চট্টগ্রাম 12:41 am, Thursday, 14 November 2024

বাসায় ফিরতে চাইনা : বললেন বেঁচে যাওয়া খোকন বসাক

চোখের সামনে দুই আদরের সন্তান, মা-বাবা ও স্ত্রীকে হারানো খোকন বসাক চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। পরিবারের সবাইকে হারানো খোকন বসাক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। তিনি আর বাড়ি ফিরতে চায় না বলেও জানান তার বন্ধু তুষার বসাক। তবে কোথায় থাকবেন সে বিষয়ে কিছু বলেনি খোকন।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পারুয়া মহাজন পাড়ায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে ডুকার রাস্তায় তার বড় বোন অঞ্জনা দে একটি মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছেন। এর একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে একটি কুকুর। কুকুরটি ঘরের বাইরে থেকে ভিতরে ডুকার চেষ্টা করছে। ঘরটির ভেতরে শুনশান নীরবতা। পুড়া গন্ধ এখনো বের হচ্ছে। ঘরের পুড়ে যাওয়া সামগ্রী এমনকি একমাত্র সিএনজি অটোরিকশাটিও আগের জায়গায় পড়ে রয়েছে।

একটু পরে ছুটে আসেন তার প্রতিবেশী ও বন্ধু তুষার বসাক। তার সাথে কথা হয়। তিনি প্রতিবেদককে জানান, খোকনের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তাকে নতুন ব্যান্ডেজ পড়ানো হয়েছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় গতকাল তাকে মাসনিক ডাক্তার দেখানো হয়। ডাক্তার বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে ১৫ দিন পর আবার দেখা করতে বলেন। এদিকে খোকন বারবার বাড়িতে আসবেন না বলে জানাচ্ছেন। তবে কোথায় থাকতে চান সে বিষয়ে কিছু বলতে চায়না সে। আগামী ৩১ তারিখ আমাদের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি এখানে আসবেন বলে জানিয়েছেন। এরপর কি করা যায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।

তার বড় বোন অঞ্জনা দে বলেন, পোড়া ঘরটি চৌকি দিয়ে আমি বসে আছি। সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে আমার ছোট বোন রেণী দে গতকাল শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। খোকন না আসা পর্যন্ত আমি এখানে থাকবো। কিন্তু আমার ভাই যদি এসে এই ঘর দেখে তাহলে সে স্টোক করবে। সে আসার আগে সবার সহযোগিতায় অন্তত তার জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দিতে চাই। হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার।

এর আগে খোকন বসাক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে দাবী করেন”। এরপর তার বক্তব্যের সূত্র ধরে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মন্দিরের ওইদিকে তার রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে৷ এরপর সে কোন মন্তব্য করেনি বলে জানান স্বজনরা।

প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মহাজনপাড়ায় বসতবাড়িতে অগ্নিকান্ডে একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। যেখানে ছিল খোকন বসাকের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললিতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকি বসাক (২৫), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে সায়ন্তী বসাক (৬)। এই ঘটনায় ৬ দিন পেরুলেও এখনো শোকের মাতম চলছে তাদের স্বজনদের মাঝে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মিরসরাইয়ে আমির হোসেন ও কামরুল হাসানের নেতৃত্বে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের বর্ণাঢ্য র্যালী

বাসায় ফিরতে চাইনা : বললেন বেঁচে যাওয়া খোকন বসাক

Update Time : 09:51:50 pm, Tuesday, 17 January 2023

চোখের সামনে দুই আদরের সন্তান, মা-বাবা ও স্ত্রীকে হারানো খোকন বসাক চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। পরিবারের সবাইকে হারানো খোকন বসাক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। তিনি আর বাড়ি ফিরতে চায় না বলেও জানান তার বন্ধু তুষার বসাক। তবে কোথায় থাকবেন সে বিষয়ে কিছু বলেনি খোকন।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পারুয়া মহাজন পাড়ায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে ডুকার রাস্তায় তার বড় বোন অঞ্জনা দে একটি মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছেন। এর একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে একটি কুকুর। কুকুরটি ঘরের বাইরে থেকে ভিতরে ডুকার চেষ্টা করছে। ঘরটির ভেতরে শুনশান নীরবতা। পুড়া গন্ধ এখনো বের হচ্ছে। ঘরের পুড়ে যাওয়া সামগ্রী এমনকি একমাত্র সিএনজি অটোরিকশাটিও আগের জায়গায় পড়ে রয়েছে।

একটু পরে ছুটে আসেন তার প্রতিবেশী ও বন্ধু তুষার বসাক। তার সাথে কথা হয়। তিনি প্রতিবেদককে জানান, খোকনের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তাকে নতুন ব্যান্ডেজ পড়ানো হয়েছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় গতকাল তাকে মাসনিক ডাক্তার দেখানো হয়। ডাক্তার বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে ১৫ দিন পর আবার দেখা করতে বলেন। এদিকে খোকন বারবার বাড়িতে আসবেন না বলে জানাচ্ছেন। তবে কোথায় থাকতে চান সে বিষয়ে কিছু বলতে চায়না সে। আগামী ৩১ তারিখ আমাদের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি এখানে আসবেন বলে জানিয়েছেন। এরপর কি করা যায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।

তার বড় বোন অঞ্জনা দে বলেন, পোড়া ঘরটি চৌকি দিয়ে আমি বসে আছি। সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে আমার ছোট বোন রেণী দে গতকাল শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। খোকন না আসা পর্যন্ত আমি এখানে থাকবো। কিন্তু আমার ভাই যদি এসে এই ঘর দেখে তাহলে সে স্টোক করবে। সে আসার আগে সবার সহযোগিতায় অন্তত তার জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দিতে চাই। হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার।

এর আগে খোকন বসাক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে দাবী করেন”। এরপর তার বক্তব্যের সূত্র ধরে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মন্দিরের ওইদিকে তার রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে৷ এরপর সে কোন মন্তব্য করেনি বলে জানান স্বজনরা।

প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মহাজনপাড়ায় বসতবাড়িতে অগ্নিকান্ডে একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। যেখানে ছিল খোকন বসাকের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললিতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকি বসাক (২৫), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে সায়ন্তী বসাক (৬)। এই ঘটনায় ৬ দিন পেরুলেও এখনো শোকের মাতম চলছে তাদের স্বজনদের মাঝে।