার সঙ্গে ৪৫ বছর সংসার করেছি। তিনি আমার জন্য যা করেছেন, স্ত্রী হিসেবে সন্তুষ্ট। তিনি শুধু জীবনযুদ্ধ করে ক্ষান্ত হননি। কর্মজীবনেও তিনি যুদ্ধ করেছেন। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। তার কর্মজীবনে কোনো ছুটি ছিল না। সংসার জীবনেরও তিনি অনেক দায়িত্ববান ছিলেন। বাসার কাজগুলো আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর বাইরের কাজগুলো তিনি দেখভাল করতেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম, রোজালিন ইসলাম ও মেহনাজ ইসলাম তানিয়া।

নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন যুগান্তরের উপসম্পাদক বিএম জাহাঙ্গীর, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, যমুনা গ্রুপের পরিচালক আলী আশরাফ, কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব কামাল।

যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, উপসম্পাদক আহমেদ দীপু, উপসম্পাদক এহসানুল হক, প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুর রহমান, নগর সম্পাদক মিজান মালিক প্রমুখ।

এদিকে নুরুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দৈনিক যুগান্তর পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বনানী কবরস্থানে নুরুল ইসলামের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সেখানে দোয়া করা হয়।

প্রসঙ্গত, দেশের অর্থনীতির সফল আইকন, শিল্পের মহানায়ক যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের এই দিনে (১৩ জুলাই) চিরবিদায় নেন। তিনি ১৯৭১-এর রণাঙ্গনের প্রথম সারির এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিজের মেধা, সততা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার সঙ্গে একে একে ৪১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন আপসহীন এই কর্মবীর।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মিরসরাইয়ে দেড় হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন – সালমা ইসলাম

Update Time : 07:35:27 pm, Thursday, 13 July 2023

যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও নুরুল ইসলামের সহধর্মিণী সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালাম ইসলাম এমপি বলেছেন, যুগান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার তিন বছর হয়ে গেল। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা মনে করি, তিনি আমাদের রেখে চলে যাননি, তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন, সারাজীবন আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার যুগান্তর কার্যালয়ে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সালমা ইসলাম।

তিনি বলেন, নুরুল ইসলামের আদর্শ মেনে তাকে যারা অনুসরণ করতেন, তাদের স্মৃতিচারণ শুনে আমি অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়েছি। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তবে এটুকু বলতে পারি— আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে গর্ববোধ করছি। দেশকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন। এর বিনিময়ে তিনি লাল-সবুজের পতাকা আমাদের উপহার দিয়েছেন। তিনি জীবন বাজি রেখে দেশ ভালোবেসে যুদ্ধ করেছেন।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তার (নুরুল ইসলাম) মৃত্যুই প্রমাণ করে যে, তিনি শহিদি মর্যাদা পেয়েছেন। তিনি জীবনে কখনো জানতেন না যে, শহিদ হতে হলে কী কী হতে হয় বা করতে হয়। শুধু তিনি জানতেন— দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেন, তারা শহিদ। এটিই লক্ষ্যে নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু মহামারিতে যারা শহিদ হন, তাদের মধ্যে তিনিও চলে যাবেন, এটি হয়তো কখনো ভাবেননি।

নুরুল ইসলামের কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করে যুগান্তর প্রকাশক সালমা ইসলাম বলেন, তার জীবদ্দশায় যে কাজগুলো করে গেছেন, এ কাজের জন্য তাকে মানুষ সারাজীবন মনে রাখবে। বিশেষ করে যারা কর্মসংস্থানের অভাবে পরিবারের হাল ধরতে পারেন না। তাদের কথা বিবেচনা করে তিনি অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন।

নুরুল ইসলামের সঙ্গে সংসার জীবনের স্মৃতিচারণ করে সালমা ইসলাম বলেন, আমি তার স্ত্রী হিসেবে আশা করি, তিনি মানুষের দোয়া ও তার ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শহিদি মর্যাদা পাবেন। আমি তার সঙ্গে ৪৫ বছর সংসার করেছি। তিনি আমার জন্য যা করেছেন, স্ত্রী হিসেবে সন্তুষ্ট। তিনি শুধু জীবনযুদ্ধ করে ক্ষান্ত হননি। কর্মজীবনেও তিনি যুদ্ধ করেছেন। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। তার কর্মজীবনে কোনো ছুটি ছিল না। সংসার জীবনেরও তিনি অনেক দায়িত্ববান ছিলেন। বাসার কাজগুলো আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর বাইরের কাজগুলো তিনি দেখভাল করতেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম, রোজালিন ইসলাম ও মেহনাজ ইসলাম তানিয়া।

নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন যুগান্তরের উপসম্পাদক বিএম জাহাঙ্গীর, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, যমুনা গ্রুপের পরিচালক আলী আশরাফ, কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব কামাল।

যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, উপসম্পাদক আহমেদ দীপু, উপসম্পাদক এহসানুল হক, প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুর রহমান, নগর সম্পাদক মিজান মালিক প্রমুখ।

এদিকে নুরুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দৈনিক যুগান্তর পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বনানী কবরস্থানে নুরুল ইসলামের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সেখানে দোয়া করা হয়।

প্রসঙ্গত, দেশের অর্থনীতির সফল আইকন, শিল্পের মহানায়ক যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের এই দিনে (১৩ জুলাই) চিরবিদায় নেন। তিনি ১৯৭১-এর রণাঙ্গনের প্রথম সারির এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিজের মেধা, সততা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার সঙ্গে একে একে ৪১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন আপসহীন এই কর্মবীর।