ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আলোচিত অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের পর চালক সিয়াম বিশ্বাস (১৭) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের পর সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকা জেলার সহকারী পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন।
রবিবার (৩ নভেম্বর) বেলা ১২টায় নবাবগঞ্জ থানা সভা কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ছিনতাই হওয়া অটোরিক্সা উদ্ধারের ঘটনা তুলে ধরেন।
নিহত অটোরিক্সা চালক সিয়াম বিশ্বাস উপজেলা সদরের সমসাবাদ (নবাবগঞ্জ থানা ফটকের উল্টো দিকে) ইছামতি নদীর পাড়ের মো. জমিস উদ্দিনের ছেলে বলে জানা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন জানান, গত ১১ অক্টোবর বিকাল ৩টায় বাড়ি থেকে অটোরিক্সা নিয়ে বের হয় চালক সিয়াম বিশ্বাস। বের হওয়ার সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে সমসাবাদ এলাকার ছমির মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া সাজ্জাদ মোল্লা অটোরিক্সা ভাড়া করে নিয়ে যায়। রাত হলেও অটোরিক্সা নিয়ে বাড়ি ফিরে না আসায় পরের দিন থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।
পরে ১৪ অক্টোবর বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার আগলা ইউনিয়নের মোহনপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উল্টো দিকে একটি ফাঁকা জমির ঝোপে থানা পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধার করে। সংবাদ পেয়ে ছেলে সিয়ামের অর্ধগলিত লাশ চিহ্নিত করেন বাবা। এসময় লাশের গলার শ্বাসনালীসহ দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী কাটা দেখতে পায় পুলিশ। এঘটনায় নবাবগঞ্জ থানায় মামলা হলে পুলিশ ভিকটিমের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে রহস্য উদঘাটনে নামেন।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ-এর নির্দেশে থানা পুলিশের একটি চৌকুস দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূলহোতা সাজ্জাদ মোল্লা (৩৪), মোকসেদ আলী (৫০), মনোয়ারা বেগম (৫০), জুলহাস (৩৭) কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত সাজ্জাদ মোল্লা ফরিদপুর জেলার ভাঙা থানার তুজারপুর গ্রামের সারোয়ার মোল্লার ছেলে, মোকসেদ আলী কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর ইউনিয়নের লাকিরচর এলাকার মৃত মনসুর আলীর ছেলে, মনোয়ারা বেগম সাভার উপজেলার হেমায়েতপুরের চান্দুলিয়া গ্রামের মিঠু মিয়া স্ত্রী, জুলহাস কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর ইউনিয়নের লাকিরচর এলাকার মৃত শাহাবদ্দিনের ছেলে।
সহকারী পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিক সিয়াম বিশ্বাসকে গলাকেটে হত্যার পর লাশ গুম করতে ঝোপের আড়ালে ফেলে যায়। পরে অটোরিক্সা ছিনতাই করে নিয়ে বিক্রি করে। হত্যাকারীরা নবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। এরা মূলত অটোরিক্সা ছিনতাই চক্রের সদস্য।
সহকারী পুলিশ সুপার জানান, দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা আদালতে হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেবে বলে জানিয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে মাদক সংক্রান্ত জটিলতায়। তাই আমরা চাই নবাবগঞ্জ থেকে মাদক নির্মুল করতে। আমরা সাংবাদিকদের সহযোগীতায় নবাবগঞ্জের মাদক কারবারীসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম, নবাবগঞ্জ থানার ওসি মমিনুল ইসলাম প্রমুখ।