হাটহাজারীতে প্রগতিশীল স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন ” ইউথ ফর বিল্ডিং বেটার বাংলাদেশ ” এর উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় সম্পদ গাছপালা ও বনভূমি ধ্বংসকারী অবৈধ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচী ও সুশৃঙ্খল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকাল তিনটার দিকে উপজেলাধীন ৩নং মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া নয়াহাট বাজারে এ প্রতিবাদ কর্মসূচী ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেলের সহযোগিতায় ৩ নং মির্জাপুর ইউনিয়ন শাখার উপদেষ্টামন্ডলী উত্তর জেলা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক মোহাঃ এরশাদ ও সহ সম্পাদক আবদুল মতিন রুবেল এর নের্তৃত্বে আয়োজিত প্রতিবাদ ও মানববন্ধন সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি কাজী মো.সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, যথাক্রমে ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সেক্রেটারী কাজী মোহাঃ তোবারেক, উত্তর জেলা ছাত্রলীগ এর সহ-সভাপতি মোহাঃ নাছির উদ্দিন যুবলীগ নেতা মোহাঃ নাজিম উদ্দিন।
এসময় বক্তারা বলেন, বনভূমি মানবজাতির জন্য ঢালস্বরূপ। সমগ্র পৃথিবীকে নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করে থাকে এই বনভূমি। আর আমাদের চারিয়া গ্রামের পর্শ্চিমের বিশাল বিশাল বনভূমি উজাড় করে যাচ্ছে একটি দুষ্টু চক্র। তাদের অধীনে শত শত লোক বনের অসংখ্য ছোট বড় গাছ কেটে প্রকাশ্যে চাঁদের গাড়ি ভর্তি করে বিভিন্ন ইটভাটায় দাপটের সাথে বিক্রি করে যাচ্ছে। অথচ যথাযত কর্তৃপক্ষ অজানা কারনে নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বনভূমি উজাড়ের ফলে এই পরিবেশ ও জনজীবন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পূর্বেই বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বন উজাড়ের কারণে বাদুড়ের আবাস বিনষ্ট হওয়া এবং সেগুলোর চারদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে নতুন মহামারীর বিস্তার সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। আর পোল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারশর গবেষক আনিতা আফেল্ট তার গবেষণার পরবর্তী মারাত্মক সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব এশিয়া মহাদেশ থেকে হবে বলে জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গত ৪০ বছরে এশিয়া মহাদেশে মারাত্মকভাবে বন উজাড় করা হয়েছে। অতএব, আমাদের নিজেদের সুস্থ থাকতে সকলকে বনভূমি রক্ষায় একসাথে কাজ করতে হবে। মানবজাতির এ ঢাল বনভূমি রক্ষায় সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবানও জানান বক্তারা।
সংগঠনের সহ-সভাপতি মো.সাহাব উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় ছাত্রনেতা মোহাঃ মিজানুর মিজু, মোহাঃ রবিউল ইসলাম, মোহাঃ হ্নদয়, উত্তর জেলা ছাত্রলীগ এর উপ-দপ্তর সম্পাদক কামাল উদ্দিন সাহেদ, উপ-আইন সম্পাদক এস এম সাখাওয়াত হোসেন সাজিদ, সহ সম্পাদক ইরফান হোসেন, হাটহাজারী ০৩ নং ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজম উদ্দিন এবং সেকান্দর জালাল প্রমুখ।
বক্তারা এসব অবৈধ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, পরিবেশের শত্রুকে প্রতিহত করে অবৈধ ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলারও আহবান জানিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে যথাযথ প্রশাসনের প্রতি ৬ দফা দাবী তুলে ধরেন, দাবি সমূহ হলো –
১। হাটহাজারী বন বিভাগের আওতাধীন পশ্চিম চারিয়া পাহাড়ী অঞ্চলে অবৈধভাবে গাছ-পালা কাটা ও ধ্বংস রোধ করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
২। অবৈধভাবে পাহাড়ী গাছ-পালা কাটা ও বনভূমি ধ্বংসকারী সকল অবৈধ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। ৩। সামাজিক বনায়নে আগ্রহী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে উক্ত পাহাড়ী অঞ্চলে বন বিভাগ কর্তৃক সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে।
৪। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পশু-পাখিদের অভয়ারণ্য এবং প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র সৃষ্টি করতে হবে।
৫। পশ্চিম চারিয়া এলাকায় অবস্থিত ব্রিকফিল্ড সমূহের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নিজস্ব রাস্তা থাকা সত্বেও চারিয়া মুরাদ সড়ক ব্যবহার করার কারণে সৃষ্ট নিম্নোক্ত সমস্যা সমাধানে অনতিবিলম্বে ব্রিকফিল্ড সংক্রান্ত যাবতীয় যান চালাচল বন্ধ করতে হবে।
(ক) অতিরিক্ত ধুলা-বালির কারণে এলাকাবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া ব্যাঘাত ঘটছে।
(খ) রাস্তার দুরাবস্থার কারণে সংকটাপন্ন রোগী ও ডেলিভারী রোগীকে যথা সময়ে হাসপাতাল/স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছাতে মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।
(গ) ধুলা-বালির কারণে ফলন্ত গাছের ফুল থেকে ফল হওয়ার আগেই পরাগায়ন প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে, যার কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ আর্থিক ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
(ঘ) স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যাতায়তের সময় অতিরিক্ত ধুলা-বালির কারণে পোষাক-আশাক ও শ্বাস-প্রশ্বাস জনিক কারণে ভুগতেছে।
(৫) বর্ষাকালে রাস্তায় জমে থাকা পানি ও কাদার কারণে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
৬। এলাকার অবৈধ সিন্ডিকেট ও প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তির অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে এলাকার সচেতন নাগরিকের যৌক্তিক কর্মসূচীতে স্থানীয় প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।