রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় গুমাই বিলে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের সাথে লুকোচুরি করে কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিচ্ছে একটি মহল। প্রশাসনের অভিযানেও দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটার এই মহাযজ্ঞ থামানো যাচ্ছে না। এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিল। বলা হয়ে থাকে এই বিল দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদিত হয়। এজন্য এই বিলকে দেশের ধানের গোলা নামেও ডাকা হয়। তবে ক্রমাগত স্থাপনা নির্মাণ এবং অব্যাহত ভাবে জমির টপ সয়েল কাটার কারণে বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে বিলটি। চলতি বছরে গুমাইবিলের একাধিক স্পটে টপ সয়েল কাটার মহাযজ্ঞ চলছে। প্রশাসনের অভিযানেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। ইতিপূর্বে একাধিক স্পটে প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তারা প্রশাসনের সাথে লুকোচুরি করে টপ সয়েল কাটা অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি রাতে প্রশাসনের অভিযানে গুমাইবিলের মাটি কাটার একটি স্কেভটর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এসময় কাউকে পাইনি বলে জানান ইউএনও আতাউল গনি ওসমানী।
সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন রাত হলেই স্কেভটর দিয়ে গুমাইবিলের বিভিন্ন স্পটে টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডেও গত ১৫ দিন ধরে ১০/১২টি ট্রাকে করে গুমাইবিলের টপ সয়েল কেটে মাটি নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। মূলত কৃষকদের সামান্য টাকার লোভ দেখিয়ে এসব মাটি কেটে বিক্রি করছেন ভূমিখেকোরা। গুমাইবিলের মাঝখানে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ৭নং উত্তর পাড়া গিয়ে দেখা যায়, মো. ইসহাকের মালিকানাধীন জমি থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সেলিমের সহযোগিতায় জমির এক ফুট পর্যন্ত মাটি কাটা হয়েছে। তারা সড়কের মুখে চৌকিদার রেখেই এসব মাটি কাটছে বলে জানা গেছে। সাংবাদিক এসেছে এ খবরে ৪০-৫০ জনের একটি দল ছুটে আসে। তারা স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সেলিমের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে আবদুর রহিম ও রেজাউল করিম নামে দুইজন জানান, সেলিম মেম্বারের সহায়তায় মাটি কাটা হচ্ছে। ইউপি মেম্বার সেলিম কৃষি জমি উঁচু হওয়ার কারণে এসব মাটি কেটে জমি সমান করে কৃষককে সহায়তা করছে বলে তারা দাবী করেন। এসময় মাটি বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. সেলিম টপ সয়েল কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় সাথে আমি সম্পৃক্ত নয়। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর উল্লাহ বলেন, ইউপি সদস্য সেলিমের নেতৃত্বে জমির টপ সয়েল কাটা হওয়ার অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। আমি তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছিলাম। গুমাইবিলের টপ সয়েল কাটা বন্ধে রাত জেগে পাহাড়া দিতে গিয়ে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হাসপাতালে থেকে কয়েকদিন আমার চিকিৎসা চালানোর সুযোগে তারা এ কাজ করেছে। গুমাই বিল রক্ষায় আমি সবসময় প্রশাসনকে সহযোগীতা করে আসছি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, মাটির টপ সয়েল কাটার ফলে কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এই ক্ষতি পোষাতে অন্তত ১০ বছর সময় লাগবে। ফলে কৃষকরা মাটি বিক্রি করে নিজের ক্ষতি নিজেই করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাটি কাটার একটি স্কেভটর ভেঙ্গে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এসময় ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। জমির টপ সয়েল কাটার বিষয়ে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, শুধু গুমাই বিল নই উপজেলার বিভিন্ন স্পটে জমির এই টপ সয়েল কাটার মহাযজ্ঞ চলতেছে। শুধু কৃষি জমির টপ সয়েলই নয়, কৃষি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণেরও হিড়িক চলছে। এক্ষেত্রে উপজেলার খাদ্য উৎপাদন আশংকাজনক ভাবে কমার আশংকা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়ে এখন থেকেই কার্যকর ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।