চট্টগ্রাম 1:56 am, Monday, 9 September 2024

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা

স্ত্রী সায়মা থাকতেন শশুড় বাড়ি সীতাকুণ্ড মুরাদপুরে আর স্বামী চাকুরির সুবাদে থাকতেন ফটিকছড়ি। তাদের সংসার দেড় বছরের একটা পুত্র সন্তানও আছে। ভালই চলছিল তাদের সংসারে। কিন্তু বিয়ের বছর যেতে না যেতে একে অপরকে সন্দেহ শুরু করে। তারই জের ধরে ফটিকছড়ি থেকে এসে অভিনব কায়দায় স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা করে চলে যায় পাষান্ড স্বামী। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি ও চৌকস পুলিশ থেকে বাঁচতে পারলনা স্বামী।

সীতাকুণ্ড উপজেলার হাসনাবাদ গ্রাম থেকে গত মঙ্গলবার রাতে গৃহবধূ সাইমা আক্তারের (২০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ‘ডাকাতে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে’ বলে বিলাপ করতে করতে সেখানে যান ওই গৃহবধূর স্বামী দিদারুল আলম। এরপর স্বজনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের সামনে বিলাপ করতে থাকেন তিনি। কিন্তু হত্যার ধরন দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে দিদারুল ও তাঁর দুই বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর দিদারুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে স্বামীর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে দিদারুলকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় পুলিশের কাছে তিনি স্বীকার করেন।

আজ বৃহস্পতিবার স্ত্রী সাইমা আক্তারকে গলা কেটে হত্যার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন স্বামী দিদারুল ইসলাম। চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন জুনায়েদ তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে দিদারুলের দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, দিদারুল ফটিকছড়ি এলাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রী সীতাকুণ্ডের মুরাদপুরের বাড়িতে থাকতেন। এক বছর ধরে তাঁরা দুজন পরস্পরকে সন্দেহ করা শুরু করেন। স্ত্রীর সন্দেহ হাসপাতালের কোনো নারীর সঙ্গে দিদারুলের অবৈধ সম্পর্ক আছে। স্বামীর সন্দেহ স্ত্রী সাইমা বাড়িতে থেকে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সন্দেহের বশে তাঁদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফটিকছড়ি থেকে সীতাকুণ্ডে আসেন দিদারুল। রাতে বাড়ির পাশে পুকুরের ধারে এসে স্ত্রীকে ফোন দেন দিদারুল। তখন ফোনে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন সাইমা। ফোনে অপেক্ষমাণ পেয়ে দিদারুল ঘরের কাছে এসে শোনার চেষ্টা করেন। এতে সন্দেহের মাত্রা বেড়ে যায়। এরপর কৌশলে ফোন দিয়ে স্ত্রীকে রাত ১১টার দিকে পুকুরপাড়ে এনে পেছন থেকে গলায় ছুরিকাঘাত করেন। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বুকের বাঁ পাশে তিনটি ছুরিকাঘাত করে বাড়বকুণ্ডে পালিয়ে যান।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এর আধা ঘণ্টা পর দিদারুল ঘটনাস্থলে যান। ফটিকছড়ি থেকে ফিরেছেন বলে পুলিশকে জানান। এত দূর থেকে দ্রুত সীতাকুণ্ডে দিদারুলের উপস্থিতিতে পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশ। তিনি বলেন, স্ত্রীকে হত্যার জন্য দিদারুল রাউজান থেকে দুটি ছুরি কেনেন। লাশ উদ্ধারের সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ রাউজানের ঠিকানার একটি প্যাকেট পান তাঁরা।

এর আগে গতকাল বুধবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দিদারুল ও তাঁর বোন রেশমাকে আসামি করে সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত নারীর বাবা মোহাম্মদ বেলাল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সন্দ্বীপে সাপের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা

Update Time : 11:02:46 pm, Thursday, 11 May 2023

স্ত্রী সায়মা থাকতেন শশুড় বাড়ি সীতাকুণ্ড মুরাদপুরে আর স্বামী চাকুরির সুবাদে থাকতেন ফটিকছড়ি। তাদের সংসার দেড় বছরের একটা পুত্র সন্তানও আছে। ভালই চলছিল তাদের সংসারে। কিন্তু বিয়ের বছর যেতে না যেতে একে অপরকে সন্দেহ শুরু করে। তারই জের ধরে ফটিকছড়ি থেকে এসে অভিনব কায়দায় স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা করে চলে যায় পাষান্ড স্বামী। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি ও চৌকস পুলিশ থেকে বাঁচতে পারলনা স্বামী।

সীতাকুণ্ড উপজেলার হাসনাবাদ গ্রাম থেকে গত মঙ্গলবার রাতে গৃহবধূ সাইমা আক্তারের (২০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ‘ডাকাতে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে’ বলে বিলাপ করতে করতে সেখানে যান ওই গৃহবধূর স্বামী দিদারুল আলম। এরপর স্বজনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের সামনে বিলাপ করতে থাকেন তিনি। কিন্তু হত্যার ধরন দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে দিদারুল ও তাঁর দুই বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর দিদারুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে স্বামীর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে দিদারুলকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় পুলিশের কাছে তিনি স্বীকার করেন।

আজ বৃহস্পতিবার স্ত্রী সাইমা আক্তারকে গলা কেটে হত্যার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন স্বামী দিদারুল ইসলাম। চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন জুনায়েদ তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে দিদারুলের দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, দিদারুল ফটিকছড়ি এলাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রী সীতাকুণ্ডের মুরাদপুরের বাড়িতে থাকতেন। এক বছর ধরে তাঁরা দুজন পরস্পরকে সন্দেহ করা শুরু করেন। স্ত্রীর সন্দেহ হাসপাতালের কোনো নারীর সঙ্গে দিদারুলের অবৈধ সম্পর্ক আছে। স্বামীর সন্দেহ স্ত্রী সাইমা বাড়িতে থেকে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সন্দেহের বশে তাঁদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফটিকছড়ি থেকে সীতাকুণ্ডে আসেন দিদারুল। রাতে বাড়ির পাশে পুকুরের ধারে এসে স্ত্রীকে ফোন দেন দিদারুল। তখন ফোনে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন সাইমা। ফোনে অপেক্ষমাণ পেয়ে দিদারুল ঘরের কাছে এসে শোনার চেষ্টা করেন। এতে সন্দেহের মাত্রা বেড়ে যায়। এরপর কৌশলে ফোন দিয়ে স্ত্রীকে রাত ১১টার দিকে পুকুরপাড়ে এনে পেছন থেকে গলায় ছুরিকাঘাত করেন। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বুকের বাঁ পাশে তিনটি ছুরিকাঘাত করে বাড়বকুণ্ডে পালিয়ে যান।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এর আধা ঘণ্টা পর দিদারুল ঘটনাস্থলে যান। ফটিকছড়ি থেকে ফিরেছেন বলে পুলিশকে জানান। এত দূর থেকে দ্রুত সীতাকুণ্ডে দিদারুলের উপস্থিতিতে পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশ। তিনি বলেন, স্ত্রীকে হত্যার জন্য দিদারুল রাউজান থেকে দুটি ছুরি কেনেন। লাশ উদ্ধারের সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ রাউজানের ঠিকানার একটি প্যাকেট পান তাঁরা।

এর আগে গতকাল বুধবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দিদারুল ও তাঁর বোন রেশমাকে আসামি করে সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত নারীর বাবা মোহাম্মদ বেলাল।